হযরত হামদুন কাচ্ছার (রঃ) আশ্চর্য ধর্মনিষ্ঠ একটি মানুষ – পর্ব ২
পূর্বজ আধ্যাত্মিক পুরুষগণের উপদেশমালা খুব বেশী ফসলপ্রসূ হতো কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাঁদের লক্ষ্য ছিল ইসলামের মর্যদা বৃদ্ধি, নিজেদের হক আদায় আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আর এখন নিজেদের গৌরব ও সম্মান বৃদ্ধি, পার্থিব স্বার্থসিদ্ধ ও মানুষের সন্তুষ্টির জন্য বক্তৃতা বা উপদেশ দেওয়া হয়।
হযরত হামদুন (রঃ)-এর জ্ঞানগর্ভ উপদেশবাণীঃ
(১) জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের জণ্য প্রথমে পার্থিব দৃষ্টি ও আল্লাহর নির্দেশের প্রতি লক্ষ্য করতে হবে। পার্থিব দৃষ্টি অপেক্ষা আল্লাহর নীতি-নির্দেশ সহস্রগুন বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
(২) নিজের অন্তঃপ্রকৃতির সন্ধানী যিনি, তাঁর পক্ষে পরিদৃশ্যমান অবস্থান সন্ধান করা কি সম্ভব?
(৩) অতি গোপনীয় বলে যা মনে হবে তা কারোর কাছে প্রকাশ করা উচিত নয়।
(৪) নফসকেও যে প্রিয় মনে করে, সে নফসের দ্বারা ফেরাউনী কাজ করে। অর্থাৎ অন্যায় অপকর্ম করে তাঁর অশুভ পরিণাম ভোগ করে।
(৫) কোন মদ্যপায়ী মত্ত মানুষকেও ঘৃণা ভর্ৎসনা করতে নেই। কেননা, তাতে তোমার বা তাঁর কোন স্বার্থ নেই।
(৬) দানশীলতা ও সেবা সৎ স্বাভাবের লক্ষণ। আর কৃপণতা অসৎ স্বভাবের নিদর্শন।
(৭) নিজের দারিদ্য নিয়ে যে অহঙ্কার করে, ধনীর অহঙ্কারে চেয়ে তা কম মারাত্মক নয়।
(৮) দরিদ্র ব্যক্তি যদি বিনয়ী ও নম্র হয়, তবেই আল্লাহর কাছে তাঁর মর্যাদা, তা না হলে নয়।
(৯) পার্থিব লোভ- লালসা যাকে পরকালে থেকে দূরে রাখে, সে নিঃসন্দেহে হেয় ও ঘৃণ্য।
(১০) পার্থিব জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করলেই সকলের সম্মানের পাত্র হওয়া যায়।
(১১) বিপদের সময় যার ধৈর্য হারিয়ে ফেলে তারাই আল্লাহর প্রতি দোষারোপ করে থাকে।
(১২) শয়তান ও তাঁর অনুগামীরা তিনটি বিষয়ে খুব বেশী খুশী হয়। যেমন, (ক) কোন মুসলিমকে হত্যা করা, (খ) কাফের অবস্থায় মৃত্যবরণ করা ও (গ) সাধনার বিষয়ে কারো মনে খুব বেশী ভয়ের সৃষ্টি হওয়া।
(১৩) খুব বেশী চতুরতা মনের মধ্যে অহমিকা সৃষ্টি করে। আর বেশীভাগ চতুর লোকই ধর্মভ্রষ্ট হয়।
(১৪) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রঃ) কে উপদেশ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, তুমি যদি পার্থিব জীবনে সফল হতে চাও তাহলে কখনও কারোর প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করো না।
(১৫) দাস কাকে বলা যায়?
তাঁর উত্তরঃ যে আল্লাহ পাকের এবাদত করে। আর মানুষ তাঁর উপাসনা করুক এরুপ ইচ্ছা পোষণ না করে?
(১৬) তাওয়াক্কুল বিষয়ে তিনি বলেন, যদি কেউ খুব বেশী ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে, যা হয়তো আদায় করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়, তবুও আল্লাহর ওপর সে ঋণ আদায়ের পূর্ণ ভরসা ও বিশ্বাস রাখাই হল প্রকৃত তাওয়াক্কলু।
(১৭) জীবনের অন্তিম মুহূর্তে তিনি তাঁর পুত্রগণের সম্পর্কে বলেন , তাঁদের সম্পর্কে আমীরী অপেক্ষা দরবেশকে আমি বেশী ভয় করি।
মৃত্যু পুর্ব মুহূর্তে শিষ্য হযরত আবদুল্লাহ মুবারক (রঃ)- এর প্রতি তাঁর শেষ বাণী-মৃত্যুর পর আমাকে স্ত্রীলোকদের মধ্যে দাফন করো না। ২১৯ হিজরীতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত হামদুন কাচ্ছার (রঃ) আশ্চর্য ধর্মনিষ্ঠ একটি মানুষ – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন