হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১৫
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অতএব তাঁর সাধনা যে বড় কঠোর ছিল, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহই ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। সুতরাং পার্থিব কোন কিছুই তাঁর মনে থাকত না। এই আত্ন-ভোলা মানুষটির সেবায় নিযুক্ত ছিলেন তাঁর এক শিষ্য দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে। কিন্তু যখনই তিনি তাকে কোন কাজ করতে বলতেন, তখনই তাঁর নাম জিজ্ঞেস করতেন। বেচারা একদিন জিজ্ঞেস করেই বসলেন, আপনি কি আমাকে পরিহাস করছেন হুযুর? এভাবে বারবার আমার নাম জানতে চান কেন? হযরত বললেন, না, না। আমি পরিহাস করছি না। তবে আল্লাহ্র নাম আমার অন্তরকে সম্পূর্ণরূপে দখল করেছে। সেখানে তাই অন্য নামের কোন ঠাই নেই। আর আমিও সব কিছু ভুলে যাই।
তাঁর উচ্চ মর্যাদা লাভ সম্বন্ধে তিনি বলেছেন, ছেলেবেলার এক চাঁদনী রাতে তিনি বাইরে বেড়াতে গিয়েছেন। হঠাৎ তাঁর চোখের সামনে প্রতিভাত হয় এক অনিন্দ্যসুন্দর দরবার, যার তুলনায় পৃথিবীটাও তুচ্ছ হয়ে যায়। তিনি তখন তাঁর প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে বললেন, আপনার এই অনুপম দরবার সকলের দৃষ্টির আড়ালে কেন প্রভু? তখন অদৃশ্য বাণী ধ্বনিত হয়- আমার এ দরবারে কেবল উপযুক্তরাই আসতে পারে।
তখন মনে হয়, যারা অনুপযুক্ত তিনি তাদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলবেন। কিন্তু পরক্ষণে মনে হল, এ কাজ তো শুধু রাসূলে করীমের। তখন আবারও উচ্চারিত হল অদৃশ্য বানী- তুমি আমার প্রিয় নবীর প্রতি যে সম্মান দেখালে তার পুরস্কারস্বরূপ আমিও তোমার মর্যাদা বাড়িয়ে দিলাম। দুনিয়াতে তুমি সুলতানুল আরেফীন নামে খ্যাত হবে।
একবার এশার নামাজ শেষ করে তার মনে হল, ঠিক কবুলের উপযোগী হল না। কাজেই তিনি আবার নামাজ পড়লেন। এবারেও মনে হল, নামাজ শুদ্ধ হয়নি। সুতরাং আবার নামাজ পড়লেন। কিন্তু তারপরও সেই একই অবস্থা। যথাযথভাবে নামাযা আদায়ের জন্য তিনি সারারাত ধরে এশার নামাজ পড়লেন। কিন্তু তবুও তার আত্নতুষ্টি এল না। হতাশ হয়ে তিনি ভাবলেন, যেমন তিনি, তেমনি তাঁর নামাজও। ওটা কি করে ভালো হবে? তখন তিনি আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে বললেন, নামাজনিষ্ঠ দাস হবার বহু চেষ্টা করলাম কিন্তু সব বৃথা গেল। এখন আমি আর কী করতে পারি? আপনি আমাকে আপনার বে-নামাজী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন।
হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর প্রভাতী সাধনা প্রত্যক্ষ করার জন্য একদিন এক ব্যক্তি তাঁর কাছে থাকল। সে দেখল, ‘আল্লাহ্’ বলে খুব জোরে চীৎকার করে ওঠে তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। তাতে তাঁর মাথায় ভীষণ চোট লাগল। এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আল্লাহ্র আরশের কাছাকাছি গিয়ে আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ্ কোথায়? তখন উত্তর হল, দুনিয়ায় বসবাসকারী মানুষের ভয়ার্ত ও ব্যথিত হৃদয়ের মধ্যে খোঁজ কর। অতঃপর আমি যখন তাঁর নিকটবর্তী হলাম, তখন আমাকে জিজ্ঞেস করা হল, তুমি কী চাও বল?
আমি বললাম, যা কিছু হয় দিন। তখন বলা হয়, আমার স্থায়ী নৈকট্য লাভ করতে হলে নিজেকে বিলীন করে দাও। আমি আবার বললাম, কিছুটা বরকত ও ফয়েজ হাসিল ব্যতীত আমি এখান থেকে বিদায় হব না। তখন আবার জিজ্ঞেস করা হল, তুমি আর কী চাও বল। তখন আমি সমগ্র সৃষ্টির মাগফেরাত প্রার্থনা করলাম।
বলা হল, ভালো করে তাকিয়ে দেখ। আমি দেখলাম, প্রতিটি সৃষ্টির সঙ্গে তাঁর মুক্তির জন্য একজন করে সুপারিশকারী রয়েছে। কিন্তু আল্লাহ্ পাকের সর্বাধিক করুণা এসেছে আমার ওপরে। তখন আমি কিছুক্ষণ নীরব পর আবার বললাম, ইবলীসকেও ক্ষমা করুন।
এবার উত্তর হল, সে যে আগুনের তৈরী। আগুনের সঙ্গে আগুনেরই মিল, কিন্তু তুমি যে আগুন থেকে পরিত্রাণের চেষ্টা কর।
অতপর আল্লাহ্ আমার সামনে দু’টি বিশেষ প্রতিদান কিন্তু আমি তাঁর কোনটিই গ্রহণ করতে রাজি হলাম না। তখন আবার প্রশ্ন, তবে তুমি কী পেতে চাও বল। আমি উত্তর দিলাম, আমি কোন কিছুরই প্রত্যাশী নই। অপ্রত্যাশিতভাবে যা পাওয়া যাবে, আমি তাতেই খুশী।
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন