হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর জন্ম-১ম পর্ব
নমরুদ সতর্ক প্রহরার মাধ্যমে দেশের অগনিত শিশু সন্তানকে হত্যা করে চলল। এভাবে দীর্ঘ নয় মাস অতিবাহিত হল। ওদিকে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর মাতার প্রসব বেদনা উঠার উপক্রম হল। তখন তিনি নমরুদের সৈন্যদের ভয়ে একটি মাঠ অতিক্রম করে এক পার্বত্য এলাকায় এক সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকে পড়লেন। সেখানে পৌঁছে তার প্রসব বেদনা আরম্ভ হয়। আল্লাহ তা’য়ালার খাস মদদে তিনি সেখানে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। সন্তানটির মুখমণ্ডল ছিল চন্দ্রের চেয়ে অধিক উজ্জ্বল। অন্ধকারচ্ছন্ন গুহা আলোকে উদভাসিত হয়ে গেল। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর মাতা সন্তানের মুখপানে চেয়ে কেঁদে উঠলেন। তিনি মনে মনে ভাবলেন, এই উজ্জ্বলতার রোশনি দেখে যদি কোন মানুষ এখানে এসে বাচ্চাকে দেখতে পায় তবে নমরুদের জল্লাদদেরকে ডেকে আনবে এবং ওকে হত্যা করবে। তিনি তখন কি করবেন ভেবে অস্থির হলেন। তিনি তাড়াতাড়ি এক বড় কাপড় দিয়ে বাচ্চাকে জড়িয়ে দিলেন যেন তার শরীরের উজ্জ্বলতা বাইরে না ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর তিনি বাচ্চাকে দুধ পান করালেন এবং দীর্ঘসময় তার মুখপানে তাকিয়ে থাকলেন। এভাবে কয়েক ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পরে তিনি বাচ্চাটিকে আল্লাহ তা’য়ালার হাওলা করে নিজে বাসার দিকে রওনা করলেন। যেহেতু দীর্ঘসময় বাসায় ও কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা তাঁর ও জন্য আর এক বিপদ। তাই তাঁকে বাধ্য হয়ে রওনা করতে হল।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর মাতা দু’চোখের পানি ফেলে বিদায় গ্রহণের পরে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এসে উক্ত গুহায় পৌঁছেন। তিনি প্রথমে একখানি বড় পাথর দ্বারা গুহার মুখ বন্ধ করে দেন। অতঃপর হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর দুটি আঙ্গুলি তাঁর মুখে পুরে দেন। উক্ত আঙ্গুলিদ্বয়ের একটি থেকে মধু ও অপরটি থেকে দুধ নিঃসৃত হতে থাকে। মল মূত্রের কোন সমস্যা ছিল না। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) সপ্তাহে মাত্র একদিন, যে দিন তাঁর মাতা তাঁকে দেখতে আসনে সে নির্দিষ্ট দিনে প্রস্রাব ও পায়খানা করতেন। যা তাঁর মাতা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে দিতেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর মাতা যেদিন সেখানে আসতেন সেদিন গুহার মুখের পাথরখানি সরে যেত। তখন তিনি ভিতরে প্রবেশ করে সন্তানকে কোলে তুলে নিতেন এবং আদর করতেন ও দুধ পান করাতেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর প্রতি ঐশী মদদ ও রহমতের প্রাচুর্য দেখে অবাক হতেন এবং মনে মনে ভাবতেন একদিন হয়ত এ ছেলে পৃথিবীর অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
এইভাবে একাধারে সাত বছর কেটে গেল। এর মধ্যে নমরুদ জ্যোতিষীদেরকে ডেকে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর জন্মের কথা জানল। পরে পুনঃ পুনঃ সে জিজ্ঞেস করত, নক্ষত্রের প্রভাবে যে সন্তান ভুমিষ্ঠ হয়েছে সে কোথায় আছে? তার পরিচয় কি ইত্যাদি? জ্যোতিষীগণ এ কথার কোন সদুত্তর দিতে সক্ষম হয় নি। তারা বলল, আমাদের গণনায় সন্তানটির জন্মের কথা ধরা পড়ে কিন্তু এর পরের আর কিছু ধরা পড়ে না। কোথায় সে আছে, তার পরিচয় কি তা আমরা আদৌ বলতে পারব না। নমরুদ জ্যোতিষীদের কথায় অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হয় এবং কয়েকজনকে বন্দি করে কয়েদখানায়া প্রেরণ করে। অবশ্য এক দিন পরেই তাদেরকে মুক্তি দেয়।