হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-৪র্থ পর্ব

হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

বাদশাহের নির্দেশ সঙ্গে সঙ্গে পালিত হল। অনুচরগণ বাঘের সামনে মাংসগুলো দিয়ে চলে আসল। কিন্তু বাঘ হযরত জারজীস (আঃ) এর মাংস ভক্ষণ করা দূরের কথা, মাংসগুলো বহু ইজ্জত ও সম্মানের সাথে নিজের পিঠের উপর উঠিয়ে রাখল। এ সময় আল্লাহ্‌ পাকের হুকুমে এক ফিরিস্তা হাজির হয়ে উক্ত মাংসের মধ্যে হযরত জারজীস (আঃ) এর রূহ প্রবেশ করিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে হযরত জারজীস (আঃ) জীবিত হয়ে অবিকল পূর্বরূপ ধারণ করে বাঘের পিঠে বসে রইলেন।

ওদিকে বাদশাহ বহুদিন পর আজ হযরত জারজীস (আঃ) এর ঝামেলা মিটে গেছে মনে করে অনেকটা নিরুদ্বিগ্ন ও নিশ্চিন্ত মনে শাহী দরবারের কাজ কর্ম করতেছিল। ঠিক সে মুহুর্তে হযরত জারজীস (আঃ) উল্লেখিত বাঘের পিঠে চড়েই শাহী দরবারের দরজায় গিয়ে উপস্থিত হলেন। এ দৃশ্য দেখে বাদশাহ এবং তাঁর দরবারের প্রত্যেকটি লোক ভয়ে কাঁপতে লাগল। তাঁরা মনে করল যে, এবার হযরত জারজীস (আঃ) কাওকেই রেহাই দিবেন না। এ বাঘ দ্বারাই তিনি সকলের প্রাণ সংহার করবেন। আসলে হযরত জারজীস (আঃ) কিছুই করলেন না। শুধু একবার বললেন, হে বাদশাহ দাদিয়ান! আমার আল্লাহ্‌ পাকের শক্তির কথা চিন্তা করে এখনি আল্লাহ্‌ পাকের পথে আস। এ কথা বলে তিনি আবার চলে গেলেন।

পাপিষ্ঠ বাদশাহ ও তার পরিষদবর্গের লোকদের এবারও সৎবুদ্ধির উদর হল না। তারা বলাবলি করতে লাগল যে, দেখা যায় হযরত জারজীস (আঃ) এক ভয়ংকর যাদুকর। সে যাদুর জোরেই এভাবে তার প্রাণ রক্ষা করতেছে। অতএব তাঁকে জব্দ করতে হলে তদপেক্ষা বড় যাদুকর দ্বারা কার্যসিদ্ধি করতে হবে।

তখন রাজ্যের যত প্রধান ও সেরা যাদুকর ছিল, তাঁদের সকলকে শাহী দরবারে হাজির করে তাঁদেরকে বলা হল, তোমরা যদি যাদুকর জারজীসকে যাদুর সাহায্যে ধ্বংস করতে পার, তবে তোমাদেরকে ধারণাতীত পুরস্কার প্রদান করা হবে।

যাদুকরগণ বলল, জারজীস আর কি যাদু শিখেছে? আমরা তাঁকে যাদুর দ্বারা ধ্বংস করে দিব। বাদশাহর চিন্তার কোন কারণ নেই। বাদশাহ বলল, তোমাদের কথায় আমার আস্থা আসতেছে না। তোমাদের যাদুর শক্তি কিরূপ আমাকে তার কিছুটা নমুনা দেখাও।

সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মধ্যে যে প্রধান যাদুকর, সে একটি বস্তু দ্বারা দুটি বিরাট অজগর সাপ সৃষ্টি করল, অজগর সাপ দুটি ফনা উঁচু করে এদিকে সেদিকে ছুটাছুটি শুরু করে দিল। একটু পরে সাপ দুটিকে ফুঁক দেয়া মাত্র তা দুটি মোটা তাজা বলদ গরুতে পরিণত হল। ঐ গরু দুটি দ্বারা একখণ্ড জমি চাষ করে তাতে গমের বীজ বপন করা হল। সে সঙ্গে তাতে গাছ হয়ে ফসল ফলল এবং তা সাথে সাথে পেকে গেল। তখনই ফসল কেটে মলন নিয়ে ঐ গম পিষে আটা করা হল। ঐ আটা দ্বারা রুটি তৈরি করে বাদশাহকে খাওয়ান হল। বাদশাহ এ সব ঘটনা স্বয়ং চোখে প্রত্যক্ষ করল। এ অভূতপূর্ব বিস্ময়কর ঘটনা দেখে বাদশাহ এবং তার লোকজন সকলেই ভাবল, এ অদ্ভুত ক্ষমতাশালী যাদুকরের হাতে আর হযরত জারজীস (আঃ) এর রক্ষা নেই। এবার তার যাদুর কেরামতি শেষ হয়ে যাবে। খুশির আধিক্যে বাদশাহ যাদুকরের মূল কাজ করার পূর্বেই শুধু নমুনা দেখে তাঁকে বহু মূল্যবান দ্রব্য পুরস্কার দিল এবং বলল, তোমার আসল পুরস্কার ঠিক আছে। জারজীসকে ধ্বংস করার পর তা প্রদান করব।

বাদশাহ যাদুকরকে বলল, এখন তুমি তোমার মূল কাজ আরম্ভ কর। যাদুর দ্বারা জারজীসকে কুকুর বানিয়ে ফেল। আর বাজারের কুকুরগুলো এসে একসাথে তাঁকে কতক্ষণ কামড়িয়ে অস্থির করে ফেলুক। অতঃপর তাঁকে হত্যা করে ফেলবে।

হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।