হযরত ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) – পর্ব ৩
হযরত ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সুফিয়ান সাওরী (রঃ) মক্কায় অবস্থান করছেন। তাঁর কাছ থকে হাদিস শোনার জন্য ইমাম আহমদ (রঃ) মক্কায় গেলেন। প্রতিদিনই তিনি তাঁর দরবারে হাজির থাকেন। কিন্তু একদিন কোন কারণ বশতঃ এলেন না। হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ) তাঁর খোঁজে এক শিষ্যকে পাঠালেন। খাদেম গিয়ে দেখেন, ইমাম আহমদ (রঃ) শতচ্ছিন্ন একখানি কাপড় পড়ে চুপচাপ বসে রয়েছেন ঘরে- যেন আত্মগোপন করে আছেন। জানা গেল, তাঁর একমাত্র লুঙ্গী ও জুব্বা ধোপাকে ধুতে দিয়ে তিনি এ পোশাক পড়ে কোন রকমে লজ্জা নিবারণ করছেন। তাঁর এ অবস্থা দেখে খাদেম বলল, হুজুর! আমি কিছু টাকা দিচ্ছি। আপনি পরনের কাপড় তৈরি করুন।
ইমাম আহমদ (রঃ) বললেন, আমি মানুষের দান গ্রহণ করি না। খাদেম বললেন তাহলে আপনি ধার নিন। কিন্তু তাতেও তিনি রাজি হলেন না। তখন খাদেম বললেন, আপনি আমাদের ওখানে আর যেতে চান না। কিন্তু আপনি যতদিন না ওখানে যাচ্ছেন, ততদিন আমিও এখান থেকে যাব না। বেশ মুশকিলে পড়লেন ইমাম আহমদ (রঃ)। বললেন, তাহলে এক কাজ কর, আমার একখানি বইয়ের পাণ্ডুলিপি আছে। দেখ, যদি তা বিক্রি করতে পার। যদি বিক্রি হয়, তাহলে যা দাম পাওয়া যাবে তা দিয়ে দশ গজ মোটা কাপড় কিনে আনো। পাঁচ গজ দিয়ে পাজামা, আর বাকী পাঁচ গজ দিয়ে জামা বানানো যাবে। খাদেম বললেন, মোটা কাপড় কেন হুজুর? এবার ধমক দিলেন ইমাম সাহেব, যা বলছি তাই কর।
বাড়িতে কাজ করছিল এক মজুর! সন্ধায় সে যখন চলে যাচ্ছে, ইমাম আহমদ (রঃ) তাঁর খাদেমকে বললেন, ওর যা দাবী, তাঁর চেয়ে কিছু বেশীই দিও। বললেন, তখন হয়তো ওর মনে লোভ ছিল না। কিন্তু এখন সেটা সৃষ্টি হতে পারে। কেননা, মানুষের মন সব সময়ে একরূপ থাকে না।
একবার তিনি তাঁর থালা বন্ধক রাখেন। যখন সেটা ছাড়াতে গেলেন, তখন তাঁকে দু’খানা থালা দিয়ে তাঁর নিজের চিনে নিতে বলা হল। কিন্তু তিনি চিনতে না পেরে থালার দাবীই ছেড়ে দেন।
বহু দিন ধরে তাঁর ইচ্ছা, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রঃ)-এর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। একদিন ঘটনাক্রমে স্বয়ং আবদুল্লাহ (রঃ) এসে পড়লেন ইমাম আহমদ (রঃ)-এর দরবারে। আর এ খবর তিনি পেয়ে গেলেন তাঁর পুত্র সালেহ মারফত। বলাবাহুল্য, হযরত ইমাম আহমদ (রঃ) এ খবর খুশী হলেন। কিন্তু তাঁর পুত্রকে বললেন, আবদুল্লাহ (রঃ)-কে নিয়ে তিনি যেন এখনই ঘরে না আসেন। অর্থাৎ, তিনি এখনই তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন না।
পিতার কথায় পুত্র বিস্মিত হয়ে যান। যাকে দেখার তীব্র বাসনা তাঁর, তাঁর সঙ্গে তিনি কিনা এই মুহূর্তে দেখা করবেন না, আশ্চর্য! পুত্রের মনোভাব বুঝতে পেরে ইমাম আহমদ (রঃ) বললেন, আমি কী ভাবছি জান? কথাবার্তা, আচার-আচরণ এক আকর্ষণীয় যে, তাঁর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের পর আমি হয়তো তাঁর প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়ব। তারপর তাঁর বিচ্ছেদ-ব্যথা আমার পক্ষে দুর্বহ হবে। তার চেয়ে এই ভালো যে, তাঁর দর্শন প্রত্যাশা নিয়ে এভাবেই দিন কয়টি কাটিয়ে দেব। পড়ে এক সময়, এমন জায়গায় দেখা করব যে, আর বিচ্ছেদের কোন আশঙ্কায় থাকবে না।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন