হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ৩
হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এই অদৃশ্যবাণী রাবেয়া (রঃ)-এর মনে অঢেল শান্তি এনে দেয়। এখন বড় স্বস্তি তাঁর মনে। এই ভাঙা হাত নিয়ে তিনি আর কোথায় যাবেন। মালিক নিষ্টুর হোক, তবুও তো মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই আছে ওখানে। সাত-পাঁচ ভেবে তিনি আবার মনিবের বাড়ীতেই ফিরলেন। এবার নিজের জন্য একটা নিয়ম করে নিলেন। দিনে কাজ। রাতে ইবাদত। রাতে ইবাদত আগে রাতের বেলায় কিছু সময় বিশ্রাম নিতেন। এখন থেকে পুরো রাত বরাদ্দ হয়ে গেল আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগীর জন্য।
এক গভীর রাত্রে ঘুম ভেঙে যায় মনিবের। তার কানে এল কিছু অস্পষ্ট কথার গুঞ্জন। চুপি চুপি বিছানা ছেড়ে সে উঠে এল। চারপাশে গভীর অন্ধকার। অথচ সে দেখল, রাবেয়া (রঃ)-এর ঘরে এক আশ্চর্য আলোর রোশনাই। দেখল, রাবেয়া (রঃ) তন্ময় চিত্তে অস্ফুট উচ্চারণে আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করছে, প্রভু আমার! আপনি জানেন, আমি সারাক্ষণ আপনার বন্দেগীতে আত্ননিয়োগ করতে চাই। কেননা, আপনার স্তব-স্তুই প্রশংসাই আমার চোখের জ্যোতি। আমার যদি সুযোগ ও শক্তি থাকত, তাহলে আপনার এবাদত ছাড়া এক পলও আমি অন্য কাজে নষ্ট করতাম না। কিন্তু কী করব প্রভূ, আমি পরাধীনা। ইচ্ছা থাকলেও আমি আপনার এবাদতে সব সময় উপস্থিত হতে পারি না। আপনার এবাদতে লাগতে আমার অনেক দেরী হয়ে যায়।
দাসীর এই আকুল প্রার্থনা মনিবের নিষ্ঠুর হৃদয় স্পর্শ করে। তার মনে হয়, এ সাধারণ কোন দাসী-বাঁদী নয়। আল্লাহর প্রকৃত সেবিকা সে। তাঁকে বন্দিনী অবস্থায় রেখে তার সেবা শ্রম গ্রহণ করা ঠিক নয়। বরং এই অশ্রুমতী অপাপবিদ্ধা বালিকার সেবা করা তার কর্তব্য। মনে মনে সে স্থির করে দাসীকে সে মুক্তি দেবে। ইচ্ছা হলে সে এখানে থাকতে পারে, অথবা অন্য কোথাও যেতে পারে। আল্লাহ তার হৃদয়ের পরিবর্তন ঘটালেন। পরদিন ভোরে রাবেয়া (রঃ)-কে এ তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিল।
আল্লাহর প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়লেন রাবেয়া (রঃ)। তিনি এখন এক স্বাধীনা রমণী। স্বাধীনভাবে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হলেন। সারাদিন সারারাত। অন্ততঃ হাজার রাকআত নফল নামায আদায় শুরু করলেন। মাঝে মাঝে যেতে লাগলেন মহাতাপস হযরত হাসান বসরী (রঃ)-এর আলোচনা সভায়। হযরত হাসান (রঃ)-ও তাঁর আলোকময়ী শিষ্যাকে খুবই স্নেহের চোখে দেখতে শুরু করলেন। তাপসী রাবেয়া (রঃ) ডুবে গেলেন জ্যোতির সমুদ্রে।
কেউ কেউ বলেন, হযরত রাবেয়া (রঃ) প্রথম জীবনে ভক্তি-গীতি গাইতেন। পরে সব ছেড়ে শুধু এবাদতে মগ্ন হন। এ উদ্দেশ্যে তিনি কিছুদিন নির্জন বনেও বাস করতেন। পরে এক নিরিবিলি স্থানে এক ইবাদতগাহ নির্মাণ করে সেখানেই ধ্যানরত থাকতেন। অবশ্য শেষ জীবনে তিনি চলে যান পবিত্র মক্কা শরীফে। সেখানেই তাঁর অধ্যাত্ন-জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া