হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর নবুয়াতী পরীক্ষা-পর্ব ৬
হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর নবুয়াতী পরীক্ষা-পর্ব ৫
জেলেদের এক কন্যা তার পিতার নিকট এ ঘটনা বলে লোকটির সাথে বিবাহ বসার আবেদন জানাল। পিতা বলল, সে আমাদের চাকর। তাঁর কোন ঘর বাড়ি নেই, কোথার লোক আমরা কিছুই জানি না। এমতাঅবস্থায় তাঁর নিকট তোমাকে বিবাহ দিতে তোমাকে সমুদ্র ভাসিয়ে দিব? এটা পিতার পক্ষে নিজ সন্তানের ক্ষেত্রে সম্ভবপর কাজ নয়। মেয়ে পিতার কথার প্রতিবাদ করে বলল, লোকটি তোমাদের চাকুরী করে বটে কিন্তু সে সাধারণ লোক নয়। নিশ্চয়ই সে একজন মহামানব। আমি তাকে সঠিক ভাবে চিনতে পেরেছি।
অতত্রব তুমি আমার আবদার পূরন কর। না হয় আমি আত্ন হত্যা করব। মেয়ের কঠিন আদবাদের সম্মুখে পিতা বাধ্য হয়ে তাঁর প্রস্তাবে রাজি হল। অতপর জেলে হযরত ছোলায়মান (আঃ) নিকট গমন করে বললেন, আমরা তোমার পরিচয় জানি না, তবে আমার মেয়ে তোমার সাথে বিবাহ বসার জন্য জোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এমতাঅবস্থায় আমি কি করতে পারি? হযরত ছোলায়মান (আঃ) বললেন, আজকে আমার কোন ঠিকানা নেই, ঘোর বাড়ি আত্নীয়-স্বজন কেউ নেই, আমি ভবঘুরে এক অসহায় ব্যক্তি।
আপনার কন্যাকে বিবাহ করে আমি কোথায় রাখব। আমি দৈনিক কি রুজি আয় করি তা ভাল ভাবে অবগত আছেন। অতএব আমি কিভাবে তাঁর ভোরণ-পোষণ করব। এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। জেলে বলল, বাবা! তোমার সব কিছু দেখে শুনেই তোমার সাথে সম্বন্ধ করতে রাজি হয়েছি। অতএব তোমার দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। মেয়ের বিবাহে নিকট কোন মহরানা দাবি করব না। তাছাড়া তুমি আমার কন্যাকে বিবাহ করলে তুমি হবে আমার পুত্র সমতুল্য।
অতএব তোমার ও মেয়ের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আমাদের জিম্মায় থাকবে। ওটা নিয়ে তোমাকে আদৌ ভাবতে হবে না।
হযরত ছোলায়মান (আঃ) এ কথা শুনে আর বাধা দিতে পারলেন না। তখন তিনি বিবাহে সম্মত হলেন। শুধু মাত্র একটি শর্ত আরোপ করে। তা হল মেয়েকে ইসলাম কবুল করতে হবে। এ শর্ত সাপেক্ষ ছোট এক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে জেলের মেয়ের সাথে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হল। শ্বশুর তাঁর প্রতি বিশেষ ভাবে নজর রাখত। মেয়ে জামাতাকে ভিন্নভাবে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল। হযরত ছোলায়মান (আঃ) শ্বশুরের সাথে দৈনিক মাছ ধরতে যেতেন। শ্বশুর তাদের প্রয়োজনীয় সব কিছু যোগান দিতেন।
এভাবে তাদের দিন গুজরান হতে লাগল। ওদিকে হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর উপবিষ্ট শকরা জীন রাজ্য শাসন করতে গিয়ে অনেক শরীয়ত গর্হিত কার্যকলাপের প্রবর্তন করল। তাঁর নিজ দানবীয় চরিত্রের রুপ অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ হয়ে পড়ল। যাতে দরবারে সভাসদ বৃন্দের মনে কিছু সন্দেহের সৃষ্টি হল। দাস-দাসী, চাকর –বাকর সকলের নিকট রাজার চরিত্র ও আচার ব্যবহার সম্বন্ধে এক জটিল সন্দেহের সৃষ্টি হল। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী আসফের নিকট নকল ছোলায়মান সাজার অনেক প্রামান জুটে গেল।
প্রধানমন্ত্রী তখন অন্দর মহলে গিয়ে শাহান শাহের বেগমদের নিকট শাহান শাহের খবর জিজ্ঞেস করলেন। তারা উত্তর দিল শাহান শাহের আজ চল্লিশ দিন যাবৎ অন্দর মহলে আসেন না। তিনি কোথায়? কি হয়েছে? প্রধানমন্ত্রী বললেন, তিনি একটু বাইরে আছেন শীঘ্রই ফিরে আসবে। প্রধানমন্ত্রী আসফ বিভিন্ন দিক আরো খোঁজ-খবর নিলেন। তাতে তিনি নিশ্চিত হলেন যে কোন এক শক্তিশালী দানব যাদুর কৌশলে শাহান শাহকে সিংহাসনচ্যুত করে নিজে শাহান শাহের রূপ ধরে সিংহাসনে সমাহীন হয়েছে। এ ঘটনাটি কোথা থেকে কিভাবে ঘটল তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি দাসীর সাথে সাক্ষাৎ করলেন যার নিকট শাহান শাহ আংটি রেখে পায়খানায় যেতেন। সে দাসি জানাল, কিছু দিন পূর্বে একদা শাহান শাহ আমার নিকট আংটি রেখে পায়খানায় যান এবং অতি সত্বর মধ্যে ফিরে এসে আংটি নিয়ে যান। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি অন্যান্য দিন ফিরেন না। তবুও আমার কিছু করার ছিল না। আমি তাকে আংটি দিয়ে দেই। কিছু সময় পরে শাহান শাহের অবিকল চেহরার একজন এসে আমার নিকট আংটি দাবি করায় আমি আশ্চার্য হয়ে যাই। একটু পূর্বেই তো শাহান শান আংটি নিয়ে গেল। ইনি আবার কে?