হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ)-পর্ব ১
পরিচিতিঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলতেন, ইয়েমেনের দিক থেকে আল্লাহর রহমতের সুগন্ধি বাতাসে ভেসে আসছে বলে আমি অনুভব করছি।
আল্লাহর রহমতের এই সুগন্ধি বাতাস হল একটি পবিত্র, পুষ্পিত হৃদয় মাত্র। যাঁর নাম হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ) স্বনাম ধন্য এক তাবেয়ী। রাসূলে কারীমের যুগে তিনি জীবিত ছিলেন করন দেশে তথা ইয়েমেনে। অথচ নবী মুস্তফা (সাঃ) এর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়নি জীবনে কোন দিন।
এ এক আশ্চর্য ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে ঘিরে প্রথমতঃ একগুচ্ছ সোনালী মানুষ তাঁর জীবন ও ধর্মকে বর্মের মত রক্ষা করেছেন। জীবনে জীবন যোগ করেছেন। ক্রমশঃ আত্ন-নিবেদিত প্রাণের সংখ্যা বিপুলভাবে বেড়ে যায়। তাঁর নৈতিক বিপ্লবের ডাকে সাড়া দিয়ে অসংখ্য মানব সন্তান হৃদয় স্পন্দিত আবেগে ইসলামের পতাকাতলে এসে দাঁড়ায়। ইসলামী আন্দোলনের প্রাথমিক সদস্য সংখ্যা চার।
অথচ মক্কায় তেরো বছরের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বাস করেও তিনি প্রায় সাড়ে সাতশ লোককে এ আন্দোলনে শরীক করতে সক্ষম হন। এক বছরের মধ্যে এই সংখ্যা চার হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়। অনুগামীদের সংখ্যা কী দ্রুত- হারে বৃদ্ধি পায়, তার সবচেয়ে বড় প্রামাণ বিদায় হজ্জ। আমরা দেখেছি, এই হজ্জে যাঁরা অংশগ্রহণ করেন, তাঁদের সংখ্যা একলাখ চব্বিশ হাজার থেকে চল্লিশ হাজার পর্যন্ত ছিল।
বাইরে যখন জন-জাগরণের বিপুল কলোচ্ছাস, তখন নীরবে, নিবিড় গোপনে একটি মানুষ তাঁর হৃদয়-মন সর্বস্ব মহানবী (সাঃ) এর আদর্শে সঁপে দিয়ে গভীর দৃঢ় সাধনায় নিমগ্ন। আরব মরুর আকাশে দেদীপ্যমান সূর্যের আলোকরশ্মি আত্নস্থ করে দিনে দিনে তিনি জ্যোর্তিময় হয়ে উঠেছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে।
মানুষ তাঁর খোঁজ রাখেনি, বনান্তরালে সুবাসিত ফুলের মতো তিনি ফুটে উঠেছেন। আর সে সুরভি যেখানে পৌঁছানোর কথা সেখানে ঠিকই পৌঁছেছে। মহানবীর উপাপবিদ্ধ হৃদয়ে সে সুগন্ধি বাতাস পুলক-চঞ্চল আবেগে ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহর সে রহমত উপলব্ধি করতে রাসূলুল্লাহর দেরী হয়নি। আর অন্তচক্ষু দিয়ে তিনি তাঁর পরম-প্রিয় আত্নীয়কে খুব স্পষ্ট করে দেখে নিয়েছেন। হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ) এর প্রতি ইঙ্গিত করে অবশেষে রাসূলে কারীম (সাঃ) একদিন তাঁর সাহাবায়ে কেরামকে বললেন, তোমরা জেনে রেখো, আমার এমন একজন ভক্ত আছেন, যিনি শেষ বিচারের দিনে রাবী ও মোজার গোত্রে ছাগপালের পশম সংখ্যাতুল্য আমার পাপী উম্মতের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন।
সবাই অবাক! কে, কে তিনি, এমন সৌভাগ্যবান পুরুষ? নবী কারীম (সাঃ) বললেন, তিনি আল্লাহর এক প্রিয়জন-ওয়ায়েস কারণী।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া