হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ)- পর্ব ৭
হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিছুক্ষণ পরে এক লোক এক ডেকচি সিরকা এনে হাজির। গরীব দিন-মজুর সে। বহুদিন ধরে তার ছেলেমেয়েরা সিরকার বায়না ধরে আসছে। কিন্তু গরীব বলে সে তার আয়োজন করতে পারেনি। এখন ঈদ উপলক্ষে কোন রকমে সে গত রাতে সিরকা তৈরী করেছে। তারপর রাতে স্বপ্ন দেখে, রাসূলে করীম (সাঃ) তাকে বলছেন, হাশরের মাঠে তুমি যদি আমার সাফায়াত চাও, তাহলে তাড়াতাড়ি সিরকার ডেকচি নিয়ে যুনযুন মিসরীর দরবারে চলে যাও।
আর তাঁকে বল, সে যেন খুশী মনে এই ডেকচি থেকে কিছু সিরকা খেয়ে নেয়।
একথা শুনে হযরত যুনযুন (রঃ) কেঁপে উঠলেন আর অনেকদিন পর তিনি কিছু সিরকাও গ্রহণ করলেন।
আগেই বলা হয়েছে, এই আধ্যাত্নিক পুরুষকে মিসরবাসীরা কাফের আখ্যা দেয়। তখন মিসর ছিল বাগদাতের অধীন। বাগদাদের খলীফা ছিলেন মুতাওয়াক্কিল বিল্লাহ। খলীফার কাছে মিসরবাসীরা হযরত যুনযুন (রঃ)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়। খলীফা তাঁকে গ্রেফতার করার আদেশ দেন। তাঁর হাতে পায়ে লোহার বেড়ী পরিয়ে তাঁকে বাগদাদে নিয়ে আসা হয়। পথে এক বুড়ী তাঁকে অভয় দিয়ে বলেন, ভয় নেই বাছা। খলীফাও আল্লাহর বান্দা। আর এক ভিস্তি পানি পান করিয়ে তাঁর তৃষ্ণা মেটালেন। বিনিময়ে হযরত যুনযুন (রঃ) তাকে একটি মুদ্রা বখশিশ দিয়ে গেলেন।
কিন্তু সে এই বলে তা গ্রহণ করলনা যে, বন্দীর কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করা কাপুরূষতা। খলীফার নির্দেশে হযরত যুনযুন (রঃ)-এর চল্লিশ দিন কারাবাস হয়। এ সময় হযরত বিশর হাফী (রঃ)- এর বোন প্রতিদিন তাঁকে একটি করে রুটি দিতেন। কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর দেখা গেল, সব রুটি জমা আছে। একটিও তিনি খাননি।
হযরত বিশর (রঃ)-এর বোন বড় দুঃখ পেলেন। তাঁর প্রেরিত রুটি সম্পূর্ণ হালাল, নির্দোষ। তবুও হযরত যুনযুন (রঃ) তা স্পর্শ করেননি। তার কারণ কী?
কারণটা এই, রুটি এসেছিল কারারক্ষীর অপবিত্র হাত দিয়ে। এই জন্য তিনি তা খননি।
কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পথে তিনি পা পিছলে পড়ে যান। আর কপালে ভীষণ চোট পান। পরে তাঁকে খলীফার দরবারে হাজির করা হয়। খলীফা তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। আর তিনি সেগুলোর সুস্পষ্ট উত্তরও দেন। ফলে, খলীফা ও তাঁর অমাত্যবর্গ অভিভূত হয়ে তাঁর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। সসম্মানে তাঁকে পাঠিয়ে দেন মিসরে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া