হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ১০
হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ৯ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত রাবেয়া (রঃ)-এর পরনের জীর্ণ পোশাক দেখে এক ধার্মিক ব্যক্তি অনুতাপ করে বললেন, আপনার দুর্দশা দেখে দুঃখ হয়। সামান্য ইশারা পেলে সবাই আপনার অভাব মোচনে এগিয়ে আসবে।
তিনি বললেন, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কাজে কারও কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা লজ্জাকর। এ হল আল্লাহর রাজ্য। যার যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর প্রদত্ত। এ কথা জানার পর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর কাছে কি সাহায্য চাওয়া যায়? তিনি তো আমার অবস্থা দেখছেন। ইচ্ছা হলে তিনি নিজেই সাহায্য করবেন। আর একান্তই যদি আমার কিছু দরকার হয়, তাহলে আমি তাঁর কাছেই চাইব।
তাঁর এই সুললিত জবাব শুনে সেই ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির নিকট মন্তব্য করলেন; তাঁকে আমি যতটুকু উচ্চস্তরের সাধিকা বলে ভেবেছিলাম। তিনি তার চেয়েও উচ্চতর।
১২। তাঁর অসুস্থতার সময়ে স্বনামধন্য সাধক হযরত হাসান বসরী (রঃ) তাঁকে দেখতে গেলেন। গিয়ে দেখলেন, বসরার এক ধনী ব্যক্তি রূপার টাকা ভর্তি একটা থলে নিয়ে ম্লান মুখে দাঁড়িয়ে আছেন হযরত রাবেয়া (রঃ)-এর দরজায়। হযরত হাসান (রঃ) তার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, হযরত রাবেয়া (রঃ) অভাব-অনটনের খবর পেয়ে তাঁকে কিছু টাকা দিতে এসেছি। কিন্তু তিনি তো কারো কিছু গ্রহণ করেন না। তাই ভাবছি, আমাকে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হবে। তাঁকে যে আমার ইচ্ছার কথা বলব তারও সাহস হচ্ছে না। হযরত! আপনি কি আমার জন্য একটু সুপারিশ করবেন?
হযরত হাসান (রঃ) সত্যিই ভেতরে গিয়ে তাঁর কথা বললেন। তখন হযরত রাবেয়া (রঃ) বললেন, যে লোক আল্লাহর নিন্দা করে, তিনি তারও জীবিকা বন্ধ করেন না। আর যে লোক আল্লাহ প্রেমে বিভোর, জীবিকা ছাড়াই আল্লাহ তাঁকে জীবিত রাখেন। যেদিন থেকে আমি আমার প্রভুকে জেনেছি, সেদিন থেকেই মানুষের মুখাপেক্ষি থেকে আমার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। তাছাড়া মানুষের অর্থ হালাল না হারাম, তাও তো আমার জানা নেই। সুতরাং দয়া করে এ ব্যাপারে আপনি কিছু বলবেন না!
অসুস্থ তাপসীকে দেখার জন্য এসেছিলেন হযরত আবদুল ওয়াহেদ আমেরি ও হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ)। কিন্তু তাঁর অসাধারণ আল্লাহ প্রদত্ত কথা ভেবে তাঁরা চুপচাপ বসে রইলেন। একটি কথাও বলতে পারলেন না।
অবশেষে হযরত রাবেয়া (রঃ) নীরবতা ভেঙে হযরত সুফিয়ান (রঃ)-এর কোন বক্তব্য আছে কিনা জানতে চাইলেন।
সাহস পেয়ে সুফিয়ান (রঃ) সঙ্গে সঙ্গে বললেন, আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে তুলুন, এই প্রার্থনা জানাই।
হযরত রাবেয়া (রঃ) তাঁর ওপর চোখ রেখে বললেন, আপনি কি জানেন যে, কার ইচ্ছায় আমি রোগাক্রান্ত?
হ্যাঁ, আল্লাহর ইচ্ছায়।
তা যদি জানেনই, তাহলে তাঁর কাছেই আরোগ্যলাভের প্রার্থনা করছেন? এটা কি তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাচ্ছে না?
আপনার কি খেতে ইচ্ছা হয়?
সুফিয়ান, আপনি পন্ডিত লোক। আপনি যা বললেন, তা আপনার পক্ষে শোভা পায় না।
বারো বছর ধরে আমার খুর্মা খাওয়ার বড় ইচ্ছা ছিল। আর বসরায় খুর্মা খুব সস্তাও। তা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত আমি খুর্মা খাইনি। আমার যা ইচ্ছা, তাই যদি করি, আর সেটা যদি আমার প্রভুর ইচ্ছার বিপরীত হয়, তাহলে তা হবে অধর্মের মত।
আমায় ক্ষমা করুন। আমি আর অনধিকার চর্চা করতে চাই না। আপনি এখন আমাকে কিছু উপদেশ দিন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া