হযরত সুলাইমান (আঃ) ও সাবা রাণীর ঘটনা – ৩য় পর্ব
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর এক বর্ণনায় আছে যে, রানী বিলকিসের সিংহাসনটি ছিল আশি হাত লম্বা, চল্লিশ হাত প্রশস্ত এবং ত্রিশহাত উচ্চ। এটা লাল ইয়াকুত, সবুজ যুবরজদ পাথর এবং মতি দিয়ে তৈরি। সিংহাসনের পায়াগুলো মতি আর হীরা মণিমাণিক্য দিয়ে তৈরি ছিল। রেশমের পর্দার মধ্যে এ সিংহাসনটি একের পর এক সাতটি তালাবদ্ধ বড় বড় প্রাসাদের ভিতর সংরক্ষিত ছিল। ছয়শ নারী তার পরিচর্যায় নিয়োজিত থাকত।
হযরত সুলাইমান (আঃ) হুদহুদের কাছে সাবা রাজ্যের ঘটনা শুনতে বুঝতে পারলেন যে, হুদহুদ তার উপস্থিত না থাকার কারণ বর্ণনা করে নিজকে সাজা হতে বাঁচাবার চেষ্টা করছে। অনন্তর তিনি এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি বিবেচনা করলেন যদি তার সংবাদ সত্য হয়ে থাকে তবে তো সে ভাল কাজই করেছে। কাফের এক সম্প্রদায়ের সংবাদ তার কাছে এনে দিয়েছি। যদি এ কওমের সংবাদ তাঁর কাছে দাওয়াত পৌঁছানোর দায়িত্ব পর্যন্ত পালিত হত না। কেননা, তিনি তো এ সম্পর্কে বেখবরই থেকে যেতেন। তবে হুদহুদের খবর সত্য হলে তো কাজটি ভাল হয়েছে। আত মিথ্যা বলে থাকলে তাঁর বিচার হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তাই তিনি একে ধমকের স্বরে বলেন, আমি শীঘ্রই তোমার কথার সত্যতা পরীক্ষা করে দেখছি। এ বলে তিনি একটি পত্র লিখলেন। পত্রে বিলকিস ও তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। পত্রটি হুদহুদকে প্রদান করে বলেন এ পত্রটি নিয়ে সাবা সম্প্রদায়ের শাসকের কাছে চলে যাও। পত্রটি তাঁর কাছে পৌঁছে দিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করবে যে, তারা এ সম্পর্কে কি সিদ্ধান্ত নেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
قَالَ سَنَنظُرُ أَصَدَقْتَ أَمْ كُنتَ مِنَ الْكَاذِبِينَ
اذْهَب بِّكِتَابِي هَـٰذَا فَأَلْقِهْ إِلَيْهِمْ ثُمَّ تَوَلَّ عَنْهُمْ فَانظُرْ مَاذَا يَرْجِعُونَ
সুলাইমান (আঃ) বলেন, আমি এখনই পরীক্ষা করে দেখব যে তুমি কি সত্য বলছ না কি মিথ্যা বলছ। তুমি আমার এ পত্রটি নিয়ে গমন কর। আর এটা তাদের কাছে পৌঁছে দাও। অতঃপর সামান্য দূরে সরে থেকে দেখ যে তারা পরস্পর নিজেদের মধ্যে কি কথোপকথন করে। (সূরা নামলঃ আয়াত-২৭-২৮)
হুদহুদ পাখি হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর মোহরকৃত পত্র ডানার ভিতর নিয়ে সাবার রাজ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করল। বিলকিস যে কক্ষে অবস্থান করছিল সে কক্ষের গোবাক্ষ পথে কক্ষে প্রবেশ করল। তখন রাণী বিলকিস নিদ্রামগ্ন ছিলেন। হুদহুদ পত্রখানা বিলকিসের বক্ষের উপর রেখে জানালার উপরের অংশে বসে রইল। রাণী বিলকিসের ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখতে পেল যে, একটি মোহরকৃত পত্র তাঁর বক্ষের উপর পড়ে রয়েছে। আর অনতি দূরে একটি পাখি বসে রয়েছে। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ। কিন্তু কোথা হতে পত্র আসল? কক্ষে তো কারও প্রবেশ করা সম্ভব নয়। এসব চিন্তা করে বিলকিসের হৃদয়ে ভয়ের সৃষ্টি হল। সবকিছুই কেমন যেন তার বিবেক বুদ্ধির আওতায় বাইরে। অগত্য পত্রটি তুলে নিল। এর মোহর খুলে পত্রটি পাঠ করতে লাগল। পত্র পাঠান্তে বুঝতে পারল যে, এ কোন সাধারণ মানুষের পত্র নয়। হয়ত জানালার উপর বসা এ পাখি পত্র নিয়ে এসেছে। পাখির ভিতর যে আদব ও শিষ্টাচারিতা দেখা যাচ্ছে তা হতে বুঝা যায় যে, সে কোন বড় সম্রাটের তরফ হতে প্রেরিত হয়েছে। পত্র পড়ে বিলকিসের অন্তর নরম হয়ে আসল। পত্র প্রেরকের প্রতি মন থেকেই শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হচ্ছিল। বিলকিসের ধারণা হল যে, এ পত্র যেহেতু অসাধারণ ব্যক্তি হতে এসেছে তাই এর প্রতি বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। সুতরাং সে তার দরবারের পরিষদের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন মনে করল। সভাসদদের সকলকেই দরবার কক্ষে হাজির হওয়ার নির্দেশ জারি করা হল। বিলকিস তাদের সামনে পত্রের কথা উল্লেখ করে তাদের সামনে পত্র পাঠ করল-
إِنَّهُ مِن سُلَيْمَانَ وَإِنَّهُ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
أَلَّا تَعْلُوا عَلَيَّ وَأْتُونِي مُسْلِمِينَ
এটা সুলাইমানের তরফ থেকে লিখিত। এটা পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করা হয়েছে। তোমরা আমার মোকাবিলায় অহংকার করবে না। আল্লাহ পাকের তাবেদার হয়ে আমার কাছে আস। (সূরা-নামলঃ আয়াত-৩১)