হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের পূর্বে জমজম কূপের পুনঃখনন-২য় পর্ব
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের পূর্বে জমজম কূপের পুনঃখনন-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আবদুল মুত্তালিব নাম হওয়ার কারণ এই যে, আবদে মন্নাফের ছয় পুত্র ছিল। তন্মমধ্যে হাশেম সর্বাপেক্ষা প্রতিভাবান ও জনপ্রিয় ছিলেন। হজ্জের মৌসুমে তিনি হাজীদের পানি সরবরাহ ও অভ্যর্থনা করতেন, ব্যবসা বাণিজ্যে দেশ বিদেশে ভ্রমণ করতেন। এজন্য দেশ বিদেশেও তার নাম খুব ছড়িয়ে পড়লো। এভাবে একবার ব্যবসার উদ্দেশ্যে শাম যাওয়ার সময় মদিনার তখনকার ইয়াছরেবের বনী নাজ্জার গোত্রের সালমা নান্মী জনৈকা লাবণ্যময়ী তরুণীর সাথে বিবাহ হয়। সালমার গর্ভে হাশেমের এক পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। তার নাম রাখা হয়েছিল শায়বা। হাশেম শামের পথে গোজ্জা নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন। এদিকে তাঁর মৃত্যুর পর দীর্ঘকাল পর্যন্ত তাঁর সন্তানের খবর তাঁর ভাই বোনদের নিকট পৌঁছে নি। অবশেষে আট বছর পর তাঁর ভ্রাতা মুত্তালিব শায়বার সংবাদ পেলেন।
অতঃপর তিনি মদিনায় গিয়ে শায়বাকে সাথে নিয়ে আসেন এবং তাঁর লালন পালন করেন। এ জন্য শায়বাকে মানুষ আবদুল মুত্তালিব বলত। আবদুল মুত্তালিবের মধ্যে আমানত ছিল প্রতীক্ষিত নূরে মোহাম্মাদী (সাঃ) সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ দয়ালু। মিল্লাতে ইব্রাহিমকে পুনঃরায় ধরনী বুকে জিন্দা করবেন তিনি। কুদরতের অপার মহিমাকে বুঝতে পারে। সেই অনাগত নব অতিথির অভিন্দনের জন্য বুঝি বহুকালের চাপা পড়া স্বচ্ছ শীতল জমজম কূপের পুনরুদ্ধার হবে। আদি পিতা ইসমাইলের ন্যায় তিনিও জনশুন্য মরুকক্ষে পান করবেন সেই বেহেশতী শওগাত আল্লাহর সেই অফুরন্ত নেয়ামত। কালের অতলে অজ্ঞাত এ জমজম কূপের পুনরুদ্ধার আবদুল মুত্তালিবের জীবনের এক বিরাট ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন ধরনের বর্ণনা করেছেন। অধিক বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনা এই যে, আবদুল মুত্তালিব যখন মক্কার শাসনভার হাতে নিলেন, তখন বলা হচ্ছে, হে আবদুল মুত্তালিব! তোমার আদি পিতা ইসমাইলের জমজম কূপ পুনরুদ্ধার কর, যা মেজাজ বা আমর বিন হারেস নিশ্চিহ্ণ করে দিয়েছিল। আবদুল মুত্তালিব এ স্বপ্ন দেখে হঠাৎ জাগ্রত হয়ে যান এবং ভাবতে লাগলেন কোথায় সেই জমজম কূপ কিভাবে তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়।
এ চিন্তাভাবনায় চতুর্দিকে ঘোরাফিরা করতে লাগলেন। হঠাৎ তাঁর অন্তরে এলহাম হল যে, সাফা ও মারওয়ার যে দুটি মূর্তি আছে একটির নাম এছাপ এবং অপরটির নাম নায়েলা। এ দুটির মূর্তির মাঝামাঝি স্থানে জমজম কূপ। তখন আবদুল মুত্তালিবের মাত্র একটি পুত্র সন্তান ছিল। যার নাম ছিল হারেছ। তিনি পুত্র হারেছকে সাথে নিয়ে গন্তব্য স্থানে যান। কিন্তু নিশ্চিহ্ন কূপের সন্ধান লাভ করা এবং তা খনন করা খুব সহজ কাজ ছিল না। তাই তিনি কুরাইশগণের নিকট প্রার্থনা করলেন কিন্তু তারা তখন এটাকে অবাস্তব ও অসম্ভব কাজ মনে করে তাঁর সহযোগিতা করতে অসম্মতি প্রকাশ করল। আবদুল মুত্তালিব তখন আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলেন। হে আল্লাহ! যদি আপনি আমাকে দশটি ছেলে দান করেন তাহলে আমি এখন আপনার আদেশ পালন করার জন্য কুরাইশদের সহযোগিতা ও সাহায্যের মুখাপেক্ষী হতাম না এবং যে কোন জনহিতকর কাজে আমি স্বয়ং সম্পন্ন হতাম। হে রাব্বুল আলামীন! আপনি যদি আমাকে দশটি ছেলে দান করেন তাহলে একটি ছেলে আপনার নামে কুরবানী করে দিব।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের পূর্বে জমজম কূপের পুনঃখনন-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন