হযরত হামদুন কাচ্ছার (রঃ) আশ্চর্য ধর্মনিষ্ঠ একটি মানুষ- পর্ব ১

মুমূর্ষ বন্ধুর শয্যাপার্শ্বে বসে সেবা-শুশ্রুষা করেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বন্ধুটির মৃত্যু হল। আর তিনি ঘরের প্রদীপটি নিভিয়ে দিলেন। কারণ? কারণ, যেহেতু বন্ধু এখন মৃত। অতএব, তাঁর যাবতীয় বিষয়-সম্পতির মালিক তাঁর অনাথ-এতিম সন্তানগণ। অতএব, তাঁদের অনুমতি ছাড়া তাঁদের তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা জায়েজ নয়।

এই অসাধারণ পরহেজগার মানুষটি হলেন হযরত হামদুন কাচ্ছার (রঃ)। ফেকাহ ও হাদীস শাস্ত্রের এক সুবিখ্যাত পণি। আবার তরীকতের সিদ্ধপুরুষ হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ) ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রঃ) সাধক-দ্বয় ছিলেন তাঁর সুযোগ্য শিষ্য। তাঁর শিষ্যমণ্ডলী কাচ্ছারী নামে পরিচিত। কাচ্ছারী আরবী শব্দ- যার অর্থ হল রজক। রজক যেমন কাপড় পরিষ্কার করে, তেমনি তাঁর শিষ্যরাও কুরআনহাদীসের আলোকে নিজেদের অন্তরলোক পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করতেন। একশ্রেণীর লোক তাঁকে মালামতী বা অসদাচারী নামে অভিহিত করে। অতএব, তাঁর অনুগামীদের মালামতী বলা হয়, বস্তুত নিশাপুরে মালামতী নামে একটি নবীন তরীকার সৃষ্টি হয়। চারিত্রিক বিশুদ্ধতাঁর জন্য কঠোর সাধনা ছিল এই তরীকার বৈশিষ্ট্য।

তখন নূহ নামে এক দৈহিক শক্তিসম্পন্ন লোক ছিলেন। আর বুদ্ধিবলেও তিনি ছিলেন খ্যাতির শীর্ষে। তাঁর সাহসিকতাও ছিল অসাধারণ। তো একবার নিশাপুরের নদী তীরে তাঁর সঙ্গে হযরত হামদুন (রঃ)– এর দেখা হলে তিনি তাঁকে বীরত্ব বিষয়ে প্রশ্ন করেন। নূহ জানতে চাইলেন, আপনি কার বীরত্বের কথা বলছেন? আপনার না আমার? তিনি বলেন, দু’জনেরই। তখন নুহ বলেন, আমার বীরত্ব হল, আমি দামী জোব্বা না পরে সুফীদের মোটা জোব্বা পরি। আর সুফীদের মতো চর্চা করে সুফী হিসেবে হণ্য হই। আর লোকলজ্জার ভয়ে এই পুরু পোশাক পরে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকি। আর আপনার জন্য বীরত্ব হল, আপনি যে মোটা জোব্বা পরে আছেন তা খুলে ফেলুন। এভাবে আপনি হাকীকতের গূঢ়তত্ত্ব রক্ষা করবেন। আর আমি শরীয়তের প্রকাশ্য বিধি-বিধানগুলি মেনে চলব। এরকম যদি হয়, তাহলে আপনার জোব্বা দেখে লোক প্রতারিত হবে না। আর আপনিও বিপন্ন হবেন না। হযরত হামদুন কাচ্ছার (রঃ)- এর খ্যাতি ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়ে। নিশাপুরের লোক তাঁকে ধরে বসল ধর্ম বিষয়ে বক্তৃতা দিতে হবে। কিন্তু তিনি রাজি হলেন না। বলেন, দুনিয়ার প্রতি তাঁর আকর্ষণ এখনও বর্তমান। কাজেই তাঁর বক্তৃতায় কাজ হবে না। ওয়াস বা বক্তৃতা তাকেই বলে, যার মধ্যে দয়াময় আল্লাহর সাহায্য যুক্ত হয়। বক্তৃতা দেওয়া উচিত যিনি মনে করেন যে, মুখ বুজে থাকলে ধর্মের ক্ষতি হয়, আর মুখ খুললে অর্থাৎ ওয়াজ-নসীহত করলে ধর্ম রক্ষা পায়।

বক্তৃতার জন্য যোগ্যতা অর্জনের নিদর্শন কী? তাঁকে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, এক কথা বারবার না বলা, একটা কথা বলে পরে কী বলা যায়, তাঁর চিন্তার প্রয়োজন না থাকা, এমন ভাষণ পোষণ করা যে, আল্লাহ তরফ থেকে কথা আসছে। আর বক্তা তা অনর্গল বলে যাচ্ছেন। মনে করতে হবে যেন স্বয়ং আল্লাহ তাঁর মুখ দিয়ে কথাগুলি বলাচ্ছেন। বক্তার কোন ভূমিকা বা কর্তৃত্ব নেই।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত হামদুন কাচ্ছার (রঃ) আশ্চর্য ধর্মনিষ্ঠ একটি মানুষ- পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।