হযরত ইয়াহইয়া মাআয (রঃ) – পর্ব ১
কোন কোন সাধক বলেন, পৃথিবীতে আল্লাহর দু’জন দাস হয়েছেন। একজন হলেন আল্লাহর নবী হযরত ইয়াহইয়া (আঃ)। আর দ্বিতীয়জন হলেন প্রখ্যাত তাপস হযরত ইয়াহইয়া মাআয (রঃ)।
হযরত ইয়াহইয়া মাআয (রঃ) প্রকৃতই আল্লাহর এক আলোকিত দাস। গূঢ় তত্ত্বেভেদে তাঁর কোন জুড়ি ছিল না। আর ছিলেন অসাধারণ বাগ্মী। তাঁর মক্তব্য ছিল মৌলিক, অন্তস্পর্শী আর সুদূর প্রসারী। এই জন্য ইয়াহইয়া ওয়ায়েজ নামেও অভিহিত হন। নিয়মিত কঠোর সাধনায় অভ্যন্ত এই তত্ত্ব জ্ঞানীর হৃদয় ছিল অত্যন্ত সরল ও পবিত্র। আর গ্রন্থ রচনায় তাঁর যোগ্যতা ছিল তুলনা-হীন।
আল্লাহ-ভীতি কাকে বলে, তাঁর জীবন তার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আবার আল্লাহর রহমত লাভের ওপর তাঁর আস্থাও ছিল অবিচল। এদিকে তিনি এক আদর্শ স্বরূপ।
পরবর্তীকালে এক তাপস-সমাবেশে প্রশ্ন ওঠে, নবী যাকারিয়া (আঃ) ও নবী ইয়াহইয়া (আঃ) সম্পর্কে কিছু কিছু জানা যায় বটে, তবে মহানবীর শ্রেষ্ঠ উম্মত তাপসকূল তিলক হযরত ইয়াহইয়া সম্বন্ধে কিছুই জানা হয়নি। এ সম্পর্কে তাপসগণ কিছু বলুন। এই প্রশ্নের জবাবে তাপসগণ বলেন, আমরা যতদূর জানি, তাতে শিশুকাল থেকে আজীবন তিনি একটিও কবীরা শুনাহ করেননি। আর সাধনার ক্ষেত্রে তাঁর তুল্য পরিশ্রমী সে যুগে আর দেখা যায়নি। আল্লাহর রহমতের ওপর নির্ভরতা ও সুকঠিন আল্লাহ-ভীতি সম্বন্ধে তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, দুটি কাজই ঈমানের –স্তম্ভ।
এর যেকোন একটি ছেড়ে দিলে ঈমান মজবুত থাকে না। আসলে দুয়ের মধ্যে একটা সঙ্গতি আছে। কেননা, আল্লাহর রহমতের প্রতি অবিচল আশাবাদীরাও আল্লাহর রহমতে লাভের আশায় তাঁরা এবাদত করেন। আবার আজাবের ভয়ে ভীত ব্যক্তিরাও কঠিন আযাবের হাত থেকে পরিত্রাণের আশায় তাঁরা এবাদত করেন। অর্থাৎ একজন এবাদত করেন আল্লাহর বিচ্ছেদ- আশঙ্কায় ; আর অন্যজন তাঁর ইবাদত করেন তাঁর সঙ্গে মিলন-কামনায়।
তবে, এবাদতের মধ্যে যতক্ষণ না আশা ও ভয় যুক্ত হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এবাদত পূর্ণ হয় না। আবার ঠিক এভাবেই এবাদত না থাকলে আশা ও ভয়েও উদ্ভবও ঘটে না। খোলাফায়ে রাশেদীনের পর, একমাত্র হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মাআযই সেই দুর্লভ সৌভাগ্যের অধিকারী যিনি নবী কারীম (রাঃ)-এর মিম্বরে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছেন। আর কোন ওলীর ভাগ্যে এমনটি জোটেনি তাঁর ভাষণের প্রভাবে ঘৃণ্য পাপীরাও পাপ কর্ম পরিহার করে পবিত্র পথের পথিক হয়।
হযরত ইয়াহইয়া (রঃ)- এর এক ভাই মক্কার বাস করতেন। তিনি একবার হযরত ইয়াহইয়া (রঃ) কে এক চিঠিতে লেখেন, আমার মনে তিনটি আকাঙ্ক্ষা ছিল। তাঁর মধ্যে দুটি পূরণ হয়েছে। আশা করি, আল্লাহ বাকীটাও পূরণ করবেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া