হযরত ঈসা (আঃ) এর এনতাকিয়া শহরে দূত প্রেরণ-পর্ব ২
হযরত ঈসা (আঃ) এর এনতাকিয়া শহরে দূত প্রেরণ-পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আর এমন এক মহান সত্তার ইবাদাত ত্যাগ করেছেন যিনি সব কিছু দেখেন এবং শুনে। সুতারাং আমরা আপনাদেরকে এ মহান সত্তার ইবাদাত করার জন্য আহ্বান দিতে এখানে এসেছি। বাদশাহ বললেন, তাহলে কি আমাদের মাবুত ব্যতীতও তোমাদের অন্য কোন মাবুদ রয়েছে। তাঁরা বললেন হ্যাঁ, আমাদের আল্লাহ এমন এক সত্তা যিনি আপনাকে এবং আপানর মাবুদেরকেও সৃষ্টি করেছেন। বাদশা বলল, ঠিক আছে তোমরা অপেক্ষা করে। আমি তোমাদের ব্যাপারে চিন্তা করে দেখি। বাদশা তাঁদের কে বন্দী করে প্রত্যেককে একশত করে বেত্রাঘাত করল। অতপর তাঁদের পিছনে লোক লাগিয়ে দিল। বাদশাহের নির্দেশ পেয়ে বখাটে শহরবাসিরা তাঁদেরকে অপমান এবং মারধর করল। হযরত ঈসা (আঃ) এ খবর পেলেন। তাই তিনি তাঁদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য শামউনকে প্রেরণ করলেন।
শামউন আঁচ করতে পারলেন যে, সরাসরি দিনের দাওয়াতে এখানে কাজ করা যাবে না। কাজেই এই শহরে কৌশলগত ভাবে কাজ করতে হবে। তাই তিনি সাধারণ লোক হিসাবে শহরে প্রবেশ করলেন। আর রাজ প্রাসাদের পাশেই একটি ঘরে বসবাস শুরু করলেন। কথাবার্তা আচার ব্যাবহার শহরবাসীর নিকট একটি উদাহরণ হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। শামউনের কথা ধীরে ধীরে বাদশাহের কর্ণগোচর হল। বাদশা শামউনকে রাজ দরবারে ডেকে আনলেন। তাঁর উপস্থিত হওয়ার পর বাদশাহ তাঁর সাথে সুব্যবহার করল।
এবং তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করল। দরবারে উচ্চপদস্থ লোক হিসাবে গ্রহন গ্রহণ করল। এমন কি তাঁকে বাদশার নিকটস্থ লোক হিসাবে গন্য করল। যখন বাদশার সাথে তাঁর ঘনিষ্টতা স্থাপিত হল তখন একদিন তিনি বাদশাহকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি জানতে পরেছি যে, আপনি নাকি দু’জন লোক কে জেলখানায় বন্দী করে রেখেছেন। আর আপনাকে যখন তাঁরা আপানর দ্বীন প্রচার করতে বলেছিল তখন নাকি আপনি তাঁদেরকে মারধর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন? তাঁদের সম্পর্কে আলোচনা করাতে বাদশাহ রাগ হয়ে গেলেন। শামউন তখন অতি নম্র স্বরে বললেন, জাহাপানা যদি অনুমতি হয় তাহলে আমি তাদেরকে ডেকে এনে তাঁদের মতামত সম্পর্কে আলাপ করে দেখতে পারি তাঁরা কি বলতে চায়। যেহেতু শামউনকে অনুমতি প্রাদান করল। শামউন তাঁদেরকে রাজ দরবারে হাজির করে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের এখানে কে প্রেরণ করেছে। তাঁরা জবাব দিলেন, বিশ্ব নিখিলের মহান সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ পাক প্রেরণ করেছেন।
তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। শামউন বললেন, তোমরা তোমার প্রেরকের পরিচয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু বল। তাঁরা বললেন, তিনি এমন এক সত্তা যে, তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তিনি সর্ব শক্তিমান তাঁর ইচ্ছা বাস্তবায়নে কেউই বাধার সৃষ্টি করতে পারে না। শামউন বললেন, তোমরা তাঁর নিকট হতে প্রেরিত হওয়ার কোন নিদর্শন তোমার কাছে আছে? তাঁরা বলল, আপনারা যা চাইবেন আমরা তা করে দেখাতে পারব, তখন বাদশাহ তাঁদেরকে পরীক্ষা করার জন্য একটি অন্ধ ছেলেকে তাঁদের সামনে হাজির করেন।
তখনি তাঁদের সামনে একটি ছেলেকে হাজির করা হল। যার চক্ষুদ্বয়ের কোন নিদর্শনই ছিল না। এবং চক্ষুদ্বয়ের স্থান ললাটের ন্যায় সমতল ছিল। বাদশাহ বলল। তোমরা এ বালকের চক্ষু ভাল করে দাও। যদি তা করতে সক্ষম হও, তা হলে বুঝা যাবে, তোমরা সত্য। তাঁরা আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ পাকের রহমতে তাঁর চক্ষু খুলে গেল। তখন তাঁরা সামান্য মাটি হাতে তুলে আল্লাহর নামে ফুঁক নিয়ে ঐ মাটি দ্বারা তাঁর চক্ষুদ্বয় মুছে দিলেন। ফলে সে সব কিছু দেখতে পেল। বাদশাহ তা দেখে অবাক হয়ে রইল। শামউন বাদশাহকে বললেন, আপনি যদি আপনার মাবুদের নিকট এ ধরনের দোয়া করতেন তা হলে তো আপনার মাবুদও তাঁকে ভাল করে দিতে পারেন। ফলে আপনার এবং আপনার মাবুদ উভয়ের সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশ হত। বাদশাহ বলল, আমি তো আপনার নিকট কোন কথা গোপন করি নি। আমি আমার মাবুদের নিকট দোয়া করলে কোন লাভ হবে না। কেননা আমরা যার ইবাদত করি তা জড় পদার্থ। সে কখনও শুনতে পায় না। এর দর্শন ক্ষমতাও নেই। অধিকন্তু কারো উপকার যা অপকার করা তাঁদের শক্তির বাইরে। শামউন দেখলেন যে বাদশাহ অনেকটা নরম হয়ে আসছে। তাঁদের সম্পর্কেও নমনীয় ভাবপ্রকাশ করতেছে। কিন্তু এখনও আল্লাহ পাকের প্রতি ঈমান আনতে রাজী নয়।
শামউন সর্বদাই বাদশার সাথে এমন আচারণ করতেন যাতে বাদশার শামউনকে অন্য ধর্মের অনুসারী মনে করতে না পারে। এমনকি মাঝে মাঝে বাদশাহের মাবুদের সামনে গিয়ে দোয়া করতেন। কান্নাকাটি করতেন। শামউন অতি কৌশলে কাজ করতে ছিলেন। তাই বাদশাহকে ঈমান গ্রহণ করার জন্য কোন চাপ দিয়ে তাঁর সামনে দ্বিতীয় নিদর্শন উপস্থাপিত করার জন্য পরিকল্পনা করতে ছিলেন। তাই শামউন তাঁদেরকে বললেন, তোমাদের মাবুদ মৃত্যু ব্যক্তিকে জীবিত করতে পারেন? তাঁরা বললেন, আমাদের আল্লাহ পাক সব কিছু করতে পারেন। শামউন বললেন, এখানে একজনের মৃত্যু দেহ রয়েছে। সাতদিন পূর্বে সে মারা গিয়েছে। মৃত্যু ব্যক্তির পিতা এখানে উপস্থিত নেই বলে আমরা তাঁকে দাফন করতেছি না। তাঁর পিতা এখানে আসলে পরে তাঁকে দাফন করব। তোমাদের আল্লাহ পাক তাঁকে পুনঃ জীবিত করতে পারবেন? তাঁরা বলল, আমাদের আল্লাহ পাক তাঁকে পুনঃজীবিত করতে সক্ষম। এ বলে তাঁরা মৃত্যু ব্যক্তিকে সামনে রেখে দোয়া করতে লাগলেন। তাঁরা প্রকাশ্যেই দোয়া করতেছিলেন।
হযরত ঈসা (আঃ) এর এনতাকিয়া শহরে দূত প্রেরণ-শেষ পড়তে এখানে ক্লিক করুন