হযরত মালেক দীনার (রঃ) – পর্ব ৩

হযরত মালেক দীনার (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

কথামতো তাই হল। কিন্তু আশ্চর্য, দু’জনের কারো হাতই পুড়ল না। তখন সিদ্ধান্ত হল, দুজনই খাঁটি পথে আছেন। কেউ ভ্রান্ত নন। আর এ ঘটনায় খুবই ভেঙ্গে পড়লেন হযরত মালেক (রঃ)। তিনি সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন। প্রভু গো! দীর্ঘ সত্তর বছর ধরে আপনার বন্দেগীতে নিমগ্ন রইলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক নাস্তিকের সমপর্যায়ে-ভুক্ত হলাম। এ আপনার কেমন বিচার প্রভু! তখন আকাশবাণী হলঃ তুমি বিচলিত হয়ো না মালেক! তোমার হাতের সঙ্গে সেও হাত রেখেছে। তোমার পূণ্য হাতের গুণেই তার হাত অক্ষত থেকেছে। যদি সে আলাদা ভাবে আগুনে হাত রাখত, তাহলে নিশ্চয় তা পুড়ে ছাই হয়ে যেত।

আল্লাহর বিচারে কখনও কোন ভুল হতে পারে না।

হযরত মালেক (রঃ) আর একবার কঠিন অসুখে পড়েন। সামান্য সুস্থ হওয়ার পর বিশেষ কাজে তাঁকে যেতে হল বাজারে। শারীরিক ভাবে তিনি তখনও দুর্বল। ঘটনাক্রমে ঐদিনেই বাজার কমিটির প্রাধান পরিচালক বাজারে আসছেন। পরিচালক বলে কথা! তাঁর নিরাপত্তার জন্য অনুচর বাহিনী একে-ওকে-তাকে সরিয়ে দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে লাগল। হযরত মালেক (রঃ)-কেও সরে যেতে হল। কিন্তু শরীর দুর্বল ছিল বলে সরে যেতে একটু দেরী হল। আর এই অপরাধে তাঁর পিঠে এসে পড়ল এক চাবুক। তিনি আর্তস্বরে বলে উঠলেন, ইয়া আল্লাহ! এই অত্যাচারীর নিষ্ঠুর হাত যেন দ্বি-খণ্ডিত হয়। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধুর আঘাত-জর্জর আবেদনে সাড়া দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে চাবুকধারীর ডান হাতখানা দ্বি-খণ্ডিত হয়ে বাজারের রাস্তায় পড়ে গেল।

হযরত মালেক (রঃ)-এর এক অত্যাচারী প্রতিবেশী ছিল। তার অত্যাচারে আর নিষ্ঠুরতায় অতিষ্ঠ হয়ে পাড়ার লোক এসে হযরতের কাছে আবেদন জানাল, লোকটিকে উপদেশ দিয়ে সৎপথে আনুন। তার অত্যাচারে আর সহ্য হয় না।

লোকজনের অনুরোধে তিনি নির্দয় প্রতিবেশীকে কিছু সদুপদেশ দিলেন। কিন্তু সে কথা কানে না দিয়ে রুঢ় ভাষায় বলল, আমি স্বয়ং সরকারের লোক। আমার ওপর কর্তৃক করার সাধ্য বা অধিকার কারোর নেই। মালেক (রঃ) বললেন, তাহলে কথাটা বাদশাহকে জানাতে হয়। সে বলল, তা জানাতে পারেন। মনে রাখবেন, বাদশাহ আমার মন জুগিয়ে চলেন। তিনি আমার ওপর বিরূপ হবেন না।

দেখি, বাদশাহ কি করেন। মালেক (রঃ) বললেন, যদি বাদশাহর তরফ থেকে কোন প্রতিকার পাওয়া না যায়, তাহলে আল্লাহর দরবারে যেতে হবে।

লোকটি মুখ টিপে হাসে। বলে, তিনি আবার বাদশাহর চেয়েও আমার প্রতি কোমল হৃদয়। প্রচুর ভালোবাসেন আমাকে। আমি তাঁর অনুগ্রহ-ভাজনও বটে।

মালেক দীনার (রঃ)-এর মন খারাপ হয়ে গেল। বস্তুত বিষণ্ণ হয়েই তিনি বাড়ী ফিরলেন।

কঠোর হৃদয় প্রতিবেশীর অত্যাচারের মাত্রা উত্তরোত্তর আরও বৃদ্ধি পেল। অত্যাচারিত মানুষ আবারও দল বেঁধে মালেক দীনার (রঃ)-এর কাছে এসে বলল, আমরা এর আগেও আপনার কাছে এসেছিলাম কিন্তু কোন কাজ হয়নি। আর তো পারা যায় না। লোকটার জুলুম সহ্যের বাইরে চলে গিয়েছে। আমাদের অনুরোধ, আপনি আর একবার চেষ্টা করুন আপনার কথায় যদি সে পথে আসে ভাল। না হয়, আমরাই ঘর-বাড়ী ছেড়ে চলে যাব।

অগত্যা তিনি আবারও লোকটির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর আকাশবাণী শুনলেনঃ মালেক তুমি আমার বন্ধুর ওপর রাগ করো না। বিরক্তও হয়ো না। হযরত মালেক (রঃ) আকাশবাণী শুনে হতবম্ব। এমন একটি কঠোর হৃদয় অত্যাচারী লোক কি করে আল্লাহর বন্ধু হয়! তিনি এর মধ্যে রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারলেন না। অবশ্য রাস্তা থেকে বাড়ী না ফিরে তিনি লোকটির কাছেই গেলেন।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত মালেক দীনার (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।