হযরত মারইয়ামের জন্ম ও কর্ম জীবন – পর্ব ১
হযরত জাকারিয়া (আঃ) এর জামানার কথা। যখন তিনি আল্লাহ তায়ালার নবী হিসাবে বাইতুল মোকাদ্দাসের রক্ষাণাবেক্ষন ও সেবা- যন্তের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তখন বনি ইসরাইলের মাঝে হেনা নামের একজন নেককার ও ধর্মভীরু মহিলা ছিলেন। তাঁর স্বামীর নাম ছিল এমরান। কথিত আছে যে হেনার এক বোনকেই হযরত জাকারিয়া (আঃ) বিবাহ করেছিলেন, সে সুত্রে হেনা হযরত জাকারিয়া (আঃ) এর শালিকা হতেন।
হেনা বৃদ্ধ বয়সে গর্ভ ধারণ করেন। তখন তিনি আল্লাহর দরবারে মানত করেন, তাঁর গর্ভে যে সন্তান আছে, সে ভূমিষ্ঠ হলে তাকে বায়তুল মোকাদ্দাসের সেবক হিসাবে উৎসর্গ করবে। তখনকার দিনে এ ধরনের মানতের নিয়ম ছিল। যাদেরকে এভাবে মানত করা হত তারা সারাজীবন বাইতুল মোকাদ্দাসে এবং ইবাদাত বন্দেগীর মাধ্যমে নিজ নিজ জীবন অতিবাহিত করত। এ ধরনের নিয়মের কারণে বাইতুল মোকাদ্দাসের খাদেম বা সেবকের সংখ্যা ছিল অনেক। তাদের খাওয়া দাওয়া ব্যাবস্থাদির জন্য মুসলমানগণ উদার হস্তে দান করতেন। সেবকের সংখ্যা যতবেশি হোক না কেন তাদেরকে কোন দিন অসহায় বা অভাবে দিন কাটাতে হয়নি। এটাই ছিল বাইতুল মোকাদ্দাসের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য।
হেনা গর্ভ ধারনের নয় মাস পরে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করলেন এবং তাঁর নাম রাখলেন মারইয়াম। কিন্তু মানতের বিষয় তিনি খুবই নিরাশ হলেন। কারণ ইতোপূর্বে কোন কন্যা সন্তান বাইতুল মোকাদ্দাসের সেবক হিসাবে কেউ দান করেন নি। তাই বিষয় টি হেনার নিকট নৈরাশ্যজনক বলে বোধ হয়েছে। তাঁর ধারণা ছিল হয়ত কন্যা সন্তানকে আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন না এবং মসজিদের প্রধান কর্মকর্তাবৃন্দও এতে সম্মতি দিবেন না।
এমতাবস্থায় তিনি বিষয়টি ভেবে খুবই নিরাশ হলেন এবং কেঁদে কেঁদে দিন কাটাতে লাগলেন। আল্লাহ তায়ালা তখন হেনাকে লক্ষ্য করে বললেন, হেনা! তুমি যা প্রসব করেছ, তা আল্লাহ তায়ালা ভাল ভাবে জানেন। মারইয়াম পুরুষ না হলেও আল্লাহ তায়ালা তাকে কবুল করেছেন এবং তাঁর মর্যাদা যথেষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাকে নবী জাকারিয়ার কাছে নিয়ে যাও।
হেনা আল্লাহ তায়ালার থেকে সান্তনা বানি পেয়ে নিশ্চিন্ত হলেন। অতপর সাত বছর পর্যন্ত মারইয়াম কে প্রতিপালন করে বড় করে তুললেন। তাঁর পর মারইয়াম কে নিয়ে হযরত জাকারিয়ার (আঃ) এর কাছে হাজির হলেন। হে আল্লাহর নবী! আমি, মানত করেছিলাম, আমার সন্তান কে আল্লাহর ঘরের খেদমতে দিব দূর্ভাগ্যবশত আমি একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেছি। তবুও আমার মানত ঠিক রাখার জন্য একে আপনার হাতে তুলে দিতে এসেছি। আপনি মেহের বানি করে কবুল করুন। হযরত জাকারিয়া তখন মসজিদের মুসুল্লিগণকে ডেকে বললেন, আপনাদের মধ্যে কে আছেন যে এই মেয়েটির ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে রাজি আছেন। মুসুল্লিগণ মারইয়াম ললাটে এক জ্যেতিসস্মান নূর দেখে তাঁর ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিতে সকলে আগ্রহ প্রকাশ করল।
হযরত জাকারিয়া (আঃ) দেখলেন সকলেই দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করল। এমতাবস্থায় স্বাবাবিকভাবে কার হাতে মাইরয়াম প্রতিপালনের দায়িত্ব অর্পন করার এক জটিলটার সৃষ্টি হয়েছে। তখন তিনি লটারির ব্যবস্থা করতে বাধ্য হলেন। তাওরাত কিতাব লেখার কাজে যে কলম ব্যাবহার হয় সে কলমটি এক এক করে সকলের হাতে দিবার ব্যবস্থা করলেন। ঐ কলমটি পানি ভর্তি এক পাত্রের মধ্যে ছেড়ে দিলে যার হাতে কলমটি পানিতে ডুববে না, সে মারইয়ামের প্রতিপালনের দায়িত্ব লাভ করবে। এ ব্যাবস্থা মাধ্যমে এক এক করে পরস্পর আরম্ভ হল। সকলের হাতের কলম পানিতে ডুবে গেল। যখন হযরত জকারিয়া (আঃ) কলম পানিতে ফেললেন তখন আর ডুবল না।
হযরত মারইয়ামের জন্ম ও কর্ম জীবন – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন