হযরত মূসা (আঃ) এর সাথে শোয়ায়েব (আঃ) এর মেয়েদের পরিচয়

গাছের ছায়ায় বসে দেখলেন যে, অদূরে কতক লোক একটি কূপের কাছে ভিড় জমিয়েছে। তারা কূপ থেকে পানি উঠিয়ে নিজেদের পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছে। আর তাদের সম্মুখে দুটি যুবতী নিজেদের পশুগুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারা কূপের কাছে যাচ্ছে না। তাদের পশুগুলো পানির জন্য বার বার কূপের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু যুবতীদ্বয় পশুগুলোকে ফিরিয়ে রাখছে।

হযরত মূসা (আঃ) গাছের ছায়ায় বসে তাদের অবস্থা অবলোকন করছেন। যুবতীদ্বয়ের এ অবস্থা দেখে তাঁর মায়া হল। তিনি তাদের কাছে গিয়ে বলেন, মনে হচ্ছে তোমরা পশুগুলোকে পানি পান করাতে এসেছ অথচ পানি পান না করিয়ে এক পার্শ্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এর কারণ কি? কুরআনে সংক্ষিপ্ত ভাবে এ বর্ণনা করা হয়েছে।

অর্থঃ আর মূসা যখন মাদইয়ানের কূপের কাছে পৌঁছালেন। তখন সেখানে একদল লোককে দেখতে পেলেন যারা (নিজেদের পশুগুলোকে) পানি পান করাচ্ছিল। আর তাদের কাছে দু’জন নারীকে দেখতে পেলেন যে, তারা নিজেদের পশুগুলোকে বাধা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মূসা (আঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কি উদ্দেশ্য? (সূরা কাসাস)

তারা বলল, রাখলরা তাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে চলে যাওয়ার পর আমরা তা হতে আমাদের পশুগুলোকে পান করাব। এখন রাখালদের ভিড়। আর আমরা পুরুষদের ভিড় ঠেলে কাজ করা পছন্দ করি না।

আমরা অসহায় হয়ে এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি। যদি অন্য কোথাও পানির ব্যবস্থা থাকত তাহলে আমরা এখানে আসতাম না। এ সামান্য কাজটুকু করে দেয়ার মত আমাদের ঘরে কোন পুরুষ নাই। আমাদের পিতা অতিশয় বৃদ্ধ, তিনি ঘর হতে বের হয়ে কোন কাজ করতে পারেন না।

হযরত মূসা (আঃ) তাদের কথাগুলো অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শুনেন। তাদের অবস্থার কথা অনুধাবন করে তাঁর হৃদয় গলে গেল। তিনি বুঝতে পারলেন যুবতীদ্বয় কোন উচ্চ বংশীয়। তিনি ভাবলেন আল্লাহ পাক আমাকে যে শক্তি ও সামর্থ দিয়েছেন এতে এদের উপকার করাটা আমার পক্ষে কোন অসম্ভব ব্যাপার নয়। তারপরও দৈহিক ক্লান্তি ও অবসন্নতা এবং ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও হযরত মূসা (আঃ) তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসে।

তাদের ছাগল গুলো নিয়ে কূপের কাছে গেলেন। রাখালদের ভিড় অতিক্রম করে যাবতীদ্বয়ের ছাগল গুলোকে পানি পান করিয়ে তাদের হাতে অর্পণ করে পুনরায় গাছের ছায়ায় চলে গেলেন। আর সেখানে বসে আল্লাহর যিকর ও দোয়ায় মশগুল হলেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

অর্থঃ “যুবতীদ্বয় জবাব দিল, যে পর্যন্ত না এ রাখালদল পানি পান করিয়ে দূরে সরে না যায়, সে পর্যন্ত আমরা পানি পান করাই না। আর আমাদের পিতা অত্যন্ত বৃদ্ধ। অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) যুবতীদ্বয়ের পশু গুলোকে পানি পান করিয়ে। সেখান থেকে সরে ছায়ায় যেয়ে বসলেন আর দোয়া করলেন- হে আমার রব! আপনি আমার প্রতি যে কোন নিয়ামত প্রেরণ করুন আমি এর মুখাপেক্ষী। (কাসাস)

পশুপালকে পানি পান করাতে এসে শুআইব (আঃ) এর যুবতী কন্যাদ্বয়ের অপেক্ষার কারণ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, মিসর থেকে এসে যেদিন হযরত মূসা (আঃ) মাদইয়ানের কূপের পাড়ে পৌঁছান সেদিন শুয়াইব (আঃ) এর যুবতী কন্যাদ্বয় রাখলদের ভিড়ের সাথে সাথে অন্য একটি কারণেও সেখানে অপেক্ষা করতে হয়েছে। তা হচ্ছে, রাখলরা নিজেদের পশু গুলোকে কূপ থেকে পানি তুলে পান করিয়ে যাবার সময় কূপের মুখে একটি পাথর চাপা দিয়ে যায়। পাথরটি অত্যন্ত ভারী ছিল। এ পাথরটি সরাতে চল্লিশ জন লোকের প্রয়োজন পড়ত। আর যে পাত্র দিয়ে পানি উঠাতে হত সেটিও ছিল অত্যন্ত ভারী। তাই রাখালদের চলে যাবার পরও শুআইব (আঃ) এর কন্যাদ্বয়কে কূপ রক্ষীদের আগমনের অপেক্ষা করতে হয়েছে। তারা এসে যখন কূপের মুখের পাথর সরাবে এবং এভারী পাত্র দিয়ে পানি উঠিয়ে দিবে, তখনই তারা পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে ঘরে ফিরে যাবেন।

মূসা (আঃ) দীর্ঘক্ষণ ধরে তাদেরকে অপেক্ষামান দেখে তাদেরকে কারণ জিজ্ঞে করলে তারা রাখলদের ভীড় কূপের পাথর এবং ভারী ডোল দিয়ে পানি উঠাতে না পারার কথা বলল। তাদের কথা শুনে মূসা (আঃ) একাই কূপের মুখের পাথর তুলে পানি উঠিয়ে দেন এবং কন্যাদ্বয় পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে চলে যায়। মেয়ে দুটি নিষ্ক্রান্ত হওয়ার পর মূসা (আঃ) পুনরায় গাছের ছায়ায় গিয়ে বসলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ –

অর্থঃ অতঃপর মূসা তাদের পশুগুলোকে পানি পান করালেন, অতঃপর সরে গিয়ে ছায়ায় বসলেন। তখন দোয়া করলেন, হে আমার রব! আমার প্রতি আপনি যে নিয়ামতই পাঠান আমি তার মুখাপেক্ষী। (সূরা – কাসাসঃ আয়াত-২৪)

মূসা (আঃ) শুআইব (আঃ) এর কন্যাদ্বয়ের পশুগুলোকে পানি উঠিয়ে দেয়ার পর তারা কোন প্রকার কথাবার্তা না বলে চলে গেলেও মূসা (আঃ) এর নৈতিকতা, মার্জিত আচরণ, চলন বলন, অনন্য দৈহিক শক্তি সামর্থ ইত্যাদি গুণ-বৈশিষ্ট্য তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কেননা, তারা পাথর সরান, ডোলে করে পানি তোলায় দৈহিক শক্তিমত্তা ও তাদের সাথে কথাবার্তায় নৈতিক শুদ্ধতার পরিচয় পেয়েছেন।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।