হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ১৫
হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ১৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সঙ্গে সঙ্গে সৈনিক হযরতের পায়ের তলায় পড়ে ক্ষমা চায়। ইব্রাহীম (রঃ) বলেন, তোমার অপ্রস্তুত হওয়ার কারণ নেই। আমি তোমার প্রতি রুষ্ট হয়নি। বরং তুমি আমার প্রতি যে ব্যবহার করেছ, তাঁর জন্য দোয়া করছি। কেননা, তোমার এ আচরণ আমার; জান্নাতবাসের কারণ হয়েছে। অতএব, দোয়া করি, আল্লাহ তোমাকেও জান্নাত নসীব করুন।
হযরতের কথায় আশ্বস্ত হয়ে সৈনিক বলল, হুজুর! আপনার নাম ঠিকানা জানতে চাইলে আপনি অমন উপহাস করলেন কেন? হযরত বললেন, আমি মোটেই উপহাস করিনি। বরং সত্য কথাই বলেছি। মানুষ মাত্রই আল্লাহর দাস। আর কবরস্থানই তার প্রকৃত বাসস্থান। কেননা, মানুষ দুনিয়াতে থাকে মাত্র কয়েকটি দিন। কিন্তু কবরে বাস করে রোজ কিয়ামত পর্যন্ত।
পথে একদিন এক মাতালের সঙ্গে দেখা। তার মুখভর্তি ধুলোমাটি, ময়লা। বড় বিশ্রী। তিনি তার অবস্থা দেখে পানি এনে মুখ ধুয়ে দিলেন। বললেন, যে মুখ দিয়ে আল্লাহ পাকের নামোচ্চারণ হয়, তা অমন নোংরা করে রেখেছ কেন? মাতালের কোন জ্ঞান ছিল না। যখন জ্ঞান ফিরল, তখন ইব্রাহীম (রঃ) চলে গেছেন। কথা শুনে মাতাল তওবা করল। প্রতিজ্ঞা করল, জীবনে আর মদ ছোঁবে না। ঐ রাতেই হযরত স্বপ্ন দেখলেন। আল্লাহ বলছেন, তুমি আমার নামের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য মাতালের মুখ ধুয়ে দিয়েছে। এর বিনিময়ে আমি তোমার অন্তর পরিষ্কার করে দিলাম।
পবিত্র হৃদয়ের ছোঁয়ায় সবকিছু পবিত্র হয়ে যায়। সামান্য একটি গাছও। বায়তুল মুকাদ্দাস সফরে গাছের তলায় নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে তাঁরা রওনা দিচ্ছেন, তখন ডালিম গাছের আবেদন শোনা গেল। আপনারা মেহেরবানী করে আমার দুটো ফল খেয়ে আমাকে ধন্য করুন। গাছের আবেদনে সাড়া দিয়ে দু’জনেই ফল খেলেন। ছোট গাছটি এই কয়দিনে অনেক বড় হয়ে গেছে। আর তার ফলও বেশ সুস্বাদু হয়েছে। কথিত আছে, গাছটি নাকি বছরে দুবার ফল দিত।
এক পাহাড়ে বসে কথা হল হযরত ইব্রাহীম (রঃ) আর এক দরবেশ। দরবেশের প্রশ্নঃ পূর্ণ আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি হওয়ার পরিচয় কি? হযরত উত্তর দিলেন, তিনি যদি পাহাড়কে চলতে বলেন, পাহাড় চলতে শুরু করে। আর আশ্চর্যের কথা, তাঁরা যে পাহাড়ের ওপর বসেছিলেন, তা চলতে শুরু করল। ইব্রাহীম (রঃ) বললেন, হে পাহাড়! আমি তো তোমাকে চলতে বলিনি। তুমি চলতে লাগলে কেন? অমনি পাহাড় পূর্বেকার মতো স্থির হয়ে গেল।
একবার তিনি চলেছেন নৌকাযোগে। হঠাৎ নদীতে উঠল ঝড়। নৌকা দুলতে লাগল। এই বুঝি ডুবে যায়। যাত্রীরা প্রাণভয়ে ভীতসন্তস্ত্র হয়ে উঠল। তখন শোনা গেল অদৃশ্য লোকের শব্দ। তোমরা ভীত হয়ো না। তোমাদের নৌকায় রয়েছেন হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ)।
আর একদিন অনুরূপ অবস্থা। সেদিন অবশ্য তিনি ছাড়াও নৌকায় ছিল পবিত্র কোরআন শরীফ। তুফানে তরী তখন টালমাটাল, তখন হযরত ইব্রাহীম (রঃ)-এর আকুল প্রার্থনা শোনা গেল। প্রভু গো! আমাদের ডুবিয়ে মারবেন? সঙ্গে সঙ্গে ঝড় তুফান থেমে যায়।
আর একদিন হযরত যাবেন নদীর ওপারে। খেয়া নৌকায় পার হতে হবে। কিন্তু পারের কড়ি নেই। মাঝি তা দাবী করবেই। তিনি আর কি করেন। নদী তীরে দু’রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করলেন, আল্লাহ গো! আমি নদী পার হতে চাই। অথচ আমার কাছে একটিও পয়সা নেই। কী হবে প্রভু? প্রার্থনা শেষ হলে দেখা গেল, নদীতটের বালিকণা স্বর্ণ রেণুতে পরিণত হয়েছে। আর তিনি তাই এক মুঠো তুলে খেয়া মাঝিকে দিলেন। পরম খুশীকে ডগমগ হয়ে মাঝি তাঁকে পার করে দিল।
আর একদিন টাইগ্রীস নদীর তীরে বসে হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) তাঁর পরনের ছেঁড়া পোশাক সেলাই করছেন আপন মনে। তা দেখে এক লোক তাঁকে জিজ্ঞেস করে, বলখের সিংহাসন ত্যাগ করে আপনার কী লাভ হল বলুন তো? ইব্রাহীম (রঃ) তার কথার উত্তর না দিয়ে হাতের সূচ ছুঁড়ে ফেললেন নদীতে। তারপর তাকে বললেন, তুমি ঐ সূচটি তুলে নিতে পার? লোকটি বলে, তা কি করে সম্ভব? তখন তিনি নদিতে কি যেন ইঙ্গিত করলেন। আর সঙ্গে সঙ্গে নদীতে মাছ ভেসে উঠল পানির ওপর। প্রত্যেকের মুখেই এক একটি সোনার সূচ। তিনি বললেন, আমি তো সোনার সূচ চাইনি। নিজের সূচটিই চেয়েছি মাত্র। বলামাত্র একটি মাছ তাঁর সূচটি তাঁর সামনে ছুঁড়ে দিল।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া