হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ২

হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ঝড় উঠেছিল মনের আকাশে। এখন তা আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে প্রবল ঝটিকায় পরিণত হল। সিংহাসন থেকে বাদশাহ নেমে এলেন। আর ছুটে গেলেন অচেনা আগুন্তকের পেছনে পেছনে। গভীর অতৃপ্তি আর উৎকণ্ঠা-উদ্বেগ নিয়ে শাহেনশাহ ফিরে এলেন। আর এ অবস্থা তাঁর সর্বস্ব দখল করল। রুটিন মাফিক দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করেন ঠিকই, কিন্তু মন তাতে থাকে না। অশান্তি আর অস্থিরতা তাঁকে অবিরাম কুরে কুরে খায়।

এ মনোবিকলনের হাত থেকে অব্যহতি পাওয়ার জন্য তিনি মৃগয়ায় গেলেন। বিজন বাসাতে যদি যন্ত্রণা ভেসে যায়। পাখীর ডানার ভর করে যদি উড়ে যায় মনের অশান্তি।

শিকারে এসে হঠাৎ তিনি দল ছুট হলেন। এখন তিনি সম্পুর্ণ একা নিবিড় নির্জনে নিঃসঙ্গ। হঠাৎ শব্দ এল কানে ইব্রাহীম! এখনও সাবধান হও। মৃত্যু আসার আগেই জেগে ওঠ।

একবার নয় এ শব্দ বারবার উচ্ছারিত হল। হঠাৎ চোখে পড়ল এক হরিণ। তাঁকে তাক করে তীর যে মুহূর্তে যাবেন তখন হরিণ বলে উঠল, ইব্রাহীম, তুমি আমাকে শিকার করতে পারবে না। বরং তোমাকে শিকার করার জন্যই আমাকে পাঠানো হয়েছে। তুমি ভ্রান্ত। এসব কাজের জন্যই কি দুনিয়ায় এসেছ? বাদশাহ হতবাক। শিকার করা হল না। তিনি ফিরলেন। কিন্তু কি আশ্চর্য! যে ঘোড়ার ওপর তিনি বসে রয়েছেন, তার জিন থেকেও হরিণের কথার প্রতিনিধি উত্থিত হচ্ছে। সেই সতর্কতা সূচক-সংকেত বিদ্যুত তরঙ্গের মত তাঁর স্নায়ুকোষে ছড়িয়ে গেল। নিজেকে আর সংযত রাখতে পারলেন না। দু’চোখ বেয়ে নেমে এল অশ্রুর উষ্ণ-প্রবাহ। সিক্ত হল বসন-ভূষণ, সিক্ত হল তাঁর প্রিয় অশ্ব।

একটি মুহূর্ত এসে তাঁর এতদিনের লালিত জীবনকে আমূল বদলে দিল। স্থির করলেন, আর লোকালয়ে ফিরলেন না। আর বাদশাহী নয়, তখত নয়। এবার শুরু হোক তাঁর ধ্যান-মৌন জীবন।

কিছুদূর গিয়ে তিনি চটের বস্ত্র পরিহিত এক রাখালের দেখা পেলেন। তার সঙ্গে বদলে নিলেন পরিচ্ছেদ-পোশাক। সোনার অঙ্গ থেকে খসে গেল রাজভূষণ। বলখের বিখ্যাত বাদশাহ মুহূর্তের মধ্যে হয়ে গেলেন এক দীনাতিদিন ফকীর। শুরু হল তার অরণ্য জীবন। শুরু হল ধ্যান। এখন থেকে তাওবা আর ক্রন্দনই হল তাঁর একমাত্র অবলম্বন।

কে এই মহাপরাক্রমশালী বাদশাহ, যিনি মহাসাধকে রূপান্তরিত হলেন। বলখের সিংহাসন ছেড়ে আসন নিলেন মানুষের বুকের তলায়? তিনিই হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ)।

নিবিড় নির্জনে পরিবর্তিত মানুষটি। অতঃপর ঘুরতে ঘুরতে চলে এলেন এক পুলের কাছে। দেখলেন একটা অন্ধ লোক পুল পার হচ্ছে। টলমল করছিল সে। হয়তো পড়েই যেত। কিন্তু ইব্রাহীম (রঃ) বলে উঠলেন, ইয়া আল্লাহ! একে রক্ষা করুন। কি আশ্চর্য, বলার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল, লোকটি শূন্যে বিচরণ করছে। আরও আলোড়িত হল তাঁর রিদয়-মন।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।