হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) – এর অস্তিম শয্যায় আবু বকর (রাঃ)
বিদায় হজ্জ সমাপ্ত করে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মদীনায় পুনরায় ফিরে আসলেন। তখন মদীনায় খাদ্যের অভাবে অনেক লোক অনাহারে দিন চালাছিল। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) একদিন খুৎবা দিচ্ছিলেন, ঐ মুহূর্তে সংবাদ আসল যে, শাম দেশ হতে একদল বণিকের মাধ্যমে অনেক উট বোঝাই প্রচুর খাদ্য-সামগ্রী মদীনা শরীফে এসেছে। আর সে বণিকেরা উট এবং খাদ্য-সামগ্রী বিক্রি করতে চায়। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এ সংবাদ শ্রবণ করে খুৎবা হতে উঠে সকলেই খাদ্য ক্রয় করার জন্য আসেন। মাত্র দশজন লোক ছিল এ খুৎবাইয়। সাহাবীরা খুব মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শ্রবণ করতে ছিলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন এদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।
হিজরী ১১ সনে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) রোগাক্রান্ত হন। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) – এর শরীরের দুর্বলতা দিন দিন বাড়তে থাকে।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নামায পড়ানোর জন্য হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) কে আনুমতি প্রদান করলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) – এর জায়নামাযে দাঁড়িয়ে নামায পড়াতে পছন্দ করতেন না। তিনি এটাকে বে-আদবি বলে মনে করতেন। আবার হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) – এর আদেশ অমান্য করাও বড় বে-আদবি। তাই নিজের ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও নবীজীর জায়নামাযে দাঁড়িয়ে নামায পড়াতে থাকেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)।
একদা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) নামায পড়াচ্ছিলেন তখন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হুজরা শরীফ হতে নামাযের জন্য মসজিদে প্রবেশ করলেন। এমতাবস্থায় হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) নামায অবস্থায় হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) – এর আগমন টের পেয়ে তিনি জায়নামায হতে সরে যেতে চাচ্ছিলেন কিন্তু নবীজী ইশারার মাধ্যমে বাধা দিয়ে তিনি ডান পাশে গিয়ে বসে নামায আদায় করেছিলেন।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) – এর শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভাল হওয়াতে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ), হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) – এর নিকট হতে অনুমতি নিয়ে নিজের গৃহে গেলেন। সেখানে উপস্থিত ছিল তাঁরই স্ত্রী খাদিজা বিনতে সুহাইর। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) নিজের ঘর হতে বের হয়ে মদীনায় এসে দেখলেন যে, সমগ্র মদীনায় অন্ধকারের ছায়া নেমে এসেছে। চতুর্দিকে শুধু কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। তখন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে? কিন্তু কেউ তাঁর কথার কোন জবাব দিচ্ছেন না।
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) তখন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) – এর গৃহে গিয়ে হাজির হয়ে দেখলেন যে, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে চাদর গায়ে অবস্থায় শায়িত। তাঁর পবিত্র রূহ এ দুনিয়ার বন্ধন ছিন্ন করে পরম দয়ালু আল্লাহর নিকট গিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। এরপর হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) যে পদক্ষেপ নিয়ে এ অবস্থার মোকাবেলা করেছিলেন তা ইসলামের ইতিহাসে খুবই প্রশংসনীয়।