হযরত মুসা (আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-৫ম পর্ব
হযরত মুসা(আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-৪র্র পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তার পরে তার জবাবের ধরণ শুনে পরবর্তি পদক্ষেপ নিতে হবে। এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক তারা দুজনে রওয়ানা হলেন। তারা প্রথমে দবারের গেটে গিয়ে গেটের কড়া ধরে শব্দ করলেন। দীর্ঘ সময় ধরে শব্দ করে কেউ দরজা খুলল না। সারা দিন তারা ওখানে দাড়িয়ে বসে কাটালেন কিন্তু কার সাথে তাদের দেখা হল না। তাই সন্ধ্যায় তারা ঘরে ফিরলেন। দ্বিতীয় তারা সেখানে গিয়ে দরজা শব্দ করতে থাকেন তাতেও কেউ সাড়া দিল না। তৃতীয় দিন তারা একই ভাবে শব্দ করলেন। কিন্তু কেউ কোন সাড়া দিল না। চতুর্থ দিন পঞ্চম দিন ষষ্টম দিন তারা ফিরে এলেন। এভাবে দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেও ফেরাউনের সাক্ষাত লাভ করতে সক্ষম হল না। অতঃপর তারা অন্দর মহলে, যেখানে ফেরাউন অধিক সময় কাটায় সেখানে পৌঁছার সিদ্ধান্ত নিলেন। ফেরাউন ইতোপূর্বে তার মহলের চারদিকে ঘন করে খোরমা গাছ লাগিয়েছিল।
সে গাছের প্রত্যেকটির সাথে একটি করে বাঘ বেধে রেখেছিল। যেন কোন শত্রু তার বাড়িতে না ঢুকতে পারে বা বাড়ির চারিদিকে ঘোরাফেরা করতে পারে। হযরত মুসা (আঃ) ও হযরত হারুন (আঃ) যে দিন তার মহলে প্রবেশ করে সে দিন বাঘ গুলো নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল। কোন কোন লেখক লিখেছন বাঘগুলো হযরত মুসা (আঃ) কে দেখে ছালাম করেছিল এবং দাড়ান থেকে শুয়ে পড়েছিল। এক কথায় অনাক্রম প্রক্রিয়া প্রদর্শন করেছিল। হযরত মুসা (আঃ) এবং হযরত হারুন (আঃ) গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেন।
অতঃপর দ্বিতীয় গেটের দারোয়ান কে বললেন, আমরা আজ অনেক দিন যাবত বাদশার সঙ্গে দেখা করার জন্য তার দরবারে ও মহলে অপেক্ষমান আছি। তুমি গিয়ে বাদশাকে বল, দুজন নবী আপনার সাথে দেখা করার জন্য অনেক দিন যাবত এখানে আসা যাওয়া করছে। অতএব আপনি তাদের সাথে একটু সাক্ষাত করুন। দারোয়ান ফেরাউনের নিকট সব ঘটনা বলল। তখন ফেরাউন দোতালার জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখল হযরত মুছা ও তার ভাই হারুন। তখন তিনি তাদের ভিতরে খাস মহলে আসার হুকুম দিলেন। হযরত মুসা (আঃ) ও হযরত হারুন (আঃ) ফেরাউনের সম্মুখে বসলেন। আমরা দুজনে আল্লাহ তায়ালার পক্ষে থেকে নবুয়ত লাভ করেছি। এই মর্মে আল্লাহ তায়ালা আমাদিগকে আপনার নিকট এসে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমরা আপনার নিকট এসেছি। আপনি বিশ্বপালক ও বিশ্ব সৃষ্টিকারী আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান আনুন। যিনি আপনাকে বিশাল রাজ্যর অধিকারী করেছেন। যিনি আপনাকে অটুট স্বাস্থ্য দান করেছেন।
যিনি আপনার জীবনের সকল আশা ও কামনা পুরণ করেছেন। তারই একত্ববাদের স্বীকৃতি দিয়ে আপনি মেহমান হয়ে যান। ফেরাউন হযরত মুসা (আঃ) এর কথায় খুবি বিরক্ত বোধ করল এবং বলল, আমি তোমাকে প্রতিপালন করেছি। তোমার বিবাহ সাদি সম্পূর্ণ করে দিয়েছি। অতঃপর তুমি এক কিবতীয়কে হত্যা করে পালিয়ে গেছ। হত্যার বিচার পর্যন্ত আমি করি নি। এখন প্রতিদান হিসাবে আমার সব কিছু ধ্বংস করার নিয়তে এসেছ। এটা কি তোমার মানবীয় গুন না পশু আচারণ। হযরত মুসা (আঃ) বললেন হে আমার পালন কর্তা পিতা! আমি আপনার ইহকাল ও পরকাল মঞ্জল কামনা করি এবং দু জাহানে যাতে আপনি অনেক সম্মনা লাভ করতে পারেন তারই উপযুক্ত প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
ফেরাউন বলল, মুছা! তুমি জান আমি খোদা দাবি করে মানুষের নিকট অনেক সম্মান লাভ করছি, সারা দেশে মানুষ আমাকে প্রচুর সম্মান দিয়ে থাকে, সেজদা করে, আমার নিকট করুণা ভিক্ষা করে। এক কথায় তারা দিবানিশি আমার পায়ের উপর পড়ে থাকে। এমতাবস্থায় আমি কি করে এ সম্পদ পরিত্যাগ করে আত্নসম্মান জলাঞ্জুলি দিয়ে তোমার দিন কবুল করতে পারি। হযরত মুসা (আঃ) বললেন আপনাকে এর চাইতে বেশি সম্পদ আল্লাহ তায়ালা দান করবে।
আপনি আল্লাহ তায়ালার দিন কবুল করেন আল্লাহ তায়ালা আপনাকে চিরযৌবন দান করে দিবেন। দীর্ঘ আয়ু দান করবেন সমগ্র বিশ্বব্যাপী আপানার রাজ্য সম্প্রাসারন করে দিবেন। এ ওয়াদা আমি আপনাকে দিতে পারি। ফেরাউন বলল আচ্ছা আমাকে একটু ভাবতে দাও। আমি অল্প দিনের ভিতরে তোমাকে জানাব। এখন হযরত মুসা (আঃ) ও হযরত হারুন (আঃ) উভয়ে চলে গেলেন। তারা দুই ভাই দেশ সর্বত্র ঘুরে ঘুরে মানুষ কে ইসলামের দাওয়াত দিতে লাগলেন।
সূত্রঃ কুর আনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত মুসা(আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন