হযরত মুসা (আঃ)এর জন্ম বংশ ও পরিচয়-৬ষ্ঠ পর্ব
হযরত মুসা(আঃ) এর জন্ম বংশ ও পরিচয়-পঞ্চম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এ সময় মুসা (আঃ) এর বোন মরিয়ম কাছে এসে বলল মহারানী, আমার কাছে একজন ধাত্রী আছে যদি আপনি আদেশ করেন তবে আমি তাকে নিয়ে আসতে পারি। আছিয়া বললেন হ্যা, তাড়াতাড়ি যাও। যত ধাত্রী আছে সকল কে খবর দাও। বাচ্চা যার দুধ পান করবে তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে। এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ মাসিক ভাতা দেওয়া হবে। তখন মরিয়ম তাড়াতাড়ি তার মায়ের নিকট গিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল এবং তার মাকে নিয়ে রাজদরবারে চলে আসে। এই নতুন ধাত্রীকে এনে যখন তার দুধ পান করানোর আয়োজন করা হল।
তখন বাচ্চা আনন্দের সাথে দুধ পান করল। অবস্থা দেখে সকলে আনন্দে হইচই আরম্ভ করল। আছিয়া তখন ধাত্রীকে নিয়মিত দুধপান করানোর জন্য নিয়োগ দিলেন। এবং মাসিক ভাতা ঠিক করে দিলেন। হজরত মুসা (আঃ) এর মাতা আল্লাহর কুদরতের কথা স্মরণ করে তার দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন। অতপর তিনি তার দায়িত্ব পালনে খুব সচেষ্ট হলেন। হজরত মুসা(আঃ) কে আল্লাহ তা’লা নিজ মাতার দুধ পান করার সুযোগ করে দিলেন। হজরত মুসা (আঃ) অত্যন্ত আদর যত্নে লালিত পালিত হতে লাগলেন। ধীরে ধীরে তিনি বড় হতে থাকেন।
দুই বছর বয়সের সময় একদিন ফেরাউন হজরত মুসা (আঃ) কে কোলে তুলে আদর করছিল। বেশ কিছু সময় আদর করার পরে এক পর্যায়ে ফেরাউন হজরত মুসা (আঃ) কে চুমা দেওয়ার উদ্দেশ্যে যখন তার মুখ হজরত মুসা (আঃ) এর মুখের কাছে নিল তখন হজরত মুসা (আঃ) বাম হাতে তার দাড়ি ধরে ডানহাত দিয়ে তার গালে এক চড় লাগিয়ে দিলেন। ফেরাউন এই চড় খেয়ে আছিয়া কে ডেকে বলল আমি কি তোমাকে আগে বলিনি যে এই ছেলে টি কালক্রমে আমার রাজ্যে ধ্বংস করে প্রতিষ্টা লাভ করবে? অতএব অচিরেই একে মেরে ফেলা উচিৎ। আজকে সে আমার সাথে যে আচরণ করেছে তাতে আমার আর বুঝতে বাকি নেই। অতএব একে লালনপালন করা যাবে না। ওকে আজকেই জাল্লাদের নিকট হস্তান্তর কর।
আছিয়া ফেরাউন কে বললেন হে মহারাজ আপনি এত বড় গুনি মানুষ আপনার সমতুল্য মানুষ এই পৃথিবীতে বিরল। আপনি দেশের কয়েক কোটি মানুষের প্রভু আপনার পক্ষে শিশু বৃদ্ধ ও যুবক দের চরিত্র স্বভাব প্রকৃতি সম্বন্ধে অজ্ঞ থাকা সমীচীন নয়। আপনার মাঝে এক ভ্রান্তি এসে আপনাকে আড়ষ্ট করে ফেলেছে। এবং আপনার মধ্যের প্রতিভাকে বিমর্ষ করে দিয়েছে। যার জন্য আপনি এক অবুজ শিশুর আচরণকে আপনি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের কাজের সাথে মিলিয়ে বিচার করছেন। এটা আপনার এক মহাভ্রান্তির লক্ষণ। ফেরাউন আছিয়ার কথা শুনে খুব বিরক্ত হয়ে গেল এবং বলল এ শিশুর সম্বন্ধে কি বলতে চাও? আছিয়া বলল আমি বলতে চাই যে এ শিশুর জ্ঞান বুদ্ধি হয়নি। ফেরাউন বলল এই শিশু যে অবুজ তার প্রমান দাও।
তখন আছিয়া একজন মন্ত্রি কে ডেকে বললেন আপনি এক পেয়ালায় আগুন আর এক পেয়ালায় স্বর্নমুদ্রা রাখবেন যদি সে বুজবান হয় তবে সে স্বর্নের পেয়ালা ধরবে আর যদি অবুজ হয় আগুন ধরবে। মন্ত্রি তখন ছেলেটি কে পরিক্ষা করার জন্য এক পেয়ালা আগুন ও এক পেয়ালা স্বর্ন মুদ্রা এনে হজরত মুসা (আঃ) এর হাতে কাছে রেখে দিল। হজরত মুসা (আঃ) তখন আগুন এর পেয়ালা থেকে একটি জ্বলন্ত আগুনের গোলা মুখে তুলে দিলেন। তখন নি তার মুখ পুড়ে গেল। সে চিৎকার করে উঠল। তখন নিকটস্ত সকলেই হায় হায় করে উঠল। তাড়া তাড়ি একজনে হজরত মুসা (আঃ) এর মুখের ভিত হতে আগুন বের করে নিলেন। এ অবস্থা দেখার পরে ফেরাউন আর কোন শব্দ না করে রাজদরবারে চলে গেল। এবং ডাক্তার এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করল। হজরত মুসা (আঃ) শিশুকালে আগুন মুখে পুরে দেওয়ার কারনে প্রথম জীবনে কথা বলতে পারতেন না। পরবর্তী সময়ে যদিও কথা বলতে সক্ষম হয়েছিলেন তবে তার মধ্যে তোতলাপনা ভাব ছিল।
সূত্রঃ আল কোরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত মুসা(আঃ) এর জন্ম বংশ ও পরিচয়-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন