হযরত দাউদ তায়ী (রঃ) – ১ম পর্ব
কে যেন কাঁদছে। আর কাঁদতে কাঁদতে বলছে, তোমার কি এমন কোন মুখ ছিল যে তার ওপর মৃত্তিকা মিশ্রিত হয়নি এবং তোমার কি এমন চক্ষু ছিল জমিনে নিক্ষিপ্ত হয়নি।
বিচিত্র কান্না। আরও বিচিত্র কথাগুলো। কথাগুলির মর্ম অনুধাবন করতে পারলেন না জনৈক শ্রোতা। চলে এলেন হযরত আবু হানিফা (রঃ)-এর দরবারে। আবু হানিফা (রঃ) দেখলেন, মর্মপীড়ার ছাপ রয়েছে তার সারা মুখ জুড়ে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে তোমরা? তুমি এত বিমর্ষ কেন?
তিনি জানালেন, দুনিয়া সম্বন্ধে তাঁর আর কোন উৎসাহ নেই। তার মনের মধ্যে যা চলছে, তা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কোন বইয়ে তিনি তার অর্থ খুঁজে পাননি। কোন মানুষের সংসর্গ থেকে দূরে থাকেন। বাড়ীর মধ্যে নিরিবিলিতে একাগ্র সাধনার মগ্ন হন।
ইমাম আজমের নির্দেশে তিনি তাই করলেন। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তিনি বাড়ীর নির্জন পরিবেশ নিরিবিলি ধ্যান-এবাদতে নিমগ্ন থাকলেন। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন হযরত আবু হানিফা (রঃ) তাঁর নিকট হাজির হয়ে বললেন, আর এভাবে থাকার দরকার নেই। তুমি এখন অভিজ্ঞ শিক্ষগণের কাছে গিয়ে মারেফাত বিদ্যা শিক্ষা কর।
তদানুযায়ী তিনি প্রায় এক বছর ধরে ইমাম মুর্শিদগণের দরবারে যাওয়া-আসা করতেন। অবশ্য তিনি নিজে কিছুই বলতেন না। তাঁরা যা বলতেন চুপচাপ বসে কথা শুনে যেতেন। এভাবে এক বছর পূর্ণ হলে তাঁর মনে হল, যেন ত্রিশ বছরের সাধনা সফল হয়েছে। তারপর তিনি যান হযরত হাবীব রাযী (রঃ)-এর কাছে। তাঁর সাহচর্যে থেকে তিনি এমন এক অবস্থায় উপনীত হন যে, বাইরের বইপত্র তাঁর কাছে গৌণ মনে হয়। সব বই পানিতে নিক্ষেপ করে তিনি আবার নির্জন সাধনার নিমগ্ন হন। আর আল্লাহর রহমতে সিদ্ধিলাভ করেন।
আত্ম-সমর্পিত এই নীরব সাধকের নাম হযরত দাউদ তায়ী (রঃ)। সাধনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন নেতৃস্থানীয়। বিশেষতঃ ফেকাহশাস্ত্রে তাঁর স্থান ছিল শীর্ষে। ইমাম আজম আবু হানিফা (রঃ)-এর তিনি সুযোগ্য শিষ্য। দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে তিনি তাঁর কাছ থেকে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করেন। হযরত ফোজায়েল ইবনে ইয়াজ ও হযরত আদহাম (রঃ)-এর সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাত হয়েছিল। আর আগেই বলা হয়েছে, হযরত হাবীব রাযী (রঃ) ছিলেন তাঁর মারেফাতের মুর্শিদ।
পিতার কাছ থেকে উত্তারাধিকার সূত্রে তিনি বিশ দেরহাম পান। আর বিশ বছর ধরে তিনি তা নিজের কাছে জামা রাখেন। তিনি বলতেন, এগুলো রেখেছি আমার এবাদতের একাগ্রতা অক্ষুণ্ণ রাখতে। একটি মুহূর্তে তিনি নষ্ট করতেন না। এমনকি খেতে বসে রুটি ইত্যাদি না চিবিয়ে পানিতে ভিজিয়ে শরবতের মতো পান করতেন। বলতেন, রুটি চিবিয়ে খেতে যে সময় ব্যয় হয়, তাতে পবিত্র কোরআনের অনন্ত পঞ্চাশটি আয়াত পাঠ করা যায়।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া