হযরত ফোজায়েল ইবনে ইয়াজ (রঃ)- পর্ব ৩
হযরত ফোজায়েল ইবনে ইয়াজ (রঃ)- পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অন্তরের এ আহ্বান আর তিরষ্কার বৃথা গেল না। আলোর জন্য তিনি আকুল হয়ে উঠলেন। সঙ্গে সঙ্গে মনে মনে তওবা করে চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত হলেন।
তাঁর এই পরিবর্তন কতখানি সচল, কিছুক্ষণ পরেই তা বোঝা গেল। ঐ পথে আর একদল বণিক এসে পড়ল। তাঁবুতে বসে তিনি তাদেরও কথাবার্তা শুনতে পেলেন। ভীত-সন্ত্রস্ত লোকগুলো বলাবলি করছে, এ পথে আসা মোটেই ঠিক হয়নি। কেননা, এ পথেই ইবনে ইয়াজের তাঁবু আছে। কথাগুলো কানে আসা মাত্র তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, হে বণিক দল! তোমরা ভয় পেয়ো না। তোমাদের জন্য সুখবর। দস্যু নেতা ফোজায়েলের জীবনধারা বদলে গেছে। সে তওবা করেছে। এখন তোমাদের কাছে থেকে সে নিজেই চলে যাচ্ছে।
দেখা গেল, সত্যিই আকুল ক্রন্দনে উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি দৌড় শুরু করলেন। বণিক দল বুঝল, যার ভয়ে তারা ভীত, তিনি আজ নিজেই ভীত হয়ে দস্যু জীবনের অন্তরালে চলে গেলেন।
পথে এক লোদের সঙ্গে তাঁর দেখা হল। তিনি তাঁকে খলীফার কাছে নিয়ে যাবার অনুরোধ করলেন। সে তাঁকে নিয়ে গেল খলীফার দরবারে। খলীফা তাঁর প্রতি খুবই ক্রদ্ধ ছিলেন। কোন দিন তাঁকে ধরতে পারলে চরম শাস্তি দেবেন, এমন সংকল্পও তাঁর ছিল। কিন্তু আজ তিনি দেখলেন, যে ফোজায়েলকে তিনি জানেন, এ সে নয়। এ এক অন্য মানুষ। আমূল পরিবর্তন হয়েছে তার। সুতরাং হাতের মুঠোয় পেয়েও তিনি তাঁকে ছেড়ে দিলেন। ফিরে যেতে বললেন নিজের দেশে।
নিজের দেশেই ফিরে এলেন ফোজায়েল ইবনে ইয়াজ (রঃ)। একদিন তাঁর আত্নীয়-স্বজনেরা বাড়ীর দরজায় একটি অস্ফুট ভাঙা স্বর শুনল। সে স্বর পরিচিত। কিন্তু অমন বিকৃত কেন? নিশ্চয়ই আহত হয়ে বাড়ী ফিরেছে। দ্রুত বাড়ির বাইরে এসে তারা জিজ্ঞেস করে, কোথায় আঘাত লাগল আপনার? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আঘাত লেগেছে। তবে সেটা শরীরে নয়, মনে। তাঁর মানসিক পরিবর্তন ধরা পড়ল একটু পরেই। বাড়ীতে ঢুকে তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, আমি মক্কা যেতে চাই। এ বিষয়ে তোমার মত কি? স্ত্রী বললেন, আমার নিজস্ব কোন মত নেই। আমি আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাই না। আপনি যেখানে যাবেন, আমিও সেখানে যাব। আপনার সেবা পরিচর্যাই আমার কাম্য।
স্ত্রীকে নিয়ে তিনি চলে গেলেন মক্কা শরীফে। আধাঁর থেকে আলোর ভুবনে। আধ্যাত্নিক জীবনে। শুরু হয়ে গেল মহাজীবনের সাধনা। আর এ সাধনা বৃথা গেল না। আল্লাহর আশীর্বাদ-পুষ্ট হয়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন এক প্রধান হাদীরূপে।
আর আলোর অভিসারে আকৃষ্ট হয়ে ছুটে আসতে লাগল অসংখ্য মানুষ।
বাগদাদ থেকে তাঁর আপন জনেরা এল তাঁকে দেখার জন্য। তিনি দেখা করলেন না। কিন্তু দেখা না করে তারও মক্কা ছেড়ে গেল না। অবশেষে একদিন তিনি তাঁর বাড়ীর ছাদে দাঁড়িয়ে তাদের বললেন, আল্লাহ তোমাদের আলস্য আর উদাসীনতা দূর করে দিন। আল্লাহর কাছে এই আমার প্রার্থনা। তোমরা দেশে ফিরে গিয়ে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হও। এর বেশী আর কিছু বলতে আমি রাজি নই।
অত্যন্ত হতাশ হয়ে আত্নীয়-স্বজনেরা ফিরে গেল।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া