হযরত ছালেহ (আঃ)-এর মুজিযা-১ম পর্ব
হযরত ছালেহ (আঃ) যৌবনকাল থেকেই স্বীয় সম্প্রদায়কে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। এ কাজেই তিনি বার্ধক্যের দ্বারে উপনীত হন। তাঁর বারংবার পীড়াপীড়িতে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা স্থির করলো যে, তাঁর কাছে এমন একটা দাবি করতে হবে যা পূরণ করতে তিনি অক্ষম হয়ে পড়বেন এবং আমরা তাঁর বিরুদ্ধে জয়লাভ করবো। সে মতে তারা দাবি করলো যে, আপনি যদি বাস্তবিকই আল্লাহ তায়ালার পয়গম্বর হন তবে আমাদের কাতেবা পাহাড়ের ভিতর থেকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী ও স্বাস্থ্যবর্তী উষ্ট্রি বের করে দেখান।
হযরত ছালেহ (আঃ) প্রথমে তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলেন যে, যদি আমার আল্লাহ তায়ালা তোমাদের দাবী পূরণ করে দেন, তবে তোমরা আমার প্রতি ও আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে কি না? তারা যখন সবাই এই মর্মে অঙ্গীকার করলো যে, আমরা অবশ্যই ঈমান আনবো, তখন হযরত ছালেহ (আঃ) দুরাকাত ছালাতুল হাজত পড়ে আল্লাহ তায়ালার নিকট দুয়া করলেন, হে পরওয়ার দেগার! আপনার জন্য কোন কজই কঠিন না। মেহেরবানী করে তাদের দাবী পুরণ করে দিন। দুয়া করার সাথে সাথে পাহাড়ের গায়ে স্পন্দন দেখা দিল এবং একটি বিরাট প্রস্তর খণ্ড বিস্ফোরিত হয়ে তাঁর ভিতর থেকে দাবী অনুরূপ উষ্ট্রী বের হয়ে এলো।
হযরত ছালেহ (আঃ)-এর বিস্ময়কর মুজিযা দেখে কিছু লোক তৎক্ষণাৎ ঈমান এনে মুসলমান হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করল, কিন্তু দেবদেবীর বিশেষ পূজারী ও মূর্তিপূজার ঠাকুর ধরণের কিছু সর্দার তাদেরকে ইসলাম গ্রহণে বাঁধা দিল। হযরত ছালেহ (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়কে অঙ্গীকার ভঙ্গ করতে দেখে শঙ্কিত হলেন যে, এদের উপর আযাব এসে যেতে পারে। তাই পয়গাম্বর সুলভ দয়া প্রকাশ করে বলেছেন- এ উষ্ট্রির দেখাশুনা কর। একে কোনরূপ কষ্ট দিও না। এভাবে হয়তো তোমরা আযাব থেকে বেঁচে যেতে পার। এর অন্যথা হলে তোমরা সাথে সাথে আযাবে পতিত হবে। সে জনপদের সব মানুষ এবং জীবজন্তু যে কুপ থেকে পানি পান করত উষ্ট্রি তার সব পানি পান করে ফেলতো। হযরত ছালেহ (আঃ) তাদের জন্য পানির পালা নির্ধারণ করে দিলেন যে, একদিন উষ্ট্রি পানি পান করবে এবং অন্য দিন জনপদের অধিবাসীরা।
সুতরাং এ উষ্ট্রির কারণে সামুদ জাতির বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। ফলে তারা এর ধ্বংস কামনা করত। কিন্তু আযাবের ভয়ে নিজেরা একে ধ্বংস করতে উদ্যোগী হত না। যে সর্ববৃহৎ প্রতারণার মাধ্যমে শয়তান মানুষের বুদ্ধি জ্ঞান ও চেতনাকে বিলুপ্ত করে দেয়, তা হচ্ছে নারীর প্রলোভন সুতরাং সম্প্রদায়ের দুজন সুন্দরী নারী বাজী রাখলো যে, যে ব্যক্তি উষ্ট্রিকে হত্যা করতে পারবে, সে আমাদের এবং আমাদের কন্যাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারবে।
সম্প্রদায়ের দুজন লোক যুবক মিছদা ও কাছার এ নেশায় মত্ত হয়ে উষ্ট্রিকে হত্যা করার জন্য বেরিয়ে পড়লো। তারা উষ্ট্রির পথে একটি বড় প্রস্তর খণ্ডের আড়লে আত্মগোপন করে বসে রইলো। উষ্ট্রি সামনে আসতেই মিছদা তার প্রতি তীর নিক্ষেপ করলো এবং কাছার তরবারীর আঘাতে তার পা কেটে হত্যা করলো।