হযরত ওমর (রাঃ) এর চরিত্র ও কৃতিত্ব
হযরত ওমর (রাঃ) এর রাজ্য সমৃদ্ধির ব্যাপারে মাওলানা মুহাম্মদ আলী বলেছেন যে, হযরত ওমর (রাঃ) খুব বীরত্ব এবং কৃতিত্বের মাঝে সবার চেয়ে আকর্ষণীয় ছিল ইসলামের বিষয়গুলো।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হল আরবের ইসলামী সাধারণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা, হযরত আবু বকর (রাঃ) স্বধর্মত্যাগী ও বিদ্রোহদের কাছ হতে রক্ষা করেছিলেন আর হযরত ওমর (রাঃ) বিজয়ের মাধ্যমে তাঁর শাসন আমল কে একটি সুসংগঠিত সাম্রাজ্যে রুপান্তরিত করছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) শুধু বিজিত এলাকাসমূহের সংহতি বিধান করেই শেষ করেননি তিনি সম্পূর্ন সাম্রাজ্যে একটি নিরাপদ শাসন ব্যবস্থাও চালু করেছিলেন। ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় হযরত ওমর (রাঃ)- কে।
শরীয়তের নিয়ম-কানুন প্রবর্তন, বাহিনী গঠন, জেলখানা স্থাপন, ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা, আদমশুমারীর প্রবর্তন, হিজরী সন গণনা, সীমান্তে দুর্গ নির্মাণ, দফতর প্রতিষ্ঠা, কৃষিব্যবস্থা ও চাষীদের অবস্থার উন্নতি বিধান, নারী শিক্ষার প্রসার প্রভৃতি নিয়মাবলি মহান শাসক হিসেবে হযরত ওমর (রাঃ) এর যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার পরিচয় বহন করে।
তিনি নিরাপত্তা জন্য শাসক হিসাবে হযরত ওমর (রাঃ) সমস্ত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শাসকদের অন্যতম বলে গণ্য হতে পারে। সৎ চরিত্রের সর্বোত্তম আদর্শবান ছিলেন হযরত ওমর (রাঃ)। তাঁর চরিত্র প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, সরলতা, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং নিরপেক্ষতা।
হযরত ওমর (রাঃ) এর চরিত্র সম্পূর্কে ঐতিহাসিক মূর বলেছেন যে, হযরত ওমর (রাঃ) এর কয়েকটি পংত্তিতে তাঁর চরিত্র সম্পূর্কে ধারণ করা যায়। কর্তব্যপরায়ণতা ও সরলতা ছিল তাঁর জীবনের আদর্শ। আর ন্যায়পরায়ণতা ও একাগ্রতা ছিল তাঁর মূল নীতি। এত বড় এক বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী হওয়ার পরও হযরত ওমর (রাঃ) জীবনযাপন করতেন সাধারণ মানুষের মত।
হযরত ওমর (রাঃ) এর সাধারণ জীবন যাপন সম্পর্কে অনেক কাহিনী বিদ্যামান আছে। তিনি এত বড় সাম্রাজ্যের খলিফা হওয়ার পরও তাঁর নিরাপত্তার জন্য কোন দেহরক্ষী ছিল না। আড়ম্বরপূর্ণ শাহী বালাখানাও ছিল না। হযরত ওমর (রাঃ) তালি যুক্ত কাপড় পরিধান করতেন। কোমলতা আর কঠোরতাঁর সংমিশ্রন ছিল হযরত ওমর (রাঃ)। হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর নিজের চরিত্র সম্পর্কে একদিন নিজেই বললেন, আল্লাহ্ তায়ালার শপথ, আল্লাহর সম্পর্কে আমার হৃদয় যখন নরম হয় ঠিক তখন পানির ফেনার চেয়েও বেশি নরম এবং কমল হয়ে যায়। এরপর আল্লাহ্ তায়ালার দ্বিন আর শরীয়তের ব্যাপারে যখন শক্ত এবং কঠোর হয় তখন পাথরের চেয়ে বেশি শক্ত হয়ে যায়।
হযরত ওমর (রাঃ) দারিদ্রের জন্য তাঁর হৃদয় ছিল দয়ালু ও সহানুভূতিশীল আর তিনি গরিবের মঙ্গলের চিন্তা-ভাবনায় জন্য অনেক রজণী কাটিয়েছেন না ঘুমিয়ে। তিনি জনগণের সুখ-দুঃখ দেখে অভাব গ্রস্থদেরকে অর্থ ও খাদ্য সাহায্য করার জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। তিনি প্রসূতির প্রসব যাতনা লাগবের জন্য নিজের স্ত্রীকে একাকী বেদুঈন মহিলার গৃহে পৌঁছে দিয়ে আসত।
তিনি দুর্ভিক্ষের সময়ে খাদ্যের বোঝা নিজের কাধে করে নিয়ে যেতেন। তিনি খুবই কঠোর ছিলেন বিচারকার্যে। তিনি ক্ষমা করেননি নিজের অপরাধী পুত্রকেও তিনি আবু শাহমাকে বেত্রাঘাতের দ্বারা হত্যা করলেন মদ্যপানের অপরাধের জন্য। তাঁকে কোন দিন স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্ব স্পর্শ করতে পারেনি। ইসলাম ও সাম্রাজ্যের খিদমতে উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর জীবনে। এ বিবিধ কারণেই ইসলামের ইতিহাসে সবার উপরে স্থান হযরত ওমর (রাঃ)