হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর স্ত্রী অপহরণ-১ম পর্ব
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নিজ স্ত্রী ও দু’জন প্রহরী নিয়ে সিরিয়া অভিমুখে যাত্রা করলেন। একদিন একরাত পরে যখন তারা গিয়ে মিশরের সীমানায় পৌঁছল। তখন তাঁদের সাথে কতিপয় লোকের সাক্ষাত হল। তারা নবীর পরিচয় ও গন্তব্যস্থল সম্বন্ধে অবগত হয়ে বলল মিশরের রাজা চরিত্রহীন কামুক এবং জালেম। সে সকল রাস্তায় স্থানে স্থনে লোক মোতায়েন করে রেখেছে। কোন মানুষ ধনসম্পদ নিয়ে সে পথে যাতায়াত করলে জোর করে তা ছিনিয়ে নেয়া হয়। এবং সুন্দরী রমণী দেখলে তো আর কথাই নেই। তাঁকে রাজার উপভোগের জন্য অবশ্যই বালাখানায় নিয়ে যেতে হবে। অতএব তোমরা তোমাদের গতিপথ পরিবর্তন কর। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) লোকগুলোর কথা শুনে খুব চিন্তিত হলেন। তবুও তাকে আল্লাহ তা’য়ালার নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সিরিয়া যেতেই হবে। সিরিয়া যাবার আর কোন পথ ছিল না। তাই তিনি নিজ স্ত্রী সায়েরাকে একটি বাক্স বন্দী করে পথ চলতে আরম্ভ করলেন। কিছুদুর অগ্রসর হতেই একদল প্রহরী এসে
তাঁদের গতি রোধ করল এবং বলল তোমাদের সাথে যা কিছু আছে আমদের হাতে দিয়ে দাও এবং এই বাক্সে কি আছে তা আমাদের দেখতে হবে । এই বলে তারা বাক্স খুলতে শুরু করল। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, টাকা পয়সা যা আছে তা সমুদয় তোমরা নিয়ে যাও। কিন্তু বাক্সটি খুলে ফেলল এবং দেখল বাক্সের মধ্যে এক অপরূপ সুন্দরী যুবতি বসা। বাস্তবিক পক্ষে সায়েরার রূপ ছিল বর্ণনাতীত। তিনি নাকি তখনকার দিনে অদ্বিতীয় সুন্দরী বলে খ্যাত ছিলেন। তাই কে আগে রমনীকে নিয়ে রাজ দরবারে পৌছবে, তা নিয়ে ভীষণ প্রতিযোগিতা শুরু হল। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তাঁর প্রহরীদ্বয় পিছনে পিছনে রওয়ানা করলেন। ক্ষণিকের মধ্যে তারা রাজ দরবারে পৌঁছে রমণীকে রাজার সম্মখে হাজির করল। রাজা রূপসী সায়েরাকে দেখে অতান্ত খুশী হল এবং প্রহরীদেরকে বড় রকমের পুরুস্কার দিল।অতঃপর রাজা ইব্রাহীম (আঃ) জিজ্ঞেস করল এ রমণী তোমার কি হয়? ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, স্ত্রী হয়। রাজা বলল, তোমার স্ত্রীকে আমার হাওলা কর ? হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বললেন তা সম্ভব নয়। তখন রাজা বলল, তোমার আর মতামতের প্রয়োজন নেই। সে আমার শয্যা সঙ্গিনী হয়ে থাকবে। রাজা তখন তাঁর দাস দাসীকে হুকুম দিল, তারা সায়েরাকে ভাল ভাবে গোসল করিয়ে আতর-গোলাপ ও প্রসাধনী মাখিয়ে রাজকীয় পোশাকে সজ্জিত করে যেন তাঁর কাছে নিয়ে আসে। দাস-দাসীরা রাজার হুকুম অনুসারে সায়েরাকে অন্দর মহলে নিয়ে গেল।
এ সময় হযরত ইব্রাহীম (আঃ) রাজ দরবারের বৈঠকখানায় বসেছিলেন। আল্লাহ্ তা’য়ালা তাঁর অপূর্ব করুণায় হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর সম্মুখে সমস্ত পর্দা উন্মোচিত করে দিলেন। যাতে তিনি সায়েরা বিবিকে পরিষ্কারভাবে দেখতে পেলেন। এমন কি দাস-দাসীরা ও অন্যান্য লোকেরা তাঁর সাথে কি ব্যবহার করছে তাও তিনি প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হলেন।
সূত্রঃ কুর আনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর স্ত্রী অপহরণ -২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন