হযরত ছালেহ (আঃ)-এর মুজিযা-শেষ পর্ব
উষ্ট্রি হত্যার ঘটনা জানার পর হযরত ছালেহ (আঃ) আল্লাহ তায়ালার আযাবের কথা জানিয়ে দিলেন। তিনি আযাবের লক্ষণ বলে দিলেন, তাহলো এখন থেকে তোমাদের জীবনকাল মাত্র তিন দিন অবশিষ্ট রয়েছে। আগামী কাল বৃহস্পতিবার তোমাদের নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবার মুখমণ্ডল হলদে ফ্যাকাশে হয়ে যাবে। তারপর পরশু শুক্রবার সবার মুখমণ্ডল গাঢ় লাল বর্ণ ধারণ করবে। তারপর শনিবার দিন। হতভাগ্য জাতি এ কথা শুনে ক্ষমা প্রার্থনার পরিবর্তে স্বয়ং হযরত ছালেহ (আঃ)-কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল। এ সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছু লোক রাতের বেলা হযরত ছালেহ (আঃ)-কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তাঁর গৃহপানে রওয়ানা হল। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা পথিমধ্যেই প্রস্তর বর্ষণে তাদেরকে ধ্বংস করে দিলেন। যার কথা আয়াত নাযিল করে আল্লাহ তায়ালা কালামে পাকের মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন।
যাইহোক, তিন দিনের মধ্যে সব লক্ষণ প্রকাশ পেল, তখন সবাই নিরাশ হয়ে আক্ষেপ করতে লাগলো, কোন দিন থেকে কিভাবে আযাব আসে। রবিবার ভোরে ভীষণ ভূমিকম্প শুরু হল এবং উপর থেকে বিরাট ও ভয়াবহ আওয়াজ শুনা গেল। ফলে সকলে একযোগে বসা অবস্থায় অর্ধোমুখী হয়ে ভূয়াশী হয়। আল্লাহ তায়ালা হযরত জিব্রাইল, হযরত মিকাঈল, এবং হযরত আজরাইল (আঃ) এই তিন ফেরেস্তাকে প্রেরণ করেন। শুধু জিব্রাইল (আঃ) একাই আওয়াজ দিলেন। যে আওয়াজ একসাথে হাজার হাজার বজ্র গর্জনের ন্যায় ছিল। ফলে সকলে এক সাথে কলিজা ফেটে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এ মুজিযা থেকে এটাই প্রমাণিত যে, নবীগণ যে দাওয়াত নিয়ে এসেছেন বিশেষ করে তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত এবং গায়েবের যত জিনিস, গায়েবের যত বর্ণনা তা সব অক্ষরে অক্ষরে সত্য। কুরাআনুল কারীমে অবাধ্য লোকদের উপর যত প্রকার আযাবের কথা বর্ণিত হয়েছে সেসব লোকদের বস্তি গুলোকে আল্লাহ তায়ালা ভবিষ্যৎ লোকদের জন্য শিক্ষাস্থল হিসেবে সংরক্ষিত রেখেছেন। কুরআন পাকে আরবদেরকে বারবার হুশিয়ারী করা হয়েছে যে, তোমাদের সিরিয়া গমনের পথে এসব স্থান আজও কাহিনী হয়ে বিদ্যমান রয়েছে।
হাদিসে পাকের মধ্যে এসেছে, রাসূল (সাঃ) বলেন- (হযরত ছালেহ (আঃ)-এর কওম) ছামুদ জাতির উপর আপতিত আযাব থেকে রেগাল নামক এক ব্যক্তি ছাড়া কেউ বাঁচতে পারেনি। এ ব্যক্তি তখন মক্কায় এসেছিল। মক্কায় হেরেমের সম্মানার্থে আল্লাহ তায়ালা তাকে বাঁচিয়ে রাখেন। অবশেষে যখন সে হেরেম থেকে বাইরে যায়, তখন সামূদ জাতির আযাব তাঁর উপরও পতিত হয়। সাহাবায়ে কেরামকে মক্কার আবু রেগালের কবরের চিহ্ন দেখান এবং বলেন, তাঁর সাথে স্বর্ণের একটি ছড়িও দাফন হয়ে গিয়েছিল। সাহাবায়ে কিরাম কবর খনন করলে ছড়িটা পাওয়া যায়।
(বাংলা তাফসীর, মা’আরেফুল কুরআন, পৃষ্টাঃ ৪৫৭-৪৬০)