হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর জন্ম ও বংশ পরিচয়

হযরত ইয়াকুব (আঃ) হযরত ইসহাক (আঃ) এর সন্তান। হযরত ইসহাক (আঃ) এর বিবাহের পর তাঁর দু’টি পুত্র সন্তান একত্রে জন্মগ্রহণ করেন। একটির নাম ঈসু এবং অপরটির নাম রাখেন ইয়াকুব। তাদের দু’ভাইয়ের মধ্যে  ইয়াকুব (আঃ) মাতার নিকট অতি প্রিয় ছিল। আর তাঁর ভাই ঈসু পিতার নিকট অতি আদরের ছিল। দু’ভাইয়ের মধ্যে কিছুটা মনের গড়মিল হয়েছিল। তাই হয্রত ইয়াকুব (আঃ) মাতার পরামর্শে তাঁর মামা বাড়ি ফান্দানে বসবাস করার জন্য চলে যান। ফাদ্দান যাওয়ার পরে রাত্র হয়ে গেল। রাত্র যাপনের উদ্দেশ্যে তিনি একটি বড় পাথরের উপর ঘুমায়ে পড়লেন। তখন তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, আসমান হতে একটি সিঁড়ি তাঁর শিয়রের কাছে নেমে এসেছে। আসমানের দরজা খোলা অবস্থায় রয়েছে। এ সিঁড়ির মাধ্যমে আসমান হতে ফিরিশতা অবতরণ করতেছে। এ অবস্থায় আল্লাহ পাক তার প্রতি ওহী নাযিল করলেন।

“আমি আল্লাহ! আমি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। আমি তোমার ভ্রভু। আবার তোমার পিতৃ পুরুষদেরঈ প্রভু। আমি তোমাকে এবং তোমার ভবিষ্যত বংশধরকে এ পবিত্র ভূমির উত্তরাধিকারী করেছি। তোমার মধ্যে এবং তোমার বংশের মধ্যে বরকত দান করেছি। আমি তোমার সাথে আছি। তুমি আমার নিয়ন্ত্রণে রয়েছ। আমি তোমাকে আবার কেনানে ফিরিয়ে আনব। তুমি এখানে একটি গৃহ নির্মান কর যাতে আমার ইবাদত করতে পারবে। শুধু তুমিই নও বরং তোমার পরবর্তী বংশধরেরাও এ ঘরে এবাদত করবে। আর সে গৃহটি হল বায়তুল মোকাদ্দাস।

স্বপ্ন দেখে তিনি জেগে গেলেন। অতঃপর ফান্দানের মাতুল লাবানের ঘরে পৌছলেন। পিতার পরামর্শ মোতাবেক মামাত বোন রাহিলের বিবাহের পয়গাম দিলেন। লাবানের কন্যা দু’টি। বড় কন্যার নাম সোইয়া আর ছোট কন্যার নাম রাহিল। বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার পর মাতুল লাবান হযরত ইয়াকুব (আঃ) বললেন, “না”। লাবান বললেন, ‘তা হলে তুমি দশ বছর পর্যন্ত আমার বাড়িতে কাজ কর্ম করবে।’ এটা আমার কন্যার মোহর হিসাবে গণ্য হবে। এ শর্ত পালন করার পর তোমার সাথে আমার কন্যার বিবাহ। এ শর্তের উপর হযরত ইয়াকুব (আঃ) দশ বছর লাবানের বাড়িতে কাজ কর্ম করার পর লাবান তাঁর বড় কন্যা লাইয়াকে হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর সাথে বিবাহ দিলেন।

বাসার রাত্রে হযরত ইয়াকুব (আঃ) অনুভব করতে পারলেন যে, তাঁর বিবাহধীন নারী ঐ নারী নয় যার সাথে তাঁর বিবাহের কথা হয়েছিল। তাই তিনি ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলেন। ভোরেই মাতুলের নিকট পৌঁছলেন। লাবান তখন এই মজলিশে বসে ছিলেন। হযরত ইয়াকুব (আঃ)লাবানকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “আপনি আমার সাথে প্রতারণা করে আমার দশ বছরের খেদমত হালাল করে নিয়েছেন, আপনার কন্যা যাকে আমার সাথে বিবাহ দেয়ার কথা ছিল প্রতারনা করে তাঁর পরিবর্তে অন্য একজনকে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছেন”। তাঁর মাতুল বললেন, “হে ভাগ্নে ! তুমি কি তোমার মামাকে লজ্জিত করতে চাচ্ছ!” আমাকে অন্য লোকের গালি শুনাতে চাচ্ছ! তুমি কোথাও কি দেখেছ যে, কেউ কখনও বড় কন্যা অবিবাহিত রেখে ছোট কন্যা বিবাহ দিয়েছে? ঠিক আছে তুমি আরও দশ বছর আমার বাড়িতে কাজ কর্ম কর। তা হলে ছোট কন্যা রাহিলাকেও তোমার নিকট বিবাহ দিব।

তৎকালে এক ব্যক্তির একই সময় একাধিক ভগ্নিকে বিবাহ করা বৈধ ছিল। কিন্তু মূসা (আঃ) নবুয়াত লাভের পর তাঁর প্রতি তৌরাত অবতীর্ন হয়। আর তৌরাতে এ প্রথা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত দু’বোনকে একত্রে রাখা জায়েজ নয়। হযরত ইয়াকুব (আঃ) আরও দশ বছর মামার খেদমত করে রাহিলাকেও বিবাহ করেন। এটা ব্যতীত তিনি আরও দু’নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। একজনের নাম “সলফা” অপর জনের নাম “বালহা”। যালফা তাঁর প্রথমা স্ত্রী লাইয়ার সেবিকা। আর বালহা দ্বিতীয়া স্ত্রী রাহিলার সেবিকা। তাঁর চার স্ত্রীর প্রত্যেকের গর্ভেই সন্তান জন্ম লাভ করেছে। বেনইয়ামীন ব্যতীত তাঁর সমস্ত সন্তান ফাদ্দানেই জন্ম গ্রহন করেন। অতঃপর তিনি কেনানে ফিরে আসেন। তখনই বেনইয়ামীন জন্মগ্রহন করেন।

হযরত ইয়াকুব (আঃ) ও তাঁর ভাই ঈসু (আঃ)এর মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়ার হযরত ইয়াকুব (আঃ) ফাদ্দান চলে যান। তখন হযরত ঈসু (আঃ)ও মক্কায় চলে যান। সেখানে পিতৃব্য হযরত ইসমাইল (আঃ) এর হেফাজতে থাকেন। পরে তাঁর কন্যার সাথে ঈসু (আঃ) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ইতিহাসে তিনি  আদওয়াস নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। অতঃপর যখন উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্য দূরীভূত হল, তখন তাদের আবার সৌহাদ্যমূলক সম্পর্ক স্থাপিত হল।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর কেনানের উদ্দেশ্যে শাম ত্যাগের কাহিনী পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।