হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১৫

হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

গোবিন্দের বিরুদ্ধে অভিযানঃ

গৌর গোবিন্দ বোরহান উদ্দীনের পুত্র হত্যা করার শেখ বোরহান উদ্দীন পুত্র শোকে শোকাতুর যে পথ চলতেছেন আর গোবিন্দের প্রতিশোধ নেওয়ার পথ খুঁজতেছেন। এক সময় বুদ্ধি আটলেন গোবিন্দের প্রতিশোধ নিতে হলে কোন মুসলমান বাদশার সাহায্য নিতে হবে। নচেৎ একার পক্ষে কিছুতেই তা সম্ভব হবে না।

তখন বাংলার রাজধানী ছিল সুবর্ণ গ্রামে। তখন বাংলার সুলতান ছিলে সামউদ্দীন আহমেদ। বোরহান উদ্দীন সুলতানের দরবারে হাজির হয়ে তার কাছে বোরহান উদ্দীনের পুত্র শোক ও সকল মনের দুঃখ খুলে বললেন। শামস উদ্দীন বোরহান উদ্দীনের দুঃখের কথা শুনে ক্রোধে ফেটে পড়লেন। গর্জে উঠে বললেন, গোবিন্দের প্রতিশোধ নিতেই হবে।

নরাধম পাপিষ্ঠ গৌর গোবিন্দকে সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাঁর সুযোগ্য পুত্র সিকান্দার শাহকে সেনাপতি করে একদল সৈন্য বাহিনী পাঠালেন। শ্রীহট্টের পাহাড়িয়া গিরিপথ ধরে গৌর রাজধানীর দিকে চলতে লাগলেন। এদিকে দুরাত্মা গৌর সিকান্দার শাহের কবল থেকে মুক্তির জন্য একদল তীরন্দাজ বাহিনীকে গিরিপথের পাশে পাঠালেন। যখন মুসলিম সেনারা পথ চলতে ছিলেন হঠাৎ দুর্বত্তরা তাদের উপর আকস্মাৎ হামলা চালিয়ে সেনাদলকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিল। এরপর সেকান্দার ব্যর্থ হয়ে রাজধানীতে ফিরে এলেন। কিন্তু গৌর গোবিন্দের প্রতিশোধ নেবার মনোবল হারায়নি। উহার জন্য তিনি পুনরায় বিরাট এক বাহিনী তৈরি করলেন। এর মধ্যে তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন।

হলেও তিনি নেবার ইচ্ছা বাদ দিলেন না। এদিকে গোউর গোবিন্দ গোয়েন্দার দ্বারা জানতে পেল সে তার বিরুদ্ধে আবার অভিযান শুরু হবে। এবারে বাঁচার কোন পথ খুঁজে পেল না। অবশেষে রিবি এক কৌশল এঁটে সেকান্দার শাহের কাছে দূত পাঠালেন যে আমি মুসলমানদের সাথে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে চাই। এই প্রস্তাবে সিকান্দার শাহ সম্মত হলেন। তার সন্ধির শর্ত ছিল যে আমি মুসলমানদের উপর কোন অত্যাচার-অবিচার করব না। তাদের ধর্ম কর্মের উপর হস্তক্ষেপ করব না। বরং তাদের ধর্ম পালনের জন্য রাজ দরবারে একখানা মসজিদ নির্মাণ করে দিব। যাতে করে মুসলমানরা ঠিকভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারে।

ধর্ম পরায়ণ সিকান্দার শাহ তার প্রস্তাবে রাজী হয়ে তার অভিযান ক্ষান্ত রাখলেন। এতে বোরহান উদ্দীনের মনে শান্তি ছিল না। তার অন্তরে প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ কর জ্বলতে লাগল। তিনি সিকান্দার শাহের দ্বারা তেমন ফল না পেয়ে অন্য উপায় খুঁজতে লাগলেন। কিভাবে গোবিন্দের প্রতিশোধ নেয়া যায়। এরপর দ্বিতীয় পথ ধরে চলতে লাগলেন। তিনি ধর্ম পরায়ণ সুলতান ফিরোজ শাহ-এর দরবারে গিয়ে হাজির হলেন। তিনি তার মনের সকল দুঃখ ব্যাথা সুলতানের কাছে খুলে বললেন। তিনি বোরহান উদ্দীনের মুখে এমন কথা শুনে অত্যন্ত মর্মাহত হলেন। যে মুসলমানদের উপর এমন অত্যাচার। তিনি ব্যথিত হবেনই বা কেন? পাঠান আমলে তার মত ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ অন্য কেউ ছিলেন না। এবারে তিনিও গৌর গোবিন্দের প্রতিশোধ নিতে উদ্বুদ্ধ হলেন। অপর দিকে পরগনার শাসনকর্তা নারায়নও একজন মুসলমান ফিরোজ শাহের নালিশ করলেন। এবারে দুই দেশের অত্যাচারী হিন্দু দু’শাসকের বিরুদ্ধে অভিযান করার জন্য বাহিনী গঠন করলেন। তিনি ইসলাম ধর্মের ইহেন অবমাননা শুনে ক্রোধে অধীর হয়ে উঠলেন। তিনি তাদের উভয়কে সমুচিত শিক্ষা দেবার জন্য তার ভাগীনে সিকান্দার গাজীকে গোবিন্দের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য নির্দেশ দিলেন। সিকান্দার গাজী মামার নির্দেশ পেয়ে সৈন্য বাহিনী নিয়ে শ্রীহট্টের দিক যাত্রা করলেন। বোরহান উদ্দীনও তাদের সঙ্গী হলেন।

বড়ই পরিতাপের বিষয় যে তিনি গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে পারলেন না। পথিমধ্যে তিনি বাঁধার সম্মুখীন হলেন। তখন ছিল বর্ষাকাল তাইতো সহসা ভীষণ ঝড় শুরু হল। সেই ঝড়ের ঠাণ্ডা অনেক সৈন্যেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ল। সিকান্দার গাজী তার অভিযানে সামনের দিকে আর অগ্রসর হতে পারলেন না। অনেক সৈন্য পথিমধ্যে রোগাক্রান্ত হয়ে মারাও গিয়েছেন। এ অবস্থা দেখে হতাশায় পড়ে তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। অনেকে যখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল, তখন মৃত্যুর ভয়ে অনেক সৈন্য তাবু থেকে পলায়ন করে চলে গেল। যারা বেঁচে রইল তারাও শক্তিহীন হয়ে পড়লেন।

এত বিপদের পরও তিনি নিরাশ হলেন না। তিনি পুনরায় দিল্লীর শাসন কর্তার নিকট দূত মারফতে তার বিপদের কথা জানালেন ও আরো কিছু সংখ্যক সৈন্য চাইলেন যাতে করে তার যাত্রাকে সফল করে তোলা যায়।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।