হযরত সুলাইমান (আঃ) ও সাবা রাণীর ঘটনা – ১ম পর্ব
হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর সেনাবাহিনীতে তিন শ্রেণী সৈন্য ছিল। যথা মানুষ, জ্বীন ও পাখিসমূহ। হযরত সুলাইমান (আঃ) যখন স্বীয় তখতে আরোহণ করে সফরে বের হতেন তখন পাখিসমূহ উপরে থেকে আকাশের মেঘের ন্যায় ছায়া দিত। একদা তিনি স্বীয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অংশের দেখাশুনা ও খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন যে হুদহুদ পাখি সাথে নেই। অনেকে বলেন থাকেন, হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর অভ্যাস ছিল যে, তিনি সর্বদা স্বীয় অধীনস্থদের খোঁজ খবর রাখতেন। বিশেষ করে কর্মশক্তিসম্পন্ন দুর্বলদের ব্যাপারে বেশী সতর্ক থাকতেন। যেহেতু হুদহুদ পাখি আকারে ছোট ও সংখ্যায় অনেক কম। তাই তিনি বিশেষ করে এদের খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, হুদহুদ পাখির সরদার হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর ইঞ্জিনিয়ার ছিল। তিনি কোন প্রান্তরে গেলে যদি সেখানে পানির প্রয়োজন হত অথচ পানির কোন ব্যবস্থা থাকত না তখন মাটি খুড়ে খুড়ে পানি বের করার প্রয়োজন দেখা দিত। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যেত পানি অনেক নীচে থাকে অনেক ক্ষেত্রে আবার অপেক্ষাকৃত উপরে থাকে। এ সব কাজে হুদহুদ পাখিকে ব্যবহার করা হত।
কোন স্থানে পানি কত নীচে আছে তা বলে দেয়ার জন্য। আল্লাহ পাক হুদহুদ পাখীকে এ বিশেষ ক্ষমতা দান করেছিলেন। সে তার ঠোঁট মাটিতে রেখেই বলতে পারত যে, পানি কত নীচে রয়েছে। তখন যেখানে পানি আছে সে স্থান খুঁড়ে পানি বের করবার জন্য জ্বিনদের নির্দেশ দেয়া হত। জ্বিনেরা এ স্থান খুঁড়ে পানি বের করে আনত।
একদিন হযরত সুলাইমান (আঃ) কোন এক ময়দানে গিয়েছিলেন। সেখানে পানির খোঁজ নেয়ার জন্য হুদহুদকে খোঁজ করেও পেলেন না। তিনি এতে মনক্ষুণ্ণ হলেন। দরকারের সময় হুদহুদকে পাওয়া গেল না। কিন্তু হঠাৎ করে তাঁর মনে খেয়াল হল যে, সম্ভবত তাঁর নিজের কোন ত্রুটির জন্য হুদহুদ পাখি এখানে অনুপস্থিত রয়েছে। হুদহুদ বা অন্যান্য সকল পাখি তাঁর অধীনস্থ হওয়া আল্লাহর বড় নিয়ামত। তাঁর সন্দেহ হল যে হয়তবা তাঁর দ্বারা এ নিয়ামতের কদর হয়নি। আর এজন্যই হুদহুদ উপস্থিত হয়নি। কোরআনের ভাষায়-
مَا لِيَ لَا أَرَى الْهُدْهُدَ أَمْ كَانَ مِنَ الْغَائِبِينَ
অর্থঃ আমার কি হল যে আমি হুদহুদকে দেখতে পাচ্ছি না তবে কি সে কোথাও অদৃশ্য হয়ে গেল? (সূরা নামল)
তিনি নিজের সম্পর্কে ভেবে দেখলেন যে, তাঁর পক্ষ থেকে কোন ত্রুটি হয়নি। তাই তিনি শাসকের ভাষায় বলে উঠলেন অনুমতি না নিয়ে অনুপস্থিত থাকা অন্যায়। অন্যায়ের শাস্তি অবশ্যই তাঁর হওয়া উচিত। সুতরাং সে যদি উপস্থিত না থাকার গ্রহণযোগ্য, কোন কারণ পেশ করতে ব্যর্থ হয়, তবে তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে অথবা তাকে যবেহ করে দেয়া হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
لَأُعَذِّبَنَّهُ عَذَابًا شَدِيدًا أَوْ لَأَذْبَحَنَّهُ أَوْ لَيَأْتِيَنِّي بِسُلْطَانٍ مُّبِينٍ
অর্থঃ আমি অবশ্যই তাকে কঠিন সাজা দেব অথবা অবশ্যই তাকে যবেহ করব। না হয় সে আমার কাছে কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করবে। (সূরা নামল)