হযরত ইদ্রীস (আঃ) এর নবুয়ত প্রাপ্তি ও হিজরত
হযরত ইদ্রীস (আঃ) এর যখন মানুষের ভালমন্দ বুঝার বয়স হয়েছে তখন তাঁকে নবুয়ত প্রদান করেন। নবুয়ত প্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি খারাপ লোকদেরকে হেদায়েতের পথে আসার জন্য আহ্বান জানালেন। কিন্তু দুষ্ট লোকেরা নবীর কথায় কর্ণপাত করল না। অতি অল্প সংখ্যক লোক তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। হযরত ইদ্রীস (আঃ) এ অবস্থা দেখে শেষ পর্যন্ত বাবেল থেকে হিজরত করার ইচ্ছা করলেন। অনুসারীদের কাছে স্বীয় ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন এবং তাদেরকে তাঁর সাথে হিজরত করার জন্য বললেন। কিন্তু তারা স্বদেশ ভূমি ত্যাগ করে অন্য কোথাও যাওয়ার জন্য সম্মত হল না। তারা বলল, বাবেল শহরের ন্যায় এমন সুন্দর ভূমি কোথায় পাবে? বাবেল শহর দজলা ও ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত ছিল বিধায় সর্বদা ফল মুল, শাক-সব্জী ও শস্যে ভরপুর থাকত। তথায় কোন কিছুর অভাব ছিল না। সেখানের অধিবাসীরা পরম সুখে জীবন যাপন করত। তাই বাবেলের লোকজন বাবেল শহর ত্যাগ করে অন্য স্থানে বসবাসের জন্য কোন অবস্থাতেই রাজি ছিল না।
হযরত ইদ্রীস (আঃ) তাদিগকে অনেক বুঝালেন। তিনি সকলকে বললেন বাবেল শহর ত্যাগ করা তোমাদের জন্য কষ্টকর হবে। কিন্তু আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য যদি তোমরা এ কষ্টটুকু কর তবে জেনে রাখ যে আলাহর রহমত অনেক প্রশস্ত। তিনি তোমাদেরকে এর উত্তম বিনিময় দান করবেন। সুতরাং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখ। আল্লাহর হুকুমে শির অবনত করে আল্লাহর রাস্তায় বের হও। আল্লাহ পাকের হাতে তোমাদের সুখ-শান্তি নিহিত রয়েছে। তিনি তোমাদেরকে বাবেল শহর অপেক্ষা অধিক সুখের স্থান দান করবেন।
এসব শান্তনা মূলক বাণী শুনে অবশেষে তাঁর অনুসারীরা তাঁর সাথে হিজরত করেতে সম্মত হল। হযরত ইদ্রীস (আঃ) ব্যবিলন বাসীদেরকে নিয়ে মিসরে হিজরত করেন। মিসর পৌঁছে নীল নদের পার্শ্বে কোন এক এলাকায় বসবাসের মনস্থ করলেন। নীল নদের পানির প্রভাবে উক্ত এলাকায়ও বিভিন্ন রকমের ফল মুল ও শস্য উতপাদিত হত। মিসরবাসীদের অধিবাসীর জীবন যাত্রাও ছিল পরম সুখময়। হযরত ইদ্রীস (আঃ) এর অনুসারীরা এ হেন চমৎকার স্থান দেখে খুব খুশী হল। হযরত ইদ্রীস (আঃ) তাদের মনের উৎফুল্লতা অনুভব করতে পেরে বললেন, এ স্থানটি তোমাদের স্থানের ন্যায় সবুজ শ্যামল এবং শস্য পরিপূর্ণ একটি উত্তম স্থান। একমাত্র আরবীয়রা ব্যতীত প্রাচীন কালের সমস্ত সম্প্রদায়ের কাছে এ স্থানটি বাবলিউন নামে পরিচিত ছিল। অবশ্য আরবীয়রা এটাকে মিসর বলত। হযরত নূহ আঃ এর যুগে মহা প্লাবনের পর তাঁর পৌত্র মিসর বিন হাম এ এলাকায় বসবাস শুরু করেন। তাই এ এলাকাকে মিসর নামকরন করা হয়। মিসরের অধিবাসীরা তারই বংশধর।
হযরত ইদ্রীস (আঃ) ও তাঁর অনুসারীরা মিসরে বসবাস করার সাথে সাথে আল্লাহ পাকের আহকামের প্রচার এবং সৎ কার্যের আদেশ আর অসৎ কার্য হতে মানুষকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। হযরত ইদ্রীস (আঃ) এর যুগে মানুষ বাহাত্তরটি ভাষায় কথা বলত। আল্লাহ পাকের রহমতে হযরত ইদ্রীস (আঃ) ৭২ টি ভাষায়ই আয়ত্ব করেন এবং যে এলাকার লোক যে ভাষায় কথা বলত তিনি ঐ ভাষায় তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকতেন।