হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ৩

হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

হযরত জাফর (রাঃ) বলিলেন, আপনি সালাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিয়াছেন, (সে বিষয়ে আমাদের বক্তব্য এই যে) রাসূল (সাঃ) আমাদিগকে বলিয়াছেন যে, বেহেশতীদের সালাম আসসালামু আলাইকুম হইব। তিনি আমাদিগকে এইরূপ সালাম করিতে আদেশ করিয়াছেন। অতএব আপনাকে সেইভাবে সালাম করিয়াছি যেভাবে আমরা পরস্পর সালাম করিয়া থাকি।

বাকি রহিল হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) সালাম সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস। (তাঁহার ব্যাপারে আমাদের বিশ্বাস হইল,) তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁহার রাসূল। তিনি আল্লাহর সেই কালেমা যাহা তিনি মারইয়ামের নিকট প্রেরণ করিয়াছেন এবং তাঁহার রূহ ও পুরুষের সংস্পর্শ হইতে নিংসঙ্গ জীবন যাপনকারিণী (মারইয়াম)এর পুত্র। নাজাশী একটি কাঠি হাতে লইয়া বলিল, আল্লাহর কসম হযরত ঈসা (আঃ) ইবনে মারইয়াম সম্পর্কে যাহা বলা হইয়াছে, তিনি তাহা অপেক্ষা এই কাঠি পরিমাণও অতিরঞ্জিত নহেন।

নাজাশীর এই কথা শুনিয়া হাবশার উচ্চপদস্থ সর্দারগণ বলিল, আল্লাহর কসম, হাবশার জনগণ যদি আপনার এই মন্তব্য শুনিতে পায় তবে তাহারা আপনাকে রাজ্যচ্যুত করিয়া দিবে। নাজাশী বলিল, আল্লাহর কসম, আমি কখনও হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে ইহা অপেক্ষা অধিক কিছু বলিব না। আল্লাহ তায়ালা আমাকে পুনঃরাজত্ব দান করিতে লোকদের কথা শুনেন নাই, তবে আমি কেন আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে তাহাদের কথা শুনিব? এইরূপ কাজ হইতে আমি আল্লাহর পানাহ চাহিতেছি।

ইমাম আহমাদ (রহঃ) রাসূল (সাঃ)-এর স্ত্রী হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) হইতে দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। উক্ত হাদিসে এইরূপ বর্ণিত হইয়াছে যে, হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, অতঃপর নাজাশী রাসূল (সাঃ)-এর সাহাবা (রাঃ)দেরকে পাঠাইল। নাজাশীর দূত আসিয়া সংবাদ দিবার পর তাহারা একত্র হইয়া পরামর্শ করিলেন যে, নাজাশীর নিকট যাওয়ার পর তোমরা এই ব্যক্তি (অর্থাৎ হযরত ঈসা (আঃ)) সম্পর্কে কি বলিবে?

তাহারা এই ব্যাপারে একমত হইয়া বলিলেন, আমরা তাহাই বলিব যাহা রাসূল (সাঃ) আমাদিগকে শিক্ষা দিয়াছেন এবং বলিবার আদেশ করিয়াছেন। ইহাতে যাহা হয় হইবে। মুসলমানগণ দরবারে পৌঁছিয়া দেখিলেন, নাজাশী তাহাদের পূর্বেই বড় বড় পাদ্রীগণকে ডাকাইয়া আনিয়াছে। পাদ্রীগণ নিজেদের কিতাবাদী খুলিয়া নাজাশীর চতুর্দিকে বসিয়া আছে। নাজাশী মুসলমানদিগকে প্রশ্ন করিল, তোমরা যে দ্বীনের কারণে আপন

কওমকে পরিত্যাগ করিয়াছ, তাহা কি? তোমরা আমার ধর্মও গ্রহণ কর নাই অথবা বর্তমান প্রচলিত অন্য কোন ধর্মও গ্রহণ কর নাই। হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, নাজাশীর সহিত যিনি কথা বলিয়াছিলেন, তিনি ছিলেন হযরত জাফর ইবনে আবি তালিব (রাঃ)। তিনি বলিলেন, হে বাদশাহ, আমরা অন্ধ ছিলাম, মূর্তিপূজা করিতাম, মৃত পশুর গোশত খাইতাম, অশ্লীল কাজ করিতাম, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করিতাম, প্রতিবেশীর সহিত অসদ্ব্যবহার করিতাম, আমাদের মধ্যে শক্তিশালী দুর্বলকে ভক্ষণ করিত।

এরূপ চরম অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা আমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তিকে রাসূল হিসাবে আমাদের নিকট প্রেরণ করিলেন, যাঁহার বংশ পরিচয়, সত্যবাদীতা, আমানতদারী ও নিষ্পাপ চরিত্র সম্পর্কে আমরা পূর্ব হইতে অবগত ছিলাম। তিনি আমাদিগকে আল্লাহর প্রতি আহবান করিলেন যেন আমরা তাঁহাকে এক মানি, তাঁহার এবাদত করি এবং আমরা ও আমাদের বাপ দাদাগণ আল্লাহ ব্যতিত যে সকল পাথর ও মূর্তিপূজা করিতাম, তাহা পরিত্যাগ করি।

তিনি আমাদিগকে সত্য কথা বলা, আমানত রক্ষা করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করা, প্রতিবেশী সহিত সদ্ব্যবহার করার আদেশ করিয়াছেন এবং হারাম কাজ ও অন্যায়ভাবে হত্যা হইতে বিরত থাকিতে বলিয়াছেন। আমাদিগকে অশ্লীল কাজ, মিথ্যা সাক্ষ্যদান, এতীমের মাল ভক্ষণ ও নিষ্পাপ নারীদের উপর অপবাদ আরোপ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি আমাদিগকে আদেশ করিয়াছেন যেন আমরা আল্লাহর এবাদত করি এবং তাঁহার সহিত কোন জিনিসকে অংশীদার না করি, নামাজ কায়েম করিও যাকাত প্রদান করি।

সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা

হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।