হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১
এক অন্তঃসত্ত্বা নারী যখনই কোন সন্দেহজনক খাদ্য গ্রহণ করতেন, তখনই অনুভব করতেন, তাঁর পেটের সন্তানটি অনবরত কাঁপছে। যতক্ষণ ঐ খাবার পেটে থাকবে, ততক্ষণ ধরে এই কাঁপুনি চলবে। শেষ পর্যন্ত মুখে আঙ্গুল পুরে বমি করে তাঁকে ঐ খাবার ফেলে দিতে হত। আর বাচ্চাটিও স্থির হয়ে যেত। মায়ের গর্ভে থেকেই ঐ শিশু বেলায়েত অর্জন করেন আল্লাহ্র এ এক অমূল্য সম্পদ।
যথাসমায়ে ঐ মহিমাণ্বিতা নারী এক মহাজ্যোতির্ময় শিশুর জননী হলেন। এই শিশুই হলেন সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ট তপস্বী হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ)।
বোস্তাম শহরে তাঁর জন্ম। পিতা ছিলেন এক ধর্মনিষ্ঠ মুসলমান। কিন্তু পিতামহ ছিলেন একজন মূর্তিপূজক। অতি অল্প বয়সে বায়েজীদ (রঃ) পিতৃহীন হন। কিন্তু জননী ছিলেন এক আলোকময়ী নারী। হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর মতো এক মহাতাপসকে গর্ভে ধারণ করার জন্য তাঁর মতো এক জননীর প্রয়োজন ছিল। পিতার অবর্তমানে তিনিই পুত্রকে আলোর পথে এগিয়ে দিলেন। তাঁকে ভর্তি করে দিলেন এক মাদ্রাসায়।
একদিন পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত পাঠ করলেন তিনি। ঐ আয়াতে ছিল- আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। সূরা লুকমানের আয়াত সেটি। তিনি তাঁর শিক্ষকের কাছে আয়াতটির মর্ম জেনে নিলেন। তাঁর মনে এক আলোড়ন সৃষ্টি হল। শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে তিনি বাড়ী ফিরলেন।
অসময়ে তাঁকে বাড়ী ফিরতে দেখে মা উৎকণ্ঠিত হলেন। কিন্তু বায়েজীদ (রঃ) বললেন, আমি পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্র নির্দেশ পাঠ করলাম যে, আল্লাহ্ ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। কিন্তু মা গো! আমি তো একসঙ্গে তা পারব না। তাই আমি আপনার কাছে ছুটে এসেছি। হয় আপনি আল্লাহ্র কাছ থেকে আমার দাবী ছাড়িয়ে নিন, না হয় আমার ব্যাপারে আপনার অধিকার আল্লাহ্র হাতে ছেড়ে দিন। আমিও মনে-প্রাণে একজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আত্ননিয়োগ করি।
পুত্রের কথায় জননীর হৃদয় আনন্দে উদ্বেল হল। তিনি পরম খুশিতে নিজের অধিকার ত্যাগ করে তাঁকে আল্লাহ্র হাতেই সোপর্দ করলেন।
জননীর এ আত্নত্যাগ বৃথা যায়নি। তাঁর এই ত্যাগের মহিমায় আল্লাহ্ তাঁর পুত্রকে উন্নত মর্যাদা দান করেন। আর পুত্রও তাঁর মহীয়সী জননীর প্রতি ভক্তি নিষ্ঠার বিজয়-বৈজয়ন্তী উড়িয়ে দিয়েছেন।
তখন অনেক রাত। মা বললেন, বাবা বায়েজীদ, আমাকে এক গ্লাস পানি দাও তো। বড় পিপাসা পেয়েছে। মায়ের জন্য পানি আনতে গিয়ে বায়েজীদ (রঃ) দেখেন, বাড়ীতে কোথাও এক ফোঁটা পানি নেই। তাহলে? ঐ রাতেই ছুটলেন নদী থেকে পানি আনতে। কিন্তু পানি এনে দেখলেন মা ঘুমিয়ে পড়েছেন। ঘুম থেকে জাগানো ঠিক হবে না। কিন্তু তাঁরও ঘুমানো চলবে না।