হযরত উজাইর (আঃ)
হযরত ইয়ারমিয়া (আঃ) এর ইন্তিকালের কিছুদিন পরই আল্লাহ্ পাক হযরত উজাইর (আঃ) কে নবুয়ত প্রদান করেন। একদা তিনি ভ্রমনোপলক্ষে বায়তুল মোকাদ্দাসের নিকটবর্তী হয়ে এর ধ্বংস স্তুপ দেখে আল্লাহ্ পাকের নিকট আরজ করলেন, হে আল্লাহ্! আপনি কিভাবে এ সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরটিকে পুনরায় আবাদ করবেন?
আল্লাহ্ পাক তাঁর নবীর এ কথাটিকে মোটেও পছন্দ করলেন না। কারণ তাঁর এ কথার মধ্যদিয়ে আল্লাহ্ পাকের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেখা হয়েছিল। অতএব আল্লাহ্ পাক এ ব্যাপারে তাঁর নবীর বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদানের ব্যবস্থা করলেন।
একদিন হযরত উজাইর (আঃ) একটি গাধার পিঠে আরোহণ করে ভ্রমণে বের হয়েছিলেন। একটা পাত্রে তাঁর কিছু খদ্যদ্রব্যও সাথে নিয়েছিলেন। কিছুদুর ভ্রমণ করার পর তিনি তাঁর গাধাটিকে একটি বৃক্ষের সাথে বেঁধে খাদ্যের পাত্রটি গাছের ডালে ঝুলিয়ে নিজে বৃক্ষটির ছায়ায় বসে একটু বিশ্রাম করতে ছিলেন। বিশ্রাম করতে করতে তিনি নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়লেন। এ নিদ্রার মধ্যেই আল্লাহ্ পাক তাঁর মৃত্যু ঘটালেন। তাঁর গাধাটিও মারা গেল।
হযরত উজাইর (আঃ) এর মৃত্যুর পর পূর্ণ একশত বছর অতিবাহিত হল। আর মৃত্যু দেহটি সেখানেই পড়ে রইল। কিন্তু কি আশ্চর্য। তাঁর শরীর এবং পরিধানের বস্ত্রাদির একটুকুও পরিবর্তন ঘটল না। বৃক্ষের ডালে ঝুলানো খাদ্য দ্রব্যসমূহও অবিকল এবং টাটকা রইল। কিন্তু তাঁর বাহন গাধাটি মরে পচে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। শুধু গাধার হাড়গুলি পড়ে রইল।
একশত বছর পর আল্লাহ্ পাক হযরত উজাইর (আঃ) কে জীবিত করে জিজ্ঞেস করলেন। হে উজাইর! তুমি কতক্ষণ নিদ্রিত ছিলে?
হযরত উজাইর (আঃ) উত্তরে বললেন, মনে হয় একদিন কিংবা একদিনের কিছু সময় হয়ে থাকবে।
আল্লাহ্ পাক বললেন, মোটেই তা নয়, উজাইর! তুমি দীর্ঘ একশত বছর মৃত্যু অবস্থায় ছিলে। তৎপর আমি তোমাকে পুনরায় জীবিত করেছি। তুমি তোমার খাদ্যগুলো দেখ, সেগুলো আমি সম্পূর্ণ ভাল অবস্থায় রেখেছি। পক্ষান্তরে তোমার খাদ্যগুলো দেখ, সেগুলো আমি সম্পূর্ণ ভাল অবস্থায় রেখেছি। পক্ষান্তরে তোমার খাদ্যগুলো দেখ, সেগুলো আমি সম্পূর্ণ ভাল অবস্থায় রেখেছি। পক্ষান্তরে তোমার গাধাটির দিকে লক্ষ্য কর, তাঁর চর্ম, মাংস কিছুই নেই। তা মরে পচে গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। শুধু তাঁর হাড়গুলো পড়ে রয়েছে। এখন তুমি লক্ষ্য কর যে, আমি কিভাবে ঐ হাড়ের সাথে মাংস ও চর্ম লাগিয়ে গাঁধাটিকে পুনর্জীবিত করি। আল্লাহ্ পাকের বলা মাত্রই গাধার হাড়গুলোর সাথে মাংস উৎপন্ন হল এবং তা চর্ম দ্বারা আচ্চাদিত হয়ে গাধাটি পুনর্জীবিত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
এ ঘটনার দ্বারা আল্লাহ্ পাক হযরত উজাইর (আঃ) কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান দান করলেন যে, আল্লাহ্ পাক অফুরন্ত ও অসীম শক্তির অধিকারী। তিনি যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন।
বস্তুতঃ এ ঘটনার দ্বারা আল্লাহ্ পাক এ কথাটি প্রমাণ করে দেখালেন যে, আল্লাহ্ পাক যখন এ অসম্ভবকে সম্ভব করতে সক্ষম তখন তিনি কি ধ্বংস প্রাপ্ত বায়তুল মুকাদ্দাস শহরটিকে পুনরায় সমৃদ্ধশালী শহরে পরিণত করতে পারেন না? নিশ্চয় তা পারেন। আল্লাহ্ পাক এতদিনে বাইতুল মুকাদ্দাসের অবস্থা আমুল পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। হযরত উজাইর (আঃ) দেখতে পেলেন যে, পূর্বের সেই নিষ্ঠুর কাফির বাদশাহ বখতে নছরের মৃত্যু হয়েছে এবং তদুস্থলে জেরুজালেমে ধার্মিক বাদশাহর শাসন কায়েম হয়েছে। আর তা পূর্বাপেক্ষাও সমৃদ্ধিশালী নগরীতে পরিনত হয়েছে।
হযরত উজাইর (আঃ) ধার্মিক বাদশাহর নিকট উপস্থিত হয়ে নিজেকে হযরত উজাইর (আঃ) নবী বলে পরিচয় দান করলেন। কিন্তু বাদশাহ বা অন্য কেউই হযরত উজাইর (আঃ) কে নবী বলে স্বীকার করল না। কেননা তারা সকলেই জানত যে, তিনি পূর্বে বাদশাহ বখতে নছরের আমলেই ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু তিনি তবুও নিজের দাবীতে দৃঢ় থাকায় তারা তাঁকে পরীক্ষা করে দেখলেন। তাঁদের জানা ছিল যে, হযরত উজাইর (আঃ) এর সমস্ত তৌরাত কিতাব মুখস্ত। অতএব তাঁরা তাঁকে তৌরাত কিতাব মুখস্ত পড়ে শুনাতে বললেন। তিনি অবাধে তা শুনিয়ে দিলেন। তখন সকলে তাঁকে উজাইর নবী (আঃ) বলে নির্দিধায় বিশ্বাস করল।
হযরত উজাইর (আঃ) পুনর্জীবন লাভ করার পরেও দীর্ঘদিন জীবিত থেকে বনী ইসরাঈলদের ভীতরে ধর্ম প্রচার করতে ছিলেন। বনী ইসরাঈলগণ তাঁর খুবই অনুগত এবং অনুরুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁদের কাছে এত প্রিয় হয়ে পড়েছিলেন যে, খৃষ্টানগণ হযরত ঈসা (আঃ) কে আল্লাহ্র পুত্র বলে মনে মনে করত, নবী ইসরাঈল তথা ইহুদীগণ তদ্রুপ হযরত উজাইর (আঃ) কে আল্লাহ্র পুত্র বলে অভিহিত করতে ছিল। অবশ্য তাঁদের উভয় সম্প্রদায়ের এ দাবী যে এঁকে বারেই অবান্তর আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে তা ঘোষণা করেছেন।