হযরত দাউদ তায়ী (রঃ) – ৩য় পর্ব
হযরত দাউদ তায়ী (রঃ) – ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাগদাদ শহরের লোক তাঁকে বড্ড জ্বালাতে শুরু করে। অতিষ্ঠ হয়ে তিনি আল্লাহর দরবারে বলেন, দয়াময়, আপনি আমার পরনের কাপড়খানি নিয়ে নিন। তাহলে আমি আর জামায়াতে অংশ নিতে পারব না আর মানুষের সঙ্গেও আমার দেখা-সাক্ষাত হবে না। আল্লাহ তাঁর প্রার্থনা পূরণ করেন। একদিন সত্যিই তাঁর পরনের কাপড় হারিয়ে যায়। তখন গভীর নির্জনে এবাদত-বন্দেগী করার অঢেল সুযোগ এসে যায়।
হযরত দাউদ তায়ী (রঃ) ছিলেন চিন্তাশীল, বিষণ্ণ মানুষ, কোন সময়ে তাঁকে প্রসন্ন দেখাতে না। তিনি বলতেন, প্রতি মুহূর্তে মনে যার আল্লাহর ভয়, সে প্রসন্ন থাকবে কি করে? কিন্তু একবার দরবেশ তাঁকে প্রফুল্ল দেখে কারণ জিজ্ঞেস করেন। তিনি চমৎকার জবাব দেন। বললেন, আল্লাহ প্রেমের শরাব পান করে নেশাচ্ছন্ন হয়ে তিনি আনন্দ অনুভব করছেন।
ঘটনাচক্রে তিনি যদি লোকজনের ভিড়ের মধ্যে পড়ে যেতেন, তাহলে ঐ সৈন্য আসছে, সৈন্য আসছে, বলতে বলতে দৌড়ে পালাতেন। তারা জিজ্ঞেস করত, কার সৈন্য আসছে? তিনি বলতেন, কবরস্থানের মৃত্যুদের সৈন্য।
তিনি প্রচুর অমূল্য উপদেশ দিয়ে গেছেন। যেমন-
(১) দুনিয়া থেকে রোজা রাখ আর পরকালে গিয়ে ইফতার কর।
(২) কু-বচন থেকে বিরত থাক।
(৩) সৃষ্টি থেকে দূরে থাক।
(৫) মৃত্যুকে ঈদের উৎসব মনে কর। আর বাঘ দেখে মানুষ যেমন পালিয়ে যায়, তেমনি দুনিয়াদার লোকের থেকে পালিয়ে যাও।
(৫) দুনিয়াদার লোক থেকে মন উঠিয়ে দাও। জিবকে নিয়ন্ত্রণ কর। লোক-সংসর্গ থেকে একা বাস কর। বিষয়ী লোকেরা যেমন সুখ-শান্তির জন্য দুনিয়াকে ভালোবাসে, তেমনি ধর্মকর্মের জন্য তুমিও দুনিয়াকে পছন্দ কর।
(৭) মৃত ব্যক্তিগণ তোমার জন্য কবরে অপেক্ষা করছে।
(৮) যে ব্যক্তি অপরকে তওবা করায় ও সৎ কাজের নির্দেশ দেয়, অথচ নিজে তা পালন করে না, তার উপমা সেই শিকারীর মতো যে নিজে শিকার করে অথচ অন্য লোক কাবাব খায়।
(৯) তুমি যদি শান্তিকামী হও, তাহলে দুনিয়ার কাছ থেকে বিদায় নাও। যদি পরকালের সম্মান চাও তবে ইহকালের আহমিকা ত্যাগ কর।
প্রখ্যাত সাধক হযরত ফোজায়েল ইবনে ইয়াজ (রঃ) তাঁর সঙ্গে দুবার দেখা করেন। একবার তিনি তাঁকে ভাঙ্গা ছাদের নিচে দেখে বলেছিলেন এর নিচে বসা উচিত নয়, কেননা এটি ভেঙ্গে পড়ার
উপক্রম। হযরত দাউদ (রঃ) বলেন, আমি অবশ্য বিশ বছর ধরে এই ছাদের তলায় আছি। কিন্তু কখনও ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখিনি।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া