হযরত শেখ ফরীদউদ্দীন আক্তার (রঃ) – পর্ব ১

পরিচিতঃ হযরত শেখ ফরীদউদ্দীন আক্তার (রঃ)এর আসল নাম মুহাম্মদ ইবনে আবুবকর ইব্রাহিম। ফরীদউদ্দীন তাঁর ডাক নাম। ‘আত্তার’ ছদ্মনামে তিনি কাব্য সাধনা করতেন। এক সময় আতরের ব্যবসা করতেন বলে মুসলিম দুনিয়ার তিনি ফরীদউদ্দীন আক্তারনামেই পরিচিত।

তাঁর জন্ম ৫১৩ হিজরি সনে। অবশ্য জন্ম-তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। মধ্য এশিয়ার সুপ্রসিদ্ধ নিশাপুরে তাঁর জন্ম। তাঁর মৃত্যু সম্বন্ধে ঐতিহাসিকগণ মোটামুটি একমত। চেঙ্গিস খাঁর বাগদাদ আক্রমণের সময় এক তাতারীর হাতে তিনি নিহত হন।

বাল্য ও কৈশোর জীবনে লেখাপড়া সম্পন্ন করে তিনি ওষুধের ব্যবসায় নিয়োজিত হন। এই সময়ের একটি তাঁর জীবনধারার আমূল পরিবর্তিত হয়ে যায়। একদিন তিনি তাঁর দোকানে কর্মব্যস্ত। এক ভিক্ষুক এসে দোকানে ভিক্ষা প্রার্থনা করেন। ব্যস্ততায় দরুন তিনি কোন রূপ সাড়া না দেওয়ার তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ভিক্ষুক আরও জোরে দ্বিতীয়বার ভিক্ষার দাবী জানায়। কিন্তু তাতেও কোনও ফল হল না।

তখন হতাশ হয়ে ভিক্ষুক বললেন, সামান্য পয়সা খরচ করতে তুমি এত কুণ্ঠিত। না জানি প্রিয় প্রাণটা দেওয়ার ব্যপারে তুমি কিরূপ কর। ভিক্ষুকের কথাটি এবার কানে যায় ফরীদউদ্দীনের। বিরক্ত হয়ে বললেন, তুমি যেমন ভাবে প্রাণ দিবে, দেখা যাক, বলে সে তৎক্ষণাৎ তার কাঁধের ঝুলি মাথায় নিচে দিয়ে মাটির ওপর শুয়ে পড়ে বার বার কলেমা তাইয়্যেবা, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ আবৃত্তি করতে থাকে। আর ঐ অবস্থাতেই সে মারা যায়।

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলেন ফরীদউদ্দীন আক্তার (রঃ)। ভিক্ষুকের দাফন কার্য্য শেষ করে তিনি তার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় জিনিসপত্র মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে সংসার বিবাগী হয়ে যান। প্রচুর ভাবান্তর সৃষ্টি হয় তাঁর মনে। মানসিক প্রশান্তির সন্ধানে তিনি হাজির হন হযরত রুকনুদ্দীন আফাক (রঃ)-এর দরবারে। তাঁর কাছেই তিনি মারেফাত জ্ঞানের পাঠ গ্রহণ করেন। পরে হজ্জ যাত্রার মক্কা শরীফে গিয়ে সেখানে তরীকতের শিক্ষায় আত্ননিয়োগ করেন। আর সেখানে বেশ কিছুদিন অবস্থান করে উচ্চ তত্ত্ব-জ্ঞানের অধিকারী হন।

তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে যা জানা যায়, তা এ রকম-তাতারী দস্যুরা নিশাপুর আক্রমণ করে সেখানে অবাধ লুণ্ঠন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। হযরত ফরীদউদ্দীনও তাদের আক্রমণের শিকার হন। এক তাতারী যখন তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত, তখন কোন একজন বললেন, এ দরবেশকে হত্যা না করে, তার বদলে আমার কাছ থেকে দশ হাজার মোহর নাও। সঙ্গে সঙ্গে ফরীদউদ্দিন বলে ওঠেন, মাত্র দশ হাজার মোহরের বিনিময়ে আমাকে বিক্রি করো না। আমার দাম যে এর চেয়েও অনেক বেশী। আততায়ী প্রলুবদ্ধ হয়ে উঠল। আরও বেশী অর্থ পাওয়ার লোভে সে তাঁকে নিয়ে পথে চলল।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া  

হযরত শেখ ফরীদউদ্দীন আক্তার (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।