হযরত সুলাইমান (আঃ) ও সাবা রাণীর ঘটনা – শেষ পর্ব
পত্র পাঠান্তে বিলকিস বলল- হে সম্মানিত সভাসদবৃন্দ! আপনারা জানেন যে, গুরত্বপূর্ণ কোন বিষয়ে আমি আপনাদের পরামর্শ ছাড়া কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করি না। সুতরাং আপনারা আমাকে পরামর্শ দিন যে এখন আমার কি করা উচিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছ-
قَالَتْ يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ أَفْتُونِي فِي أَمْرِي مَا كُنتُ قَاطِعَةً أَمْرًا حَتَّىٰ تَشْهَدُونِ
বিলকিস বলল- হে সভাবসদবৃন্দ! আপনারা এ ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দিন। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা উপস্থিত না হন তো আমি কোন ব্যাপারে অটল মীমাংসা করি না। (সূরা নামলঃ আয়াত- ৩২)
হযরত কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত বিলকিসের পরিষদের সংখ্যা ছিল তিনশত তের। প্রত্যেকে দশ হাজার লোকের প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হত। সভাসদরা সর্বদাই বিলকিসের অনুগত ছিল। রাজ্য পরিচালনায় তারা সততার সাথে বিলকিসকে সহযোগিতা করত। তাই তারা সকলে বলে উঠল আপনার সম্মান রাক্ষার্থে আমরা সবকিছুই করতে রাজী আছি। তারা বলল যে- কোরআনের ভাষায়-
قَالُوا نَحْنُ أُولُو قُوَّةٍ وَأُولُو بَأْسٍ شَدِيدٍ وَالْأَمْرُ إِلَيْكِ فَانظُرِي مَاذَا تَأْمُرِينَ
অর্থঃ আমরা খুব শক্তিশালী এবং যুদ্ধে খুব পারদর্শী। এর পরও আপনার অধিকার রয়েছে। আপনি এ ব্যাপারে আমাদেরকে কি হুকুম দিবেন তা আপনি ভেবে দেখুন। (সূরা নামলঃ আয়াত- ৩৩)
সভাসদদের অভিমত শুনে বিলকিস নিজেই এ ব্যাপারে এক অভিমত পেশ করল। বিলকিস ছিল খুব বুদ্ধিমতি। সে ভাবল পত্র দ্বারা তো বুঝা যায় যে, তিনি নবী। তিনি সত্যিই নবী হয়ে থাকলে তিনি যে নির্দেশ দিচ্ছেন তা অবশ্যই পালন করতে হবে। কেননা, এ তাঁর নিজের নির্দেশ নয় বরং আল্লাহর পক্ষ হতে প্রদান করা হয়েছে। এ অবস্থায় তাঁর নির্দেশ অমান্য করার অর্থ ইহকাল- পরকাল বরবাদ করা। এ নির্দেশ পালন করা হতে মুখ ফিরান কিছুতেই সম্ভব হবে না। আর তিনি নবী না হয়ে সম্রাজ্যবাদী কোন রাজা হয়ে থাকলে এবং বিভিন্ন কলাকৌশলে বা শক্তির দাপটে আমাদের স্বাধীনতা হরণ করে পদানত করতে চাইলে তো তার সাথে মোকাবিলা করার উপযুক্ত পন্থা খুঁজে বের করতে হবে। কাজেই এখন আগে তাকে যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। আর তাকে
পরীক্ষা করার যে পন্থা গ্রহণ করল তা হল এ যে, তার কাছে প্রথমে মূল্যবান হাদিয়া পাঠান হবে। তিনি সম্রাজ্য বিস্তারকারী কোন সম্রাট হয়ে তার থাকলে হাদিয়াসমূহ গ্রহণ করবেন। আর সত্যিকার অর্থে নবী বা রাসূল হয়ে থাকলে ঈমান ও ইসলাম গ্রহণ করা ব্যতীত কোন প্রকার হাদিয়া দ্বারা সন্তুষ্ট হবেন না। হাদিয়া গ্রহণও করবেন না।
বিলকিস বিষয়টি এ দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করে তার সভাসদদের সামনে জোরালো ভাষায় এক বক্তৃতা দিল। বলল, দেখুন! এ ব্যাপারে খুব চিন্তা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা কর্তব্য। পত্রের ভাষায় বুঝা যাচ্ছে যে, লেখক খুব প্রতাপশালী সম্রাট। আমাদের উচিত আগে তার প্রকৃতি যাচাই করে দেখা। কোন চিন্তাভাবনা না করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দেয়া হলে ফল শুভ না হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি প্রতাপশালী কোন বাদশাহ হয়ে থাকলে আর আমাদিগকে ভয় না করলে অবশ্যই আমাদেরকে আক্রমণ করবেন। খোদা নাখস্তা তিনি আমাদের দেশে ঢুকে পড়লে পরিণাম শুভ হবে না। কেননা, কোন বাদশাহ কোন এলাকায় ঢুকে পড়লে এ এলাকাকে ধ্বংস করে ফেলে এবং এলাকার সম্মানিত লোকদেরকে পর্যন্ত অপদস্ত করে ছাড়ে। সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই এ ব্যাপারে ভেবে দেখতে হবে। অধিকন্তু তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা না করে তার প্রকৃতি যাচাই করার উদ্দেশ্যে প্রথমে মূল্যবান হাদিয়া প্রেরণ করে দেখা যেতে পারে যে, তার পক্ষ হতে কি উত্তর আসে। সভাসদেরা তার এ প্রস্তাবকে উত্তম বলে মনে করল। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
قَالَتْ إِنَّ الْمُلُوكَ إِذَا دَخَلُوا قَرْيَةً أَفْسَدُوهَا وَجَعَلُوا أَعِزَّةَ أَهْلِهَا أَذِلَّةً ۖ وَكَذَٰلِكَ يَفْعَلُونَ
وَإِنِّي مُرْسِلَةٌ إِلَيْهِم بِهَدِيَّةٍ فَنَاظِرَةٌ بِمَ يَرْجِعُ الْمُرْسَلُونَ
অর্থঃ বিলকিস বলল বাদশাহদের নীতি হল যে, তারা কোন জনপদের প্রতি বিরোধী মনোভাব নিয়ে প্রবেশ করলে তাকে ছারখার করে ছাড়ে আর এর সম্ভ্রান্ত লোকদেরকে অপমানিত করে ছাড়ে। তারাও এরূপ করবে। আমি তাদের কাছে কিছু হাদিয়া পাঠাচ্ছি। অতঃপর দেখব যে প্রেরিত ব্যক্তিরা কি উত্তর নিয়ে আসে। (সূরাঃ নামল- আয়াতঃ ৩৪-৩৫)