হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ)- পর্ব ৬

হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

রাজপুত্রের মুখখানি মলিন হয়ে গেল। একটা কথাও সে বলল না। নীরবে চলে গেল। পরদিন এসে সে হযরত যুনযুন (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, আল্লাহর দীদার লাভের উপায় কি? হযরত বললেন, দুটি উপায় আছে। একটি ছোট, অন্যটি বড়। সে যদি ছোট উপায় অবলম্বন করতে চায়, তাহলে তাকে পাপ কাজ ছেড়ে দিতে হবে। দুনিয়ার কথা ভূলে যেতে হবে। পরিহার করতে হবে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা। আর যদি সে বড় উপায়টি গ্রহণ করতে রাজি থাকে, তাহলে আল্লাহ ছাড়া তাকে সবকিছু ছাড়তে হবে। বুকটাকে খালি করতে হবে। দুটির মধ্যে অবশ্য বড়টিই উত্তম।

রাজকুমার উত্তম পথটিই বেছে নিল। তখনই খুলে ফেললো তার মহামূল্যবান রাজ পোশাক। পরে নিল মোটা একটা কম্বল। আর দরবেশগণের আসরে বসে আল্লাহর ধ্যান-এবাদতে বিভোর হয়ে গেল। পরবর্তীকালে এক ভাগ্যবান রাজার দুলাল সিদ্ধ পুরুষে পরিণত হয়।

হযরত যুনযুন (রঃ) বলেন, জড়-বস্তুও আল্লাহর ওলীদের কথা মেনে চলে। একদিন তিনি যখন তাঁর ভক্তদের একথা বলছিলেন, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন হযরত আবু জাফর আহরার (রঃ)। তাঁর বর্ণনা মতে, হযরত যুনযুন (রঃ) বললেন, আমি যদি এই আসনখানাকে বলি যে, ঘরের চারপাশে একবার ঘুরে এস, তাহলে এটা তাই করবে। সত্যিই, তাঁর কথা শেষ হতে না হতেই আসনখানা ঘরের চারদিকে ঘুরে যথাস্থানে এসে স্থির হয়ে যায়। আর এই অলৌকিক কান্ড দেখে এক তরূণ বিষ্ময়বিমূঢ় হয়ে কাঁদতে কাঁদতে প্রাণত্যাগ করে। কথিত আছে, তাকে ঐ আসনেই স্নান করিয়ে দাফন করা হয়।

একবার এক ঋণী ব্যক্তি ঋণ মুক্তির ব্যাপারে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করে। তিনি মাটি থেকে একখন্ড পাথর তুলে তার হাতে দিয়ে বললেন, এটি বাজারে বিক্রি করে দেনা শোধ কর। লোকটি দেখল, পাথরখণ্ডটি হঠাৎ জমররদ পাথরে পরিণত হয়েছে। আর বাজারে তা বিক্রি হয়ে গেল চারশ দেরহামে। ঋণ পরিশোধ করতে অতঃপর তার আর অসুবিধা হল না।

মিসরের এক তরূণ বড় দরবেশ বিরোধী। তাঁদের প্রতি তার প্রচুর অনীহা। হযরত যুনযুন (রঃ) তা জানতেন। তিনি একদিন তাকে একটি আংটি দিয়ে কোন এক রুটিওয়ালার কাছে বন্ধক রেখে একটি দীনার ধার করে আনতে বললেন। তার কাছে গেলে রুটিওয়ালা বললেন, এটা রেখে আমি মাত্র এক দেরহাম ধার দিতে পারি। তরূণ ফিরে এসে হযরত যুনযুন (রঃ) কে একথা জানান। তখন তিনি তাঁকে এক জহুরির কাছে যেতে বললেন। জহুরি সেটি এক হাজার দেরহামে দিয়ে কিনতে চাইল। আর তরূণ ফিরে এসে একথাও হযরতকে জানান। হযরত বললেন, দরবেশ সম্বন্ধে তোমার ধারণাকে ঐ রুটিওয়ালের মত। বড় লজ্জা পেল তরূণ। তার অজ্ঞতা দূর হল।

সাধকদেরও সাধ থাকে। কিন্তু প্রবল সংযমের সাহায্যে তাঁরা তা অবদমিত করেন। একদা হযরত যুনযুন (রঃ)-এর মনেও সিরকা খাওয়ার ইচ্ছা জাগে। তিনি তা দমিয়ে রাখেন দীর্ঘ দশ বছর। কিন্তু এক ঈদের রাতে আর পেরে ওঠলেন না। তখন বাধ্য হয়ে তিনি তাঁর মনকে বোঝালেন, আজ রাতে দুরাকায়াত নামাজের মধ্যে যদি সমগ্র কোরআন খতম করা সম্ভব হয়, তাহলে সিরকা খাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। মন রাজি হয়ে গেল। শর্ত মতো নামাজ শেষ করে তিনি যখন সিরকার পেয়ালা ঠোঁটের কাছে তুলে ধরলেন, তখন তাঁর ভেতরের মানুষটি বলে উঠল, এভাবে প্রবৃত্তিকে খুশী করা ঠিক নয়। তিনি পেয়ালা নামিয়ে রাখলেন।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ৭ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।