হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কাবাঘর নির্মাণ ও কতিপয় মো’যেযা –তৃতীয় পর্ব
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কাবাঘর নির্মাণ ও কতিপয় মো’যেযা – দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) – এর সকল দোয়া কবুল করলেন। মক্কার নিকটবর্তী তায়েফ নামক স্থান থেকে জিব্রাইল (আঃ) মারফত দশ ক্রোড় জমিনের মাটি উঠিয়ে নীল নদের তীরবর্তী দশ ক্রোড় উর্বর জমিনের মাটিকে সেখানে রেখে দেন। যাতে করে তায়েফ শস্য-শ্যামল হয়ে ওঠে। সেখানে সকল প্রকার ফল ফলাদী শাক-সবজি স্বাভাবিক ভাবে উৎপন্ন হয়ে থাকে। মক্কার কোন কোনা এলাকা বর্তমানে শস্য-শ্যামল হয়ে উঠেছে। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে মক্কা তথা সৌদি আরব পৃথিবীর অন্যতম তেল সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পরিচিত। এছাড়া আরবে স্বর্ণের খনি, রৌপ্যের খনি ও হীরকের খনি পৃথিবীর সকল রাজ্যের চেয়ে বেশি আছে বলে তথ্যবিদগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এ সবই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) – এর দোয়ার ফল। তাতে আদৌ সন্দেহ নেই।
একদিন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) মৃত্যুকে কিভাবে জিন্দা করা যায় তা প্রকাশ্যে দেখার জন্য আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে আরজ করলেন। আল্লাহ তা’য়ালা তখন জিজ্ঞাস করলেন, আমি মৃত্যুকে জীবিত করতে পারি তা তোমার বিশ্বাস হয় না? হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর উত্তরে বললেন, আমি অবশ্যই বিশ্বাস করি তবে আমার অন্তরে প্রকাশ্যে দেখার ইচ্ছা জেগেছে। তখন আল্লাহ তা’য়ালা তাকে বললেন, তুমি চার ধরনের চারটি পাখি জবেহ করে তাঁর গোস্তগুলো পিসে মিলিয়ে ফেল। তারপর সেগুলোকে কয়েকটি পিণ্ড করে পাহাড়ের কয়েক জাইগায় রেখে দাও। তারপরে এক একটি পাখির নাম ধরে ডাক দাও। তারা অবশ্যই জীবিত হয়ে তোমার কাছে ফিরে আসবে। জেনে রাখ আল্লাহ তা’য়ালা পরম কৌশলি।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অনুসারে একটি মুরগি, একটি ময়ূর, একটি কাক ও একটি শকুন জবেহ করে তাদের মাংস গুলো হাড়সহ পিষে একত্রিত করলেন এবং ছোট ছোট পিণ্ড করে বিভিন্ন পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে রেখে দিলেন। অতপর এক একটি পাখির নাম ধরে দাক দিলেন। অমনি যে পাখির যে যে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অংশ যেখানে ছিল তা ছুটে এসে একত্রিত হয়ে জীবিত হয়ে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) – এর নিকট চলে আসল। এক এক করে চারটি পাখির নাম ধরে তিনি ডাকলেন। চারটি পাখি জীবিত হয়ে যখন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) – এর নিকট পৌছল, তখন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহর কুদরত প্রকাশ্যে অবলোকন করে সেজদায় পতিত হলেন।
একদা আল্লাহ তা’য়ালা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) – কে হুকুম দিলেন, হে ইব্রাহীম (আঃ)! আপনি আল্লাহ তা’য়ালার নির্দেশক্রমে যেভাবে নিজ সন্তানকে আল্লাহর রাস্তাই কুরবানী করেছেন তেমনি আল্লাহর নির্দেশে আপনার সকল ধন-সম্পদ গরীবের মধ্যে বিতরণ করে দিন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তখন থেকে দুদিনের মধ্যে নিজের সহায় সম্পদ যা ছিল তা সবই গরীবের মধ্যে বিলিয়ে দেন। অতঃপর তিনি অধিকাংশ সময় রোজা রেখে কাটাতেন এবং দু একজন মেহমান নিয়ে এফতারি করতেন। এক সময় একাধারে সাত দিনের মধ্যে কোন মেহমান বা ফকির পেলেন না,যাকে নিয়ে তিনি এফতারি করবেন।
তাই তিনি কোন আহার ও এফতারি ছাড়াই একাধারে সাতদিন রোজা রাখলেন। সাতদিন পরে তাঁর ঘরে কয়েকজন মেহমান এসে হাজির হলেন। তখন তিনি তাদের জন্য কি খাবার ব্যবস্থা করবেন তা নিয়ে ইতস্তত করতে লাগলেন। পরিশেষে বিবি সায়েরাকে ডেকে বললেন মেহমান এসেছে এখন এদের কি ব্যবস্থা করা যাই। সায়েরা বললেন, আমার একটি শখের গো-সাবক আছে। যাকে আমি নিজ সন্তানের ন্যায় স্বর্ণের চেইন পরিয়ে নিয়মিত পরিপাটি করে প্রতিপালন করেছি।
যেহেতু আমার কোন সন্তান নেই তাই গো-সাবককে আদর করে আমি তৃপ্তি লাভ করে থাকি। এখন মেহমানদের জন্য যখন কোন ব্যবস্থা নেই তখন ওটাকে জবেহ করে মেহমানদের আহারের ব্যাবস্থা করি। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) সায়েরার কথায় খুশি হলেন এবং তাড়াতাড়ি করে সেটাকে জবেহ করলেন। যখন এফতারীর সময় হল তখন ভুনা গোস্ত ও রুটি এনে মেহমানদের সম্মুখে রাখলেন।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কাবাঘর নির্মাণ ও কতিপয় মো’যেযা – চতুর্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন