হযরত শেখ খায়ের নাসসাজ (রঃ ) – পর্ব ১

হযরত শেখ খায়ের নাসসাজ (রঃ) যেন অধ্যাত্ম সম্পদের এক গুরুত্বপূর্ণ খনি। তাঁর পবিত্র দরবার থেকে বহু বিশিষ্ট সাধক মারেফাত তত্ত্বে দীক্ষা গ্রহন করে সাফল্য অর্জন করেন। তিনি ছিলেন দরবেশগণের দীক্ষাগুরু, মুর্শিদ। তাঁর বক্তৃতা ছিল অন্তরস্পর্শী আর চারিত্রিক গুণও ছিল অতুলনীয়। তিনি ছিলেন সহিষ্ণুতার প্রতিমূর্তি। তাঁর অলৌকিক ক্ষমতাও ছিল অবিশ্ব্যাস্য রকমের। তিনি মুখে যা বলতেন, আল্লাহ তা পূরণ করে দিতেন। হযরত শিবলী (রঃ) ও হযরত ইব্রাহীম (রঃ) – এর মতো দু’জন বিখ্যাত সাধক তাঁর দরবারে তওবা করে দীক্ষা গ্রহন করেন। তাঁর মুর্শিদ ছিলেন প্রখ্যাত সাধক হযরত সাররী সাকতী (রঃ)। বাগদাদ নগরী ছিল তাঁর বসবাসের ও কর্মভূমি। হযরত আবু হামযা (রঃ) তাঁর প্রতি অতি উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন।

তাঁর ‘খায়ের নাসসাজ’ নামের মূলে রয়েছে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। একবার হজ্জ যাত্রার পথে তিনি এক গৃহে অথিতি হন। তাঁর গায়ের রং ছিল কালো। পরনের পোশাকও ছিল ময়লা ও ছেঁড়া। আর শরীরটাও ছিল অগোছালো, এলোমেলো। একজন কেউ তাঁকে দেখে বললেন, তুমি ভৃত্য নাকি? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। লোকটি বললেন, মনে হয় তুমি তোমার মনিবের কাছ থেকে পালিয়ে এসেছে। এবারেও তিনি বললেন হ্যাঁ, তাই বটে।

লোকটি তখন তাঁকে মনিবের কাছে পাঠিয়ে দেবেন বলে তাঁকে তার কাছে রাখতে চাইলেন। প্রস্তাব শুনে হযরত খায়ের (রঃ) বললেন, তিনি নাকি বহুদিন থেকে এমন একটা লোকই খুজছিলেন যে কিনা আমাকে ভৃত্য বলে। তিনি তাঁর একটি নতুন নামও দিলেন ‘খায়ের’। নাসসাজ (রঃ) মনে করলেন, বিশ্বাসীর প্রতিশ্রুতি কখনও মিথ্যা হয় না। তাঁর নতুন মনিব নিশ্চয়ই তাঁকে তাঁর প্রভুর কাছে পৌঁছে দেবেন। অতএব, তিনি তাঁর কাছেই থেকে গেলেন। আর লোকটি তাঁকে কাপড় বোনার কাজ শিখিয়ে দিলেন।

যারা কাপড় বোনে, আরবী ভাষায় তাদের বলে ‘নাসসাজ’। মনিব তাঁর দেওয়া ‘খায়ের’ নামের সঙ্গে ‘নাসসাজ’ জুড়ে দিয়ে তাঁকে ‘খায়ের নাসসাজ’ নামে ডাকতে লাগলেন। আর এই নামটিই ইতিহাসের পাতায় চিরন্তর হয়ে গেল।

কিছুদিন কেটে যাবার পর তাঁর মনিব তাঁর ধর্মনিষ্ঠার পরিচয় পেলেন। একদিন বললেন, আসলে তুমিই আমার মনিব। আর আমি তোমার ভৃত্য। যাই হোক, এ অবস্থা বেশী দিন চলতে পারে না। তুমি আজ থেকে স্বাধীন। যেখানে খুশী চলে যেতে পার।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত শেখ খায়ের নাসসাজ (রঃ ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।