হযরত মুসা (আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-১১তম পর্ব
হযরত মুসা(আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা’য়ালাকে মনে প্রানে ভয় করত এবং হযরত মুছা (আঃ) এর নবুয়াতী সম্বন্ধে অধিকাংশ সময় বাগারম্বর করত। কিন্তু কার্য ক্ষেত্রে তার মোকাবেলা করতে ভয় পেত। মন্ত্রী পরিষদ ও পদস্থ কর্মকর্তাদের উষ্কানিতে ফেরাউন বাধ্য হয়ে হযরত মুছা (আঃ) এর সঙ্গে প্রকাশ্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হত। প্রধানমন্ত্রী হামান ছিল প্রধান উৎসাহ দাতা।
একদা প্রধানমন্ত্রী হামান ফেরাউনকে বলল, মহারাজ! মুছা! বাস্তবিকই একজন দক্ষ যাদুকর। আর এ যাদুর প্রতিক্রিয়া খুবি ক্ষনস্থায়ী। যদি তার পক্ষে সম্ভব হত সেদিন আমদের ধ্বংস করে মিশর এর রাষ্ট প্রধাণ হয়ে সকল মানুষ কে তার দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত করে নিত। কিন্তু ততক্ষন তার যাদু প্রদর্শনী টিকিয়ে রাখা সম্ভব ছিল না। বিধায় ক্ষনিক পরে তার যাদু তুলে নেয়। যত বারই সে সাপের খেলা দেখাল ক্ষনিকের জন্য। অতএব আমরা তার প্রতি দীর্ঘ মেয়াদী আক্রমণান্তক পরিকল্পনা গ্রহন করব। তাহলে তাকে দমন করা অতি সহজ হবে।
যেমন তার পিছনে ডিভিশন সশস্ত্র সৈন্য মোতায়ন করে রাখব। যখন তার স্বাভবিক অবস্থায় দেখবে তখনই তাকে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। ভাল সুযোগ আসলে তাকে একেবারে খতম করে দেব। ফেরাউন হামানের কথায় একমত হল এবং পরের দিন এক ব্যাটেলিয়ান সৈন্যকে হযরত মুছা (আঃ) এর পাহারাদারির কাজে নিয়োগ করলেন। হযরত মুছা (আঃ) দেশের সর্বত্র ঘুরে ঘুরে দিনের দাওয়াত পেশ করতে লাগলেন। সাধারণ মানুষ সর্বদাই অলৌকিক নিদর্শনের উপর খুব আস্থাশীল ছিল বলে আল্লাহা তায়ালা হযরত মুছা (আঃ) কে লাঠির মো’জেযা ও উজ্জ্বল হাতের মো’জেযা ক্ষমতা প্রদান করেন। মানুষকে উহা দ্বারা অনেক মো’জেযা দেখিয়েছেন। কিন্তু তারা নবিকে উপহাস ব্যতীত্য দাওয়াত গ্রহন করল না।
তখন হযরত মুছা (আঃ) আল্লাহ তা’লার নিকট গজব নাজিলের আবেদন জানালেন। আল্লাহ তা’লার পক্ষ থেকে নবীকে জানান হল তুমি তোমার উম্মতের হেদায়েত পক্ষে যখন যে দোয়া করবে আল্লাহ তা পূরণ করবেন। হযরত মুছা (আঃ) উম্মতের ঠান্ডা, বিদ্রুপ, বিশ্বাসভঙ্গ ও ওয়াদার খেলাফির কারনে অধৈর্য্য হয়ে একবার দোয়া করেন, আল্লাহ নাফারমান জাতির প্রতি তুমি দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দাও। হযরত মুছা (আঃ) এর দোয়ার পর মুহুর্ত থেকে দেশে খাদ্য শস্য নষ্ট হতে লাগল এবং ক্ষেত খামার রৌদ্র জ্বলে পুড়ে শুকিয়ে গেল। অল্প দিনের মধ্যে দেশে প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ নেমে এল। মানুষ মজুদ ফসল খেয়ে শেষ করল। অতপর গাছের পাতা শিকড় খেয়ে শেষ করল। তারপর অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে মহামারীর সম্মুখীন হল।
দেশের মানুষ দুর্ভিক্ষ ও মহামারী একত্রে দুটি গজবের সম্মুখীন হল। রাস্তা ঘাটে মানুষের লাশ জমা হয়ে গেল। ঘরে বাইরে লাশ পড়ে থাকল। জীবিত মানুষ বাপ ভাই আত্নীয়-স্বজনকে ছেড়ে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পালিয়ে যেতে আরম্ভ করল। এমন অবস্থায় ফেরাউন দিশেহারা হয়ে কতক লোক পাঠিয়ে মুছা (আঃ) কে দোয়া করতে বললেন। এমন কি আল্লহার উপর ইমান আনার অঙ্গীকার করল। হযরত মুছা (আঃ) কওমের বিপদ মুক্তির দোয়া করলেন। আল্লাহতালা দোয়া কবুল করলেন। এর পর তীব্র বৃষ্টি শুরু হল। যাতে রাস্তা ঘাট পরিষ্কার হল, এবং জমিনে শস্য-শ্যামল হয়ে উঠল। মানুষ মৃত্যুর দোয়ার থেকে ফিরে আসল। জাতি এক মহা দূর্যোগ থেকে রক্ষা পেল। কিন্তু তাদের ওয়াদা কেউ পালন করল না। মহা আনন্দে দিন কাটাতে লাগল। এবং নবির বীরুদ্ধে পুনারায় ষড়যন্ত্র আরম্ভ করল। একাধারে অবস্থা পূর্বের চেয়েও খারাপ এর দিকে যেতে লাগল।
এই দেখে নবী জাতির উপর দ্বিতীয় গজব নাজিলের জন্য আল্লাহার দরবারে দোয়া করল। তখন আরম্ভ হল উকুনের উপদ্রপ। এত উকুন বৃদ্ধি পেল যাতে ঘর বাড়ি, গাছ পালা মাঠ ঘাট উকুনে পরিপূর্ণ হল। প্রথম দিকে গৃহপালিত পশুগুলো উকুনের আক্রমনে মারা গেল। পরবর্তী সময়ে শিশু সন্তান মারা গেল। তারপরে মহিলা পুরুষ রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেত লাগল। মানুষ দিবা রাত্র উকুন মারত। আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ফেলত। আরও যত রকম ব্যবস্থা ছিল তা গ্রহন করল। কিন্তু উকুনের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যেতে লাগল। এমন কি শেষ দিকে উকুন বড় হয়ে কচ্ছপের আকার ধরন করল। মানুষের তৈরি করা খাবার নিমিষে শেষ করে ফেলত। মানুষকে ঘুমাতে দিত না। এক সময় মানুষ রাস্তা দিয়ে হাটার সময় গাছের ডাল থেকে লাফিয়ে পড়ে মানুষের উপর আক্রমন করতে আরম্ভ করল। দেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষ মৃত্যু বরন করল। তখন তারা উপায় না দেখে দৌড়ে হযরত মুছা (আঃ) এর নিকট এসে আশ্রয় গ্রহন করল এবং আল্লাহার উপর ঈমান আনার ওয়াদা করল। হযরত মুছা (আঃ) দয়া পরবশ হয়ে তাদের জন্য আল্লাহার দরবারে তাদের জন্য দোয়া করলেন। অমনি আল্লাহা তালা পাহাড়ের পুর্বদিক থেকে বাতাস প্রবাহ করে দিলেন তাতে দু’দিনের ভিতরে সব উকুন নিঃশেষ হয়ে গেল। মানুষ এক মহা বিপদ থেকে রক্ষা পেল দীর্ঘ তিন বছর যাবত গ্রামবাসী অনেক আরামে দিন কাটাল।
সূত্রঃ কুর আনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত মুসা(আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-১২তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন