হযরত ওমর (রা)এর আদালতের একটি ঈমানোদ্দিপক ঘটনা

হযরত ওমর (রা)এর আদালতের একটি ঈমানোদ্দিপক ঘটনা

একবার হযরত ওমর (রা)এর আদালতে একটি মামলা উত্থাপিত হলো। দুজন সুদর্শন যুবক একজন যুবককে হাযির করলো। তারা বললো,আমীরুল মুমিনিন! এই কুলাঙ্গার আমাদের পিতাকে হত্যা করেছে। আপনি তার থেকে আমাদেরকে প্রতিশোধ গ্রহণের অনুমতি দান করুন। আমীরুল মুমিনিন সকল অভিযোগ শুনে অপরাধীর দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার কোন বক্তব্য আছে?

সে বললো, আমীরুল মুমিনিন! তাদের অভিযোগ বিলকুল সত্য। আমি স্বহস্তে একটি পাথর নিক্ষেপ করেছিলাম। সেটার আঘাতে তাদের পিতা নিহত হয়েছে। এজন্য আমার কী বক্তব্য থাকতে পারে!

আমীরুল মুমিনিন বললেন, তাহলে তুমিই তাদের পিতাকে হত্যা করেছো?

জি হা, যুবক জড়তাহীন কণ্ঠে বললো।

আমীরুল মুমিনিন: তাহলে তোমাকে কিছাছ হিসেবে হত্যা করা হবে।

যুবক: হযরত! আমার শরীয়তের হুকুমের ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। তবে আমি মাত্র তিনটা দিন সময় চাই। তিনদিন পর অবশ্যই আমি আপনার দরবারে এসে হাজির হবো এই শাস্তি গ্রহণ করার জন্য।

খলিফা: তাহলে কে তোমার জামিন হবে যে, তুমি তিনদিন বাদে এখানে এসে হাজির হবে?

যুবকটি চেহারা ঘুরিয়ে মজলিসে উপবিষ্ট সবার দিকে তাকালো। তার দৃষ্টি আটকে গেলো নূরে নববীতে ¯œাত একটি শুভ্র চেহারায়। হযরত আবু যর (রা)এর চেহারা মোবারক। যুবক বললো, আমীরুল মুমিনিন! এই মুরুব্বি আমার জামিন হবে।

খলিফা আবু যর (রা)এর দিকে তাকালেন।

আল্লাহর রাসুলের প্রিয় সাহাবী আবু জর (রা) বললেন, ঠিক আছে আমি তার জামিন হলাম যে, সে তিনদিন পর কিছাছ গ্রহণ করার জন্য আপনার দরবারে হাজির হবে। 

এরপর যুবককে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হলো।

দু‘দিন অতিবাহিত হয়ে তৃতীয় দিন উপস্থিত। বিশিষ্ট সাহাবায়ে কেরাম ও খেলাফত পরিচালনার দায়িত্ব নিয়োজিত অপরাপর সাহাবাগণ দরবারে বসে আছেন। বাদী যুবকদ্বয়ও এসেছে। হযরত আবু জর (রা)ও এসেছেন। হত্যাকারী যুবকের অপেক্ষায় সবাই বসে আছে। এক একটি প্রহর অতিবাহিত হচ্ছে, তবুও যুবকের দেখা নেই। বাদীদ্বয় এর মাঝে দু‘তিন বার অভিযোগের সুর তুলেছে। প্রতিবারই আবু যর বললেন, পুরাপুরি তিনদিন অতিবাহিত হলে তো আমি যামানত আদায় করবো।

দিবসের প্রায় শেষ প্রান্ত। আর অল্পক্ষণ বাদেই সূর্য গা এলিয়ে দিবে পশ্চিম দিগন্তে। সবার অপেক্ষায় আর প্রলম্বিত হতে পারছে না। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে হত্যাকারী এসে হাজির। গোটা দেহ তার ঘাম জবজবে। সজোড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে সে। দরবারে এসেই সে বললো, আমিরুল মুমিনিন! মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য যে শাস্তি নির্ধারিত তা প্রদান করুন।

আমিরুল মুমিনিন বললেন, এত দেরি হলো কেন?

সে বললো, আমানত আদায় করতে গিয়ে। আমার পিতা মারা যাবার সময় আমাকে কিছু স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে বলেছেন, তোমার ছোট ভাই যখন বড় হবে তখন দতে গিয়েই দেরি হয়ে গেলো। এখন আমি দায়িত্বমুক্ত একজন মানুষ। কেয়ামতের দিন আমার ভাই আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতে পারবে না।

খলিফা হযরত আবু যর (রা) কে জিজ্ঞেস করলো, আপনি তার জামিন হয়েছিলেন কী হিসেবে? আপনি কি পূর্ব থেকেই ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকেফহাল ছিলেন?

সাহাবী আবু যর বললেন, না আমিরুল মুমিনিন! তার সাথে আমার পূর্ব হতে কোনই পরিচয় ও সম্পর্ক নেই। আমি তার জামিন এজন্য হয়েছি যে, ভরা মজলিসে সে যখন নিদারুণ আশাভরা চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল তখন আমার ভিতরে আন্দোলন সৃষ্টি হলো। ভাবলাম, আজ তার জামানত গ্রহণ করার মতো একজনও যদি না থাকে তাহলে রোজ হাশরে আল্লাহর সামনে আমাদেরকে লজ্জিত হতে হবে। আমি তাকে মোটেও চিনি না। শুধু তার বাহ্যিক ভদ্রতাপূর্ণ চেহারা তার প্রতি আমাকে আকৃষ্ট করেছে।

যুবকের এই দিয়ানতদারি ও সততার গুণে মুগ্ধ হয়ে বিবাদি যুবকদ্বয় বললো, আমিরুল মুমিনিন! আমরা আমাদের পিতার কিছাছ ক্ষমা করে দিলাম। 

ওমর (রা) বললেন, সেটা তোমাদের হক। জাযাকাল্লাহ! আর আবু যর (রা) কে বললেন, প্রকৃতই আপনি একজন মহৎ ব্যক্তি। যুবককে বললেন, তোমার মতো সততা সবার মাঝেই থাকা দরকার।

রাজার অসুখ

রাজার অসুখ

একদা হযরত ওমর ফারুক (রা:)

একদা হযরত ওমর ফারুক (রা:)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *