হযরত ইদ্রীস (আঃ) এর নামকরণ ও জন্ম

হযরত ইদ্রীস(আঃ) এর আসল নাম ছিল আখনুক। তিনি পড়ালেখা খুব বেশী করতেন এবং দেশের জনসাধারণকে শিক্ষা দিক্ষায় উপযুক্তরূপে গড়ে তুলেছিলেন। শিক্ষা প্রদান করাকে দারস বা প্রশিক্ষণ বলা হয়। সে দারস শব্দ হতেই তাকে ইদ্রীস নামে অভিহিত করা হয়।

হযরত ইদ্রীস (আঃ) ইরাকের বাবেল (ব্যবিলন) শহরে জন্মগ্রহন করেন। তাই ব্যবিলনীয় সভ্যতাই হচ্ছে পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা। বাবেল অর্থ নগর। বাবেল দাজলা ও ফোরাত (তাইগ্রিস ও ইউফ্রেতিস) নদী দ্বয়ের পানিতে সবুজ ও সতেজ ছিল। এ জন্য এর নাম দেয়া হয়েছিল বাবেল। এ উপত্যকার ভূমিকে “উম্মুল বিলাদ” বা সভ্যতার জন্মভূমি বলা হয়। বর্তমান জগত এবং আধুনিক সভ্যতা প্রাচীন কালের ব্যবিলনীয় সভ্যতার কাছে ঋণী।

হযরত আদম (আঃ) এর পর হযরত ইদ্রীস (আঃ)ই সর্ব প্রথম নবী ও রাসূল। যাঁর প্রতি আল্লাহ তায়ালা ত্রিশটি কিতাব নাযিল করেন । হযরত ইদ্রীস (আঃ) হযরত আদম (আঃ) এর প্রপৌত্র ছিলেন। অথ্যাৎ হযরত আদম (আঃ) এর পুত্র হযরত শীস (আঃ), তাঁর পুত্র আনুশ, তাঁর পুত্র ক্বীনান, তাঁর পুত্র মাহলাইল, তাঁর পুত্র ইয়ারুদ এবং তাঁর পুত্র হযরত ইদ্রীস (আঃ)।

হযরত নুহ (আঃ) এর তুফানের পূর্বে দুনিয়াতে যে পরিমান বিদ্যা প্রসার লাভ করেছিল তৎসমুদয়েরই আদি শিক্ষক হযরত ইদ্রীস (আঃ)। দর্শণ শাস্ত্রের যে সমস্ত জ্ঞান গভীরভাবে আলোচনা এবং নক্ষত্র সমূহের গতিবিধির বিবরণ দেখা যায়, তা সর্বপ্রথম হযরত ইদ্রীস (আঃ) এরই মোবারক জবান হতে বের হয়েছে। আল্লাহ পাকের এবাদতের জন্য এবাদতখানা নির্মাণ, চিকিৎসাশাস্ত্রের আবিষ্কার, জমিন ও আসমানের যাবতীয় বস্তু সম্বন্ধে মতামত প্রকাশও তাঁরই সর্ব প্রাথমিক কার্যাবলীর অন্তর্গত। তিনি সর্ব প্রথম বিজ্ঞান ও জ্যোতিষ শাস্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন। আল্লাহ পাক তাঁকে আসমান সমূহ এবং উহাদের পারস্পরিক আকর্ষনের গুরুত্ব ও রহস্য শিক্ষা দিয়েছিলেন।

হযরত ইদ্রীস (আঃ) সর্বপ্রথম কলমের সাহায্যে লেখা ও বস্ত্র সেলাই আবিষ্কার করেন। তাঁর পূর্বে চামড়া ব্যবহার হত। অংক শাস্ত্রের আবিষ্কার এবং ওজন পরিমাপের পদ্ধতি সর্ব প্রথম তিনিই আবিষ্কার করেন। হযরত ইদ্রীস (আঃ) সব সময় রোজা রাখতেন, কোনদিনই তাঁর রোজা বাদ যেত না। প্রতিদিন ইফতারের সময় তাঁর জন্য বেহেস্তী খাবার আসত। যতটুকু প্রয়োজন তা হতে তিনি খেতেন। অবশিষ্ট অংশ জান্নাতে ফিরে যেত। তিনি সর্বপ্রথম মহাপ্লাবনের সংবাদ দিয়ে আল্লাহর বান্দাদেরকে ভয় প্রদর্শণ করেছেন। আল্লাহ পাক তাঁকে মহাপ্লাবণের ভয়াবহতা দেখায়েছেন। তা দেখে তিনি সমস্ত শিক্ষা ধ্বংস প্রাপ্তির এবং সমস্ত শিল্প পেশার ধ্বংস হওয়ার শংকিত হয়ে পড়লেন। সুতরাং তিনি মিসরে চৌবাচ্চা এবং চতুর্দিকে বদ্ধ কোটা সমূহ নির্মাণ করে তাতে সমস্ত শিল্প এবং তৎসম্বন্ধীয়ন আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতি সমূহের ছবি বানালেন। আর সমস্ত শিক্ষা ও শাস্ত্রের তথ্যবলী ও বিবরণ অংকিত করলেন। যাতে এ সমস্ত শিল্প ও বিদ্যা ধ্বংসের হাত হতে রক্ষা পেয়ে চির কালের জন্য স্থায়ী থাকে।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী। তৃতীয় খন্ড

হযরত ইদ্রীস (আঃ) এর শারীরিক গঠন পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।