হযরত দাউদ তায়ী (রঃ) – শেষ পর্ব
হযরত দাউদ তায়ী (রঃ) – ৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) হযরত তায়ী (রঃ)-এর এক অনুচরকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, সংসার খরচের জন্য কী পরিমাণ টাকা তাঁর আছে। তিনি বললেন, দশ দেরহাম রূপোর টাকা এখন হাতে আছে। আর দৈনিক এক দেরহাম খরচ হয়। এরপর একদিন ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) মেহরাবে পিঠ লাগিয়ে মসজিদে বসে আছেন। হঠাৎ বলে উঠলেন, আজ দাউদ তায়ী (রঃ) ধরাধাম ত্যাগ করেছেন। পরে জানা গেল, তাঁর অনুমান সত্য। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, এখানে বসে তিনি কী করে এ খবর পেলেন? ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) বললেন, হিসাব করে দেখলাম, তাঁর দৈনিক খরচের টাকা ফুরিয়ে গেছে। আর আমি ভালো করেই জানি, হযরত তায়ী (রঃ)-এর প্রার্থনা কখনও বৃথা যায় না।
ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) দাউদ-জননীকে জিজ্ঞেস করে তাঁর ওফাতের বিবরণ শুনলেন। দাউদ তায়ী (রঃ) সারারাত ধরে নামাজ পড়েছেন। শেষ হলে তাঁর সেই যে সেজদায় গেলেন, আর উঠলেন না। অনেকক্ষণ পর ফজরের সময় হলে তাঁর মা তাঁকে নামাজের সময় হয়েছে বলে জাগাতে গেলেন। কিন্তু ডাকাডাকির পরও তাঁর মাথা যখন মাটি যখন মাটি থেকে উঠল না, তখন তিনি তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন, তিনি আর নেই। সবাইকে ছেড়ে নিঃশব্দে তাঁর প্রভুর কাছে ফিরে গেছেন।
জনৈক সাধক বলেন, দারুণ গরমে রোদে বসে তিনি একদিন পাক কোরআন তিলাওয়াত করছিলেন। তোরণের নিচে ঐ জায়গায় তিনি রাতেও শুতেন। বালিশের বদলে মাথার তলায় রাখতেন একখানা ইট। মুমুর্ষ অবস্থায় তাঁকে এভাবে কোরআন পড়তে দেখে সাধক বলেন, হুজুর, আপনি রাজি হলে আপনাকে একটু আরামদায়ক জায়গায় নিয়ে যেতাম। তাতে আপনার কষ্ট কিছুটা লাঘব হত। তিনি উত্তর দিলেন, নফসের আরাম ও শান্তির জন্য কোন কিছু করা আমি লজ্জাজনক বলে মনে করি। আমি এখনও প্রবৃত্তির কাছে কোনদিন পরান্ত হইনি। এই শেষ সময়েও আমি তার কাছে পরাজিত হতে চাই না।
বিদায় মুহূর্ত আসন্ন হয়ে উঠলে তিনি অসিয়ত করে গেলেন, মৃত্যুর পর তাঁকে যেন তাঁর ঐ ভাঙ্গা দেওয়ালের কাছেই দাফন করা হয়। যাতে কবরের কাছে কোনদিন বেশী লোকের সমাগম না হয়।
যে রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, সে রাতে বহু দূরের এক দরবেশ স্বপ্নে দেখেন, হযরত দাউদ তায়ী (রঃ) যেন সশরীরে শূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছেন। ঘুম ভাঙার পর স্বপ্নের এ বিবরণ নিবেদন করার জন্য তিনি দ্রুত ছুটে চললেন, তাঁর বাড়ীর দিকে। কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখলেন, সব শেষ।
শোনা যায়, তাঁর মৃত্যুর পর শূন্যে একটা শব্দ শোনা গেল, দাউদ তাঁর গন্তব্যস্থলে পৌঁছেছেন। আর আল্লাহ তাঁর প্রতি খুব খুশী হয়েছেন। সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া