হযরত ফোজায়েল ইবনে ইয়াজ (রঃ)- পর্ব ১

আদিগন্ত বিস্তৃত বিশাল বালুময় প্রান্তর। আরব মরুভূমি। মরুপথে চলেছে এক বাণিজ্য কাফেলা। খুব সাবধান, সতর্ক হয়ে। কখন কাফেলার ওপর দস্যুদল হানা দেয়। বাণিজ্য যাত্রীরা প্রতি মুহূর্তে সজাগ সচেতন।

হঠাৎ দস্যুকণ্ঠ ভেসে এল মরূর বাতাসে। উপায় নেই। লুটেরার দল ঝাঁপিয়ে পড়ল বলে। এক বণিকের সঙ্গে আছে অনেক টাকাকড়ি। দস্যুদের হাতে পড়লে সব যাবে। তাই সে চঞ্চল হয়ে উঠল। কোথাও যদি টাকাগুলো লুকিয়ে রাখা যায় তাহলে খুব ভালো হয়। ব্যস্ত হয়ে সে এদিকে-ওদিকে ছুটে বেড়ায়।

আর নজরে পড়ে একটি তাঁবু। ত্রস্ত পায়ে সে এগিয়ে গেল তাঁবুর দিকে। দেখল, একটি লোক নিবিষ্ট-চিত্তে নামাজ পড়ছেন, তাঁর পরনে চটের পোশাক। মাথায় পশমী টুপি। গলায় বিশাল জপ-মালা। তাঁবুর ভেতরে উঁকি মেরে সে দেখে, নামাজ শেষে এখন তিনি তসবীহ জপ করছেন।

খুশীতে ভরে উঠল তার মন। ঠিক জায়গায় সে এসেছে। উপযুক্ত লোক খুঁজে পেয়েছে। এই দরবেশের কাছেই দিব্যি সে তার টাকাকড়ি লুকিয়ে রাখতে পারে। অতএব, সে ঢুকে পড়ে তাঁবুর ভেতর। আর টাকাগুলি লুকিয়ে রাখার জন্য দরবেশকে অনুরোধ করে। তিনি তাকে টাকা রাখার একটি জায়গা দেখিয়ে দিলেন।

কিছুক্ষণ পর লুটতরাজ শেষ। বাণিজ্য যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে দস্যুরা উধাও। ঐ বণিক এবার তার টাকা ফিরিয়ে নেবার জন্য আবার তাঁবুতে আসলেন। আর এসে যা দেখলেন, তাতে তার প্রাণ উড়ে যায়। এবার দরবেশ আর একা নন। এই মাত্র যারা বাণিজ্য কাফেলা লুট করল, সেই দস্যুরাই তাঁবুর ভেতরে বসে লুণ্ঠিত মালের ভাগ-বাঁটোয়ারা করছে।

তার বুঝতে দেরী হল না যে, যার জিম্মায় সে টাকা রেখে গিয়েছে আসলে সে এক দস্যু। দরবেশ সেজে ডাকাত দলের নেতৃত্ব দেয়। তার অনুশোচনার আর অন্ত রইল না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সে এই সব কথা ভাবছে, হঠাৎ দস্যু সর্দার তাকে দেখে ফেললেন। বললেন, তুমি এখানে কি জন্য এসেছো?

সে সাহসভরে বলল, আমি আপনার হেফাজতে টাকা রেখেছিলাম। সেগুলো নিতে এসেছি।

নিয়ে যাও, খুব সহজভাবে বললেন তিনি।

বণিক যেখানে টাকা রেখেছিল সেখান থেকে সব টাকা তুলে নিয়ে চলে গেল।

কিন্তু বড় ধাঁধায় পড়ে গেল বেচারা।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ফোজায়েল ইবনে ইয়াজ (রঃ)- পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।