হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনা-৩য় পর্ব
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনা- দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পরিষদের সদস্যবৃন্দের কেউ বলল, এ ছেলেটিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া উচিত, কেউ বলল, জীবন্ত অবস্থায় তাঁকে ঝুলিয়ে মারা উচিত, আবার কেউ বলল তাঁকে এক ভীষণ অনলকুন্ডে করে জ্বালিয়ে মারা উচিত। যাতে করে বিরোধীচক্র চিরদিনের মত শিক্ষা লাভ ক্রএ এবং পৃথিবীর বুকে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়ে থাকে।
তৃতীয় ব্যক্তির কথা নমরুদের মনঃপুত হল। তখন সে এটাকে কার্যকর করার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিল। সেনাবাহিনী এক বিশাল এলাকা নিয়ে দেয়াল দিতে আরম্ভ করে। যার দৈর্ঘ প্রস্থ ছিল চব্বিশ বর্গমাইল এবং দেয়ালের উচ্চতা ছিল একশ গজ। তারা দিবারাত্র কাজ চালিয়ে যেতে লাগল। মাসাধিক কালের মধ্যে অগ্নিকুণ্ডের নির্মাণ কাজ সমাধা হল। অতঃপর নমরুদ দেশের সকল মানুষেকে লাকড়ি সংগ্রহের জন্য আদেশ দিল। এতে প্রতিদিন হাজার হাজার মন লাকড়ি এসে সেখানে পৌঁছুতে আরম্ভ করল। দেয়ালের মাঝে চতুর্দিক থেকে কাঠ উচু করে রাখা হল। শুধু মাঝখানে অল্প জায়গা খালি রাখা হল। একত্রে সমস্ত জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল। আগুনে বাতাস দিয়ে এমন ভয়াবহ করা হল যাতে কন মানুষ দেয়ালের পাঁচশত গজের মধ্যে যেতে না পারে। আগুনের লেলিহান শিখা এতটা উপরে উঠল যাতে ছয় মেইল উপরের উড়ন্ত পাখি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যেত।
এ জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে নিক্ষেপ করার উপায় সম্বন্ধে নানাজনে নানা মত দিল। সর্বশেষে সিন্ধান্ত করা হল, একটি উঁচু চড়কগাছের উপর হাত পা বাঁধা অবস্থায় হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে উঠিয়ে সজোরে নিক্ষেপ করা হবে। সে মর্মে অল্প সময়ের মধ্যে চড়কগাছ বানানো হল। তাতে চারশ রশি দেয়া হল যেন সেটা সহজে ঘুরানো যায়।
অতঃপর হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে জেলখানা থেকে বের করে নমরুদের জামা-কাপড় তাঁকে পরিধান করান হল। যদি একান্ত কোন কারণে সে আগুন না জ্বলে তাহলে যেন নমরুদের জামা কাপড়ের কেরামতি জাহির হয়। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর হাত পা বাঁধা হল, চড়কগাছে উঠান হল। অতঃপর যখন চড়কগাছ ঘোরানোর চেষ্টা করা হল তখন চড়কগাছ ঘুরল না। হাজার হাজার লোক একত্রিত হয়ে রশি ধরে টানল কিন্তু কোনক্রমে চড়কগাছ ঘুরল না। নমরুদ ও পরিষদবর্গ খুবই দুশ্চিনাগ্রস্থ হল। শয়তান এ সময় একজন বৃদ্ধ সাধকের আকৃতিতে সেখানে উপস্থিত হয়ে বলল, তোমরা এভাবে চড়ক ঘুরাতে পারবে না। এখানে কতক লোক উলঙ্গ হয়ে যেনার কাজে লিপ্ত হও তবে দেখবে চড়ক ঘুরছে। বৃদ্ধের কথা অনুসারে নমরুদ চল্লিশজন যুবক-যুবতীকে জেনায় প্রবৃও হওয়ার জন্য হুকুম দিল। অমনি কাজ আরম্ভ হল। আল্লাহর ফেরেস্তা ঘৃণায় সেখান থেকে চলে গেলেন। তখন চড়ক ঘুরানোর চেষ্টা করা হলে তা সহজে ঘুরে গেল। সর্বত্র হৈ চৈ পড়ে গেল। বহু লোক এসে চড়কের রশি ধরল এবং সজোরে টান দিল। অমনি চড়ক ঘুরতে আরম্ভ করল। চড়ক ঘূর্ণায়মান অবস্থায় যখন তার দরজা খুলে দেয়া হল তখন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ছিটকে গিয়ে অগ্নিকুণ্ডের মাঝে পতিত হলেন।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনা- চতুর্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন