হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ)-পর্ব ৮
হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ)-পর্ব ৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এরপর নামাযের সময় উপস্থিত হলে হযরত ওয়ায়েস (রঃ) নামায সম্পন্ন করে দোয়া করলেন। তারপর বললেন, পাক কোরআন ও আল্লাহর ওলীদের কথা মেনে চলবেন। আর মুহূর্তের জন্যও মৃত্যুর কথা ভুলে যাবেন না। ইবনে জামান, আপনার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না। আপনি আমার জন্য দোয়া করুন। আমিও আপনার জন্য দোয়া করছি। আপনি খাঁটি মুসলিমের জীবন যাপন করবেন। তিনি এবার ইবনে জামানকে পথনির্দেশ করে বললেন, আপনি এই পথ ধরে চলে যান। আমিও অন্য পথে বিদায় নিচ্ছি।
ইবনে জামান তাঁর সঙ্গে কিছুদূর যেতে চাইলেন। কিন্তু তিনি রাজি হলেন না। বিদায় মুহূর্তটি করুণ হয়ে উঠল। দুজনেই কাঁদলেন। ইবনে জামানের সঙ্গে হযরত ওয়ায়েস (রঃ) এর সেই প্রথম ও শেষ দেখা।
একটি বিবরণে পাওয়া যায়, হযরত ওয়ায়েস (রঃ) ফজরের নামায শেষ করে তসবীহ পড়তে পড়তে জোহরের ওয়াক্তে পৌঁছে যেতেন। আবার জোহরের নামায শেষে তসবীহ পাঠ করতে করতে যেত আসরের ওয়াক্ত। এই ভাবে নামায ও তসবীহ পাঠ শেষে চলত নিরবচ্ছিন্নভাবে কয়েক দিন ও রাত। আহার নেই, নিদ্রা নেই। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া নেই। আর এই জন্য ওযু বা গোসলেরও প্রয়োজন হতো না তাঁর। বিরামহীন এবাদত-বন্দেগী যেন তাঁর মধ্যে রুপ পরিগ্রহ করেছিল।
বহু বিনিদ্র রজনী তিনি যাপন করেছেন। বলতেন, এই রাতটি আমার কিয়ামের জন্য, এই রাতটি রুকুর জন্য। এই রাতটি সেজদার জন্য ইত্যাদি।
লোকে তাঁকে জিজ্ঞেস করতেন, হযরত আপনি কেমন আছেন? তিনি বলতেন, কী বলবো, সেজদায় গিয়ে সেজদার তসবীহ পাঠ করতে করতে রাত কাভার হয়ে যায়। ফেরেশতাদের মতো একটু এবাদত করব মনে করি, কিন্ত আর হয়ে ওঠে না।
আপনি কেমন আছেন? এই প্রশ্নের জবাবে একবার বলেন, কেমন আছি তা কি করে বলব। ভোরে উঠে সন্ধ্যার আগেই মৃত্যু আসবে কিনা যে বলতে পারে না, সে আর কেমন থাকবে?
প্রশ্নকর্তা বললেন, তবুও বলুন, আপনার অবস্থা কি?
তিনি বললেন, এক সহায়-সম্পদহীন পথিক। তার পথ যে খুবই দীর্ঘ।
কেউ তাঁকে প্রশ্ন করেন, নামাযের একাগ্রতা বলতে কি বোঝায়?
তাঁর উত্তর, যে নামাযে তীরবিদ্ধ হলেও নামায সম্পন্নকারী তা টের পায় না।
একবার তাঁর কাছে একটি লোকের এক আশ্চর্য খবর এল। লোকটি নাকি দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে কবরস্থানে বসে গলায় কাফনের কাপড় ঝুলিয়ে কেবল কেঁদে যাচ্ছে। আর কিছু করে না।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ)-পর্ব ৯ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন