হযরত ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-পর্ব ৩
হযরত ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এঁরা হলেন- ইমাম আবু হানিফা, সুফিয়ান ও শোরায়হ ও ইমাম শা’বী। তাঁদের দরবারে ডাকা হল। একই সঙ্গে আসছিলেন তাঁরা। পথিমধ্যে ইমাম আজম বললেন, শুনুন, আমি যে কোনভাবে হোক এই পদ গ্রহন করব না। সুফিয়ান আপনি সরে পড়ুন। শা’বী পাগলেন ভান করুন। আর শোরায় পদটি গ্রহণ করুন। তাঁর এ পরামর্থে সুফিয়ান সত্যি সরে গেলেন। বাকি তিন জন দরবারে হাজির হলেন।
খলীফা প্রথমে আবু হানিফাকে (রঃ) কে পদটি গ্রহণ করার অনুরোধ জানালেন। তিনি বলেলন, আমি আরবের লোক নেই। অতএব আরব প্রধানগণ সহজে আমার হুকুম মানতে চাইবে না। জাফর বারমাকী নামে একজন আমীর সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, গোত্রের সঙ্গে এ পদের সম্পর্ক কি? এবার ইমাম বললেন, আমি এ পদের যোগ্য নই। এর প্রমাণ হল, আমার এ কথা হয় সত্য, নয় মিথ্যা হবে। সত্য হলে তো আমি এ পদের উপযুক্ত নই। আর যদি মিথ্যা হয়, তাহলে একজন মিথ্যাবাদীকে এরুপ দায়িত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা ঠিক নয়। একথা বলে আবু হানিফা (রঃ) রেহাই পেলেন।
অতঃপর শা’বী এগিয়ে খলীফার হাত ধরে বললেন, জনাব, আপনি কুশলে আছেন তো! আপনার পরিবার-পরিজন কেমন আছেন, খালীফা তাঁর কথা বার্তার ধরন দেখে বুঝলেন, নিশ্চয় ভদ্রলোকের মস্তিস্ক বিকৃত ঘটেছে। এবার শোরায়হের পালা। তিনি বললেন, আমি একজন পাগল এবং আমার মস্তিস্ক অত্যন্ত দুর্বল। আমার পক্ষে দায়িত্বপূর্ণ কাজ করা সম্ভব নয়। তাঁর কথা শুনে খলীফা বললেন, আপনি চিকিৎসা করেন।
রোগ সেরে যাবে। শেষ পর্যন্ত শোরায়হকেই কাজীর পদে বহাল করা হল। এরপর হতে আবু হানিফা (রঃ) শরীহর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। এমনকি তাঁর সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করলেন। কাজীর পদ গ্রহন না করা কারণ হল, তখনকার আলেমগণ প্রায় সকলেই স্বাধীনচেতা ছিলেন। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মন্তব্য জানা ছিল না বলে তাঁরা এ ব্যাপারে খুবই সন্ত্রস্ত ছিলেন।
ইমাম আজমের বৈঠক শুরু হয়েছে। পাশে কয়েকটি ছেলে বল খেলছিল। হঠাৎ বলটি একবার এসে পড়ল আসরের মাঝখানে। আর কোন বালকই সেটা নিতে সাহস করল না। কিছুক্ষণ পরে একটি ছেলে সভাস্থ কাউকে সমীহ না করে, খুব অভদ্রভাবে বলটি আসর থেকে তুলে নিয়েগেল। তাঁর হাবভাব দেখে ইমাম বললেন, এ নিশ্চয় কোন জারজ সন্তান। এতটুকু লজ্জাবোধ নেই এরপর জানা গেল, তাঁর কথাই সত্যি হল। প্রকৃত ছেলেটি এক অবৈধ সন্তান। তাঁর ধর্মনিষ্ঠা কিংবদন্তিতুল্য। একবার কোন এক লোক তাঁর থেকে টাকা ধার নেয়। লোকটির বাড়ি যে পল্লিতে সেখানে ইমাম আজমের এক শিষ্য মারা যায়।
তিনি সেখানে গেলেন তাঁর জানাযা আদায় করতে। তখন দুপুর। প্রচণ্ড গরম আর রোদও তীব্র। সেখানে ঐ কর্জ গ্রহণকারীর দালানের ছায়া মাথা বাঁচানোর আর কোন উপায় ছিল না। কিন্তু সকলের অনুরোধ সত্বেও ইমাম আবু হানিফা (রঃ) ছায়ায় গিয়ে দাঁড়ালেন না। বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কাউকে কিছু ধার দিয়ে তাঁর থেকে কোন উপকার গ্রহণ করবে না। অতএব, তাঁর দালানের ছায়া ভোগ করা ঠিক হবে না। কেননা, হা হবে সুদ গ্রহণের মতো।
দাউদ তায়ী (রঃ) বলেন, দীর্ঘ বিষ বছর ধরে তিনি তাঁর সেবায় রত থেকেও তাঁকে প্রকাশ্যে বা গোপনে খালি মাথায় কখনও বসে থাকতে দেখেননি অথবা অবসন্ন অবস্থায় কোনদিন পা ছড়িয়ে বসেননি। যেখানে লোকজন নেই, সেখানে একটু পা ছড়িয়ে বসলে দোষ কী? তাঁর এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, সেখানেও আল্লাহর সঙ্গে শিষ্ঠাচার রক্ষা করা চাই। প্রতি রাতে তিনি তিন’শ রাকাআত নফল নামাজ পড়েন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া